ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামালকে নিয়ে বিচারপতি মানিকের মন্তব্য

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৩ নভেম্বর ২০১৮

 ড. কামালকে নিয়ে বিচারপতি মানিকের মন্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন সুপ্রীমকোর্টের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এক পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার লেখা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, কামাল হোসেন একজন রাজাকার। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের ‘সাম্প্রদায়িকতার সেকাল-একাল, আমাদের কথা’ শীর্ষক আলোচনায় বিচারপতি মানিক এ মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ড. কামালের দল গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, এগুলো মিথ্যাচার, সবই মিথ্যা। সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর সংবিধান প্রণয়নে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিন্দ্বিতা করেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিরোধে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আওয়ামী লীগ ছাড়েন কামাল হোসেন, গড়ে তোলেন রাজনৈতিক দল গণফোরাম। এখন নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে গঠিত সরকারবিরোধীদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। বিএনপির সঙ্গে ড. কামালের জোট বাধার প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি মানিক বলেন, ড. কামাল মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন যারা গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে। আমি আশ্চর্য হইনি এজন্য যে কামাল হোসেন নিজেও তো তাদেরই একজন। সেদিন একজন (বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মাদ ফরাসউদ্দিন) বলেছেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যায় ড. কামাল জড়িত ছিল এই মর্মে এভিডেন্স পাওয়া যাচ্ছে, কথাটা উনি কিন্তু ভুল বলেননি, উনি সেই সময় বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মামলা লড়া আইনজীবীদের একজন ড. কামাল মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে বন্দী হলেন, কেন তাকে পাকিস্তানে নেয়া হলো সেসব বিষয়ে ভিন্ন একটি পাঠ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অনুষ্ঠানে হাজির করেন ‘মিট্টা খাঁ’ নামে এক পাকিস্তানী জেনারেলের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে। তবে ওই পাকিস্তানী জেনারেলের বিষয়ে বিস্তারিত কোন তথ্য তিনি দেননি। মানিক বলেন, মিট্টা খাঁ ২০০৮ সালে ডিফেন্স জার্নাল নামে একটি ম্যাগাজিনে লিখেছেন, ২৮ মার্চ একাত্তরে কামাল সাহেব মিট্টা খাঁকে ফোন করে বলল, ‘সবাই তো চলে গেছে ভারতে, আমি যেতে চাই না, আমি মুক্তিযুদ্ধ-টুদ্ধ করব না, কিন্তু আমাকে ওই মুক্তিযোদ্ধারা মেরে ফেলবে, আমাকে দয়া করে রক্ষা করুন। মিট্টা খাঁন তাকে ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টারে নিয়ে আশ্রয় দিয়েছিলেন, প্রোটেকশন দিয়েছিলেন এবং ২৯ মার্চ ড. কামালকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেন। তিনি আরও লিখেছেন, পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর উনি প্রতিমাসে কামাল সাহেবের সঙ্গে দেখা করতেন। কামাল সাহেব তখন তার শ্বশুর এবং তার সম্পর্কে শ্বশুর এ কে বদি আল্লাহবক্স খোদাবক্স, খুব নাম করা উকিল ছিলেন, তার সঙ্গে প্র্যাকটিস করতেন।’ গত আগস্টে অর্থনীতি সমিতির এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিনের বক্তব্যের সূত্র ধরে আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মানিক বলেন, ফরাসউদ্দিন সাহেব বলেছেন সেদিন, কামাল হোসেনকে ওখানে (পাকিস্তানে) রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার জন্য। কারণ তারা সব ঠিক-ঠাক করেছিল বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেবে এবং এই ফাঁসি দেয়ার জন্য সাক্ষী দরকার ছিল। ড. কামালকে সাক্ষীর জন্য রেখেছিল। আইএসআই অত্যন্ত করিৎকর্মা একটি গোয়েন্দা সংস্থা, বঙ্গবন্ধুকে যখন আবার ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হলো তখন ফের কামালকে সেই প্লেনে উঠিয়ে দিয়েছে। এই হলো কামাল হোসেনের ইতিহাস। উনি একজন রাজাকার। এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বক্তব্যের বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুব্রত চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন এগুলো সবই মিথ্যা। বন্দী করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে (কামাল হোসেন) হরিপুর জেলে রাখা হয়েছিল, সেখানে উনার বিচার হচ্ছিল। তারপর বঙ্গবন্ধু তো ভুট্টোকে বলে উনাকে (কামাল) সঙ্গে নিয়ে দেশে আসেন এগুলো জানে সবাই। (বিচারপতি মানিক) এসব খামোকা এসব বলছেন। বিচারপতি মানিকের দিকে ইংগিত করে সুব্রত চৌধুরী বলেন, জ্ঞানপাপীদের কথার কোন উত্তর দেয়ার দরকার নেই। এগুলো ননসেন্স। এগুলোর উত্তর দেয়ার দরকার নেই। এগুলো চাইল্ডিশ কথাবার্তা, বালখিল্যপনা। অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের আলোচনা সভায় সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানেরও সমালোচনা করেন সাবেক বিচারপতি মানিক। কথাটা কিন্তু আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি, উনি তো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণই নেননি। এটা আজ স্পষ্ট, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নক্সা করেছিলেন জিয়া। দেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন, রাজকারদের মন্ত্রী বানিয়ে। স্বাধীনতাবিরোধীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করায় জিয়ার তীব্র সমালোচনা করে বিচারপতি মানিক বলেন, আমি বলব জিয়াউর রহমান এ দেশের নাম্বার ওয়ান রাজাকার। এই কুখ্যাত রাজাকারের মরণোত্তর বিচারের সিস্টেম যেহেতু আইনে নেই, তাই আমার দাবি থাকবে অন্তত তদন্ত করা হোক পঁচাত্তরে ও তারপরে জিয়ার কী ভূমিকা ছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যায় তার কী ভূমিকা ছিল- এটা তদন্ত হলে ইতিহাসে রেকর্ড থাকবে। অনুষ্ঠানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব বলেন, সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতিতে একটি অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে দুর্বল মানসিকতার মানুষ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। অন্যদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী ইয়াহিয়া জামান, সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ এ আলোচনায় বক্তব্য দেন।
×