ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীত নামবে এবার ধীর লয়ে, হেমন্তে জলীয় বাষ্পে রকমফের

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 শীত নামবে এবার ধীর লয়ে, হেমন্তে জলীয় বাষ্পে রকমফের

সমুদ্র হক ॥ কদিন আগেই বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে গ্রান্ড ফিনালে (পুনরায় শুরুর আগে শেষ) নিল মৌসুমী বায়ু। উত্তরাঞ্চলের লোকজন শীত দ্রুত এলো বলে কোট চাঁদর, কোট সোয়েটার বের করল। রাতে কেউ কাঁথাও গায়ে চরাল। বিরতিতে গেল বৈদ্যুতিক ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার। গোধূলি বেলায় কুয়াশাপাত। সন্ধ্যার পরই কুয়াশার সঙ্গে শিশিরের মিতালি। হেমন্তেই শীতের অনুভূতি। বেশ ফুরফুরে মন সাধারণের। ব্রিটিশ কবি এডিথ সিটওয়ের কথায়, শীত হলো স্বাচ্ছন্দ্য। উষ্ণতা ও ভাল খাবারের সময়। শীতকাল না থাকলে বসন্ত এত আনন্দদায়ক হতো না। জীবনকে চেনা যেত না নতুন রূপে। প্রকৃতির কবি পি বি শেলির কথায় ‘ইফ উইন্টার কামস ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড (শীত যদি আসে বসন্ত কি খুব দূরে)’। অক্টোবরের শুরুর দিকে মৌসুমী বায়ু বিদায়ের পর এই কথাগুলোই ভেসে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ ফিরে এলো মৌসুমী বায়ু। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। ফের বেড়ে গেল। আবার শুরু হলো গরমের পালা। জলবায়ু পরিবর্তনের যে কত রকম ফের! আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাসও গরমিল হয়ে যাচ্ছে। তবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কোন গরমলি নেই। সঠিক আভাস দেয়া হচ্ছে। বাতাসে তাপ বিকিরণ, শোষণ, জলীয় বাষ্পের প্রত্যাগমনে বাধা, পশ্চিমা বায়ু ঠিকমতো না আসা ইত্যাদি কারণে তাপের অনুভূতিতে ব্যত্যয় ঘটছে। যে জন্য মনে হচ্ছে শীত আসছে পা টিপে। আসলে শীত সময় মতোই আসছে। এই সময়টা হেমন্ত ঋতু। তারপরই শীত। তবে শীতের স্থায়িত্ব কাল নিয়ে কথা আছে। আগে যতটা সময় থাকত এখন আর ততটা সময় থাকছ না। এর বড় কারণ হলো প্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের থাবা। এই থাবা বিশ^জুড়ে পড়েছে। যে কারণে বাংলাদেশে ষড়ঋতু পড়েছে নানা বিভ্রাটের মধ্যে। হিসাব ঠিক থাকছে না। এখন পশ্চিমাবায়ু ধীর লয়ে বাড়ছে। ফলে থেমে থেমে যে গরম অনুভূত হচ্ছে তা আর থাকবে না। নবেম্বরের মধ্য ভাগেই বাতাসে হালকা হিমভাব চলে আসবে। এরপরই তা বাড়তে থাকবে। তারপরই পাবে দ্রুতগতি। চলবে ডিসেম্বর হয়ে জানুয়ারির শেষ অবধি। এরপর বসন্ত বেলার শুরুতে শীত ও পরে চৈত্রের ধূলিমাখা হাওয়া। গাছের পাতা ঝরে পড়া ও শুকনো পাতার ওপর হেঁটে চলার মর্মর ধ্বনি। কিশলয়ও পড়বে প্রকৃতির থাবার মধ্যে। বাতাসে ধূলিকণা জমাট কুয়াশার মতো দৃশ্যমান হতে পারে। ফসলের বহুমুখীকরণে আকাশে ধূলির আস্তরণ জমছে। এই আস্তরণে সূর্যের আলো ছড়াতে বাধা পাচ্ছে। এভাবেই হেমন্তের পথ ধরে আসছে শীত। কেমন হবে আগামীর শীত! গত ক’বছরের বাস্তবতায় দেখা যায়, সেদিনের সেই শীত বুঝি আর থাকছে না। অলেস্টার, উলের গলাবদ্ধ সোয়েটার, হাতমোজা, মাফলার, পশমি মাংকি ক্যাপ এগুলো হয়ে যাচ্ছে পৌরাণিক। এদের আশ্রয় হবে জাদুঘরে। টিকে থাকবে ছেলেদের শাল, স্যুট (কোট প্যান্ট) জ্যাকেট, ক্যাপ। মেয়েদের কার্ডিগান ও শাল। লেপের কদরও খুব একটা থাকবে না। বিছানায় লেপের আসন নেবে উন্নতমানের কম্বল। কয়েকদিন আগে মৌসুমী বায়ুর কারণে জলীয় বাষ্পের প্রাধান্য ছিল বেশি। সূর্যরশ্মি সরাসরি পড়ত। এখন জলীয় বাষ্প কমতে থাকবে। পশ্চিমাবায়ুর দাপট বাড়বে। হেমন্ত ঋতুর অধ্যায় এই পর্যন্তই। তারপর মুখ টিপে ক্ষণকালের জন্য আসবে শীত। কনকনে শীত থাকবে কম সময়। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বড় নগরীগুলোতে ইট পাথরের কংক্রিটের বন, গাড়ির ইঞ্জিনের নিত্যদিনের তাপে সৃষ্ট তাপাঞ্চল, পশ্চিম ও উত্তরাকাশের বায়ুমন্ডলের বাধা প্রাপ্তি, পূবালী হাওয়ার পথ রুদ্ধ হওয়া ইত্যাদি নানা কারণে প্রকৃতির স্বাভাবিক চলার পথে বিঘ্ন ঘটছে। যে জন্য নগরে শীত অনুভূত হয় কম। তাছাড়া শীতের স্থায়িত্ব কম হওয়ায় নিকট অতীতের শীতকাল ও বর্তমানের শীতকালের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেড়েছে। সেদিনের শীতের মতো কিছুটা এখনও আছে গ্রামে। যদিও বর্তমানে গ্রামেও ইট পাথরের শহরের ইমেজ ঢুকে পড়েছে। তারপরও গাছগাছালির খোলা হাওয়া, নদী তীরের নির্মল বাতাস আজও রয়ে গেছে। প্রকৃতিতে শীতের অধ্যায় এখন গ্রামের পথেই কিছুটা হলেও মেলে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পরও হেমন্তের রেশ পাওয়া যায় গ্রামে। তবুও শীত আসে হেমন্তেরই হাত ধরে।
×