ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৬৪ জেলার এসপিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ পুলিশ সদর দফতরের

তফসিল ঘোষণার পর ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা গোয়েন্দাদের

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 তফসিল ঘোষণার পর ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা গোয়েন্দাদের

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক সংহিসতার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের ক্ষণগণনা যতই ঘনিয়ে আসছে নাশকতা, নৈরাজ্য, সংঘাত-সহিংসতার আশঙ্কা ততই বাড়ছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের হুমকির মধ্যে নির্বাচন বানচালের জন্য মাঠে নামতে পারে নির্বাচনবিরোধী অশুভ শক্তি। এ জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গুপ্ত হত্যা ও চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে এরই মধ্যে ৬৪ জেলার এসপিদের কাছে সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও ড. কামালের নেতৃত্বাধীন বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সংলাপ বা সমঝোতার বৈঠকের পরপরই আন্দোলনের হুমকিতে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত, উত্তেজনা ও অস্থির হওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপি রাজপথে আন্দোলন ও ক্ষমতাসীনরা তা প্রতিহতের প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থাৎ মুখোমুখি অবস্থায়। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। রবিবার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় মানবাধিকার আন্দোলনের এক আলোচনা সভায় ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ৬ নবেম্বরের সমাবেশ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এই ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, কিছুই করিনি, তাতেই তাদের যে অবস্থা, কিছু করলে কি হবে? সন্ত্রাস কাকে বলেÑ তা আপনারা করছেন। গুম-খুনের ইতিহাস আপনাদের সবচেয়ে বেশি। এসব পথ বাদ দিয়ে একটা সুষ্ঠু সুন্দর পথে আসুন। তিনি বলেন, আমরা যদি আলোচনায় সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে আন্দোলনে যাওয়া লাগবে না। কিন্তু আলোচনা হবে না বলে ছলচাতুরি করে ক্ষমতায় টিকে থাকবেন তা হবে না। যদি মনে করেন গতবারের মতো নির্বাচন করে পার পেয়ে যাবেন তবে মনে রাখবেন, এবার কোন পথেই পার পাবেন না। এবার আপনাদের সবক্ষেত্রে লড়াই মোকাবেলা করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হুঁশিয়ার করে বলেন, আসন্ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যেকোন বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত শনিবার জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন শেষে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যাবে। নির্বাচন কেন্দ্র করে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোর হস্তে মোকাবেলা করবে। ডিএমপির ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমান বলেছেন, এবার নির্বাচনকেন্দ্রীক কোন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আগেই তাদের দমনের জন্য পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়াতে। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আগামী সপ্তাহে মাঠে নামছে র‌্যাব পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছাড়াও একাধিক রাজনৈতিক দলের চিহ্নিত উগ্রপন্থী নেতা, যারা নাশকতামূলক তৎপরতা চালায় এবং কর্মীদের ব্যবহার করে জ্বালাও পোড়াও ও ভাংচুর করে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা না হলে ’১৩ ও ১৪ সালে আগুনে পুড়িয়ে মারা, আগুন সন্ত্রাস, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ সহিংস সন্ত্রাসের যে তা-বলীলা চালানো হয়েছে এবার তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস সংঘাতময় হলেও কোন প্রকার সংঘাত হতে দেবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচীর নামে সংঘাত সৃষ্টি করলে তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ থাকবে মাঠে। একই সঙ্গে পুলিশ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কারণ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা ও চোরাগোপ্তা হমলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ, এমনকি গরুও পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সংঘাতে পুলিশ এবার চিহ্নিত ও নামধারী নেতাদের নির্বাচনের আগেই গ্রেফতার করবে। যারা সহিংসতার নির্দেশ দেয়। নির্বাচন এলেই এরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তারা পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালান। এবার এসব বরদাশত করা হবে না।
×