ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোলরক্ষক মেহেদীর কৃতিত্বে ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২ নভেম্বর ২০১৮

গোলরক্ষক মেহেদীর কৃতিত্বে ফাইনালে বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। বাংলাদেশ ০-১ গোলে পিছিয়ে। রেফারি ৫ মিনিটের সংযুক্তি সময় ঘোষণা করেছেন। সেটারও তিন মিনিট প্রায় শেষ। কোটি কোটি বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমী টেনশনে অস্থির, অনেকেই আবার হতাশ হয়ে ছেড়েই দিয়েছেন হাল। বলেই বসলেন, ‘নাহ্ বাংলাদেশ আর পারবে না! সাফ অনুর্ধ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আর উঠতে পারলো না।’ না, তাদের ধারণা ছিল ভুল। তখনই ম্যাজিক দেখায় মোস্তফা আনোয়ার পারভেজের শিষ্যরা। পেনাল্টি পায় তারা। তা থেকে সমতায় ফিরে উল্লাসে মাতার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসের পারদটাও তুঙ্গে নিয়ে যায় তারা। আর অদম্য মনোবলেই টাইব্রেকারে ম্যাচটি জিতে নেয় অবিশ্বাস্যভাবে, ৪-২ গোলে (নির্ধারিত সময়ে খেলাটি শেষ হয় ১-১ গোলে) শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে নাম লেখায় ফাইনালে। আগামী শনিবার তারা ফাইনালে মুখোমুখি হবে পাকিস্তানের, যারা বৃহস্পতিবারই অপর সেমিতে ৪-০ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিক নেপালকে। বৃহস্পতিবার নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচে যেন ‘শনির দশায় পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশ দলকে। ম্যাচের ১৭ মিনিটেই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে তারা। ১৭ মিনিটে প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেয় হর্ষ শৈলেশ। তারপর অনেক আক্রমণ করলেও কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পাচ্ছিল না লাল-সবুজরা। বারবার তাদের আক্রমণগুলো পর্যবসিত হচ্ছিল ব্যর্থতায়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ শিবিরে বাড়ছিল হতাশা। সেই হতাশা দূর হয় ম্যাচের সংযুক্তি সময়ে (৯০+৩ মিনিটে)। পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। ডিফেন্স সামলাতে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের এক খেলোয়াড়কে নিজেদের বক্সে ফেলে দেয় ভারতের এক ডিফেন্ডার। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। আর তা থেকে গোল করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরায় ফরোয়ার্ড আশিকুর রহমান। টুর্নামেন্টে এটা তার তৃতীয় গোল যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ৩৭ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। নাজমুল আহমেদের শট বারের ওপর দিয়ে চলে যাওয়ায় গোলের দেখা মেলেনি। বিরতির পর আক্রমণের ধার আরও বাড়াতে সচেষ্ট হয় বাংলাদেশ। ৫৮ মিনিটে ইবনে আহাদ শাকিলের কর্নারে সতীর্থের হেড সাইডবারের পাশ দিয়ে গেলে সুযোগ হাতছাড়া হয়। ৭৩ মিনিটে বাংলাদেশের আরও একটি জোরালো আক্রমণ রুখে দেয় ভারতের গোলরক্ষক। ৯৩ মিনিটে সমতায় ফেরার দুই মিনিট পরই খেলা শেষ হয়ে যায়। টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী খেলা আর অতিরিক্ত সময়ে না গড়িয়ে সরাসরি টাইব্রেকার অনুষ্ঠিত হয়। আর তাতে প্রথম দুটি শট ঠেকিয়ে দিয়ে ‘হিরো’ বনে যায় মেহেদী হাসান, যার এই ম্যাচে খেলারই কথা ছিল না। গ্রুপের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে নেপালের বিরুদ্ধে লালকার্ড পাওয়ায় সেরা চারের লড়াইয়ে দলের পোস্টের নিচে থাকতে পারেনি নিয়মিত গোলরক্ষক মিতুল মারমা। তাই সেমির ম্যাচে মিতুলের পরিবর্তে সুযোগ পায় সাইডবেঞ্চে বসে থাকা মেহেদী। টাইব্রেকারে বাংলাদেশের হয়ে গোল করে তৌহিদুল ইসলাম, রাজা আনসারী, কামরান উদ্দিন ও রোস্তম ইসলাম। মালদ্বীপকে ৯-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়ার পর নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপের সেরা হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ভারত নিজেদের প্রথম ম্যাচে যদিও পাকিস্তানের কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ভুটানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে সেমিতে নাম লেখায়। ২০১৫ সালে নিজেদের মাঠে ভারতকে হারিয়ে এ প্রতিযোগিতার প্রথম শিরোপা জিতেছিল লাল-সবুজরা। সেবার অবশ্য প্রতিযোগিতাটি হয়েছিল অনুর্ধ-১৬ বছর বয়সীদের নিয়ে। ২০১৭ সাল থেকে এএফসি অনুর্ধ-১৬ টুর্নামেন্টের সঙ্গে সঙ্গতি রাখার জন্য অনুর্ধ-১৫ বয়সীদের নিয়ে টুর্নামেন্টটি হচ্ছে। এই আসরে বাংলাদেশই এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১২ গোল করেছে। এছাড়া এখনও অপরাজিত আছে তারা (পাকিস্তানও)। বাংলাদেশের এই ১২ গোল করেছে মোট ছয় ফুটবলার। তার মানে স্কোরারের অভাব নেই দলটির। যে কোন পরিস্থিতিতে যে কেউই গোল করতে পারঙ্গম দলটি। নির্দিষ্ট কারুর ওপর তারা নির্ভরশীল নয়। এটাই দলের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। এখন দেখার বিষয় ফাইনালে পাকিবধ করে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপাটা নিজেদের করে নিতে পারে কি না লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
×