ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাজমা আক্তার রোজী

সংলাপ এবং অতঃপর...

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২ নভেম্বর ২০১৮

সংলাপ এবং অতঃপর...

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা দলের নানা মত পরিলক্ষিত হচ্ছে। একই সঙ্গে জোট-মহাজোট, যুক্ত-ঐক্যফ্রন্টের নামে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো একটি মঞ্চে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তাদের নিজস্ব চিন্তা-ধারা প্রকাশ করে ভোটারের মন জয় করার জন্য এখানে সেখানে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে চলেছে। আর সেই সঙ্গে কোন্ ফরমেটে নির্বাচন হবে, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে- এসব বিষয়সসহ নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা বা সংলাপ করতে ইচ্ছুক- এটিও বার বার বলার চেষ্টা করছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পর যুক্তফ্রন্টের ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সংলাপের আহ্বানেও সাড়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ‘সংলাপ’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করছে। সংলাপ কতদিন চলবে? সর্বশেষ কী হবে সংলাপে? বিএনপির বর্তমান নির্ভরতার প্রতীক ড. কামাল হোসেন কি খালেদা জিয়াকে এতিমের টাকা দুর্নীতি মামলার রায়ের পরও মুক্ত করতে পারবেন? তিনি কি সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক জিয়াকে বাংলাদেশের মুক্ত আকাশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন? কী হবে সংলাপের চূড়ান্ত পরিণতি! আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দুই নেত্রীর ফোনালাপের বিষয়টি। তখন নিশ্চয়ই দুই নেত্রীর কথা বলার ধরন, একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের শিষ্টাচার, মনমানসিকতা, শিক্ষা-দীক্ষা এবং সর্বোপরি লাল ফোনের নাটক! আরকেটি দৃশ্য নিশ্চয়ই পাঠকের আরও বেশি মনে থাকার কথা। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর শুনে খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না দিতে গিয়ে অপমান, অপদস্থ হয়ে বাড়ির দরজার সামনে থেকে দেশের জাতির জনক কন্যা, দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিরে আসার দৃশ্যটি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এদিকেও যাচ্ছি না। আমি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংলাপের দিকে থাকতে চাই। আমিও চাই, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সাম্প্রদায়িক হামলার কালো ছোবল থেকে জাতি মুক্ত থাকুক। পেট্রোলবোমার আগুন যেন আর কোন শিশু-কিশোরের জীবন কেড়ে নিতে না পারে। বাস কিংবা ট্রাক ড্রাইভারকে পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করার অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের রাজনৈতিক দল বিএনপি বেরিয়ে আসুক। আমিও অন্য সবার মতন সংলাপ কিংবা আলোচনায় বিশ্বাসী। তবে সেটা কতিপয় রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তি স্বার্থে নয়। কিংবা কোন জনবিচ্ছিন্ন তথাকথিত নেতাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানোর জন্যও নয়। আবার রাজবন্দীর নামে এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার খুনী, যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষাবলম্বনকারী অপরাধীদের মুক্তির দাবি নিয়ে কোন সংলাপ বা আলোচনা হতে পারে না। সাধারণ জনগণের মতো আমারও চাওয়া, আধুনিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতার বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ কীভাবে বিশ্বের বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে, ২১ আগ্রস্ট গ্রেনেড হামলা, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলাকারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে চিরতরে রাজনীতি থেকে কীভাবে ছুড়ে ফেলে দেয়া যায়- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা বা সংলাপ হতে পারে এবং এই সংলাপে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। প্রকৃতি তার নিজস্ব গতিতে ইতিহাস রচনা করে চলে। আজ শুধু ক্ষমতায় যেতে এখানে-সেখানে বক্তব্য-বিবৃতিসহ সংবাদ সম্মেলন করে শেখ হাসিনার সাক্ষাত প্রার্থনা করেন। এখানে শুধু ‘ক্ষমতায় যেতে’ বলার কারণ, এই সাহেবরা কখনও দেশ ও জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করেছে বলে তথ্য-উপাত্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার জীবনের শেষ সময়ে এসেও করতে পারবে- এমনটা আমার বিশ্বাস হয় না। ১/১১-এর সময় এই আইনজীবী কার পক্ষ অবলম্বন করে বক্তব্য দিয়েছিল? কাদের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছিল? ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি নিয়ে যখন দেশের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত রাস্তায়; তখন এই আইনজীবীর ভূমিকা কী ছিল? আরেকটি ব্যাপার, সবচেয়ে আলোচিত পদ্মা সেতুর তথাকথিত দুর্নীতি! দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা যখন বার বার পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনা-সমালোচনা করে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের ওপর কলঙ্কলেপন করার চেষ্টা করেছিল; তখন এই আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী দেশ ও দেশের মানুষের মর্যাদা রক্ষায় কী ভূমিকা নিয়েছিল? মোটকথা হচ্ছে, যুক্ত-ঐক্যফ্রন্টের বড় বড় নেতা এতদিন কোথায় ছিল, কী করেছে দেশ ও জাতির কল্যাণে? এখন আগামীতে কি করবেন তা দেখার অপেক্ষায় জাতি। লেখক : নারী নেত্রী
×