ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কামালের প্রতি ১৪ দল

সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন আলোচনা করবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১ নভেম্বর ২০১৮

সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন আলোচনা করবেন না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংবিধানসম্মত আলোচনা করার জন্য গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ। সংবিধানের বাইরে কোন কিছু মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে জোটের নেতারা বলেছেন, ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম। কাজেই সংবিধানের বাইরে তিনি যাবেন না বলেই ১৪ দলের নেতাকর্মীদের বিশ^াস আর সংবিধানের বাইরে গিয়ে আলোচনা করলে সেটা ১৪ দল মেনে নেবে না। বর্তমান সংবিধানের আলোকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেটা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই। বুধবার রাজধানীর মতিঝিল টিএ্যান্ডটি কলোনি মাঠে বিএনপি-জামায়াত জোটের অব্যাহত মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ১৪ দল আয়োজিত বিশাল সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো আলোচনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে সংলাপের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছেন। সেই সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন আলোচনা না করতে ড. কামাল হোসেনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও তিনি (ড. কামাল) খুনীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলেই এত মিথ্যাচারের পরেও সংলাপে বসছেন। সংলাপ হবে, তবে ইউরোপ-আমেরিকা-ভারতের মতো সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময় সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর কোন বিকল্প নেই। আশা করি সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন সংবিধানের মধ্য থেকেই আলোচনা করবেন। সংবিধানের বাইরে কেউ যেতে পারবে না। দেশের জনগণ ও ১৪ দল সংবিধানের বাইরে কোন প্রস্তাব মেনে নেবে না, মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা ফাইনাল খেলা খেলতে চাই। বিশ^কাপ ফুটবলে মেসি গোল মিস করেছে। নেইমার গোল মিস করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোল মিস করবেন না। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত যদি কোন ফাউল গেম খেলে তাহলে জনগণই তাদের লালকার্ড দেখিয়ে দেবে। তিনি খালেদা জিয়া ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সমালোচনা করে বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর ব্যারিস্টার মইনুলই বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলায় বেগম জিয়া এখন জেল খাটছেন। আবার সেই মইনুলকেই বিএনপি কাছে টেনে নিয়েছে, যে মইনুল খুনী খন্দকার মোশতাকের সঙ্গেও হাত মিলিয়েছিল। ১৪ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখন থেকেই ১৪ দলের নেতাকর্মীদের পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নিতে হবে। পাহারা দিতে হবে। যাতে বিএনপি-জামায়াত কোন নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে। নির্বাচনের ফল ঘরে এনে শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী পদে না বসানো পর্যন্ত পাহারা অব্যাহত থাকবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরজুড়ে দেশের জেলা-উপজেলায় বিজয় মঞ্চ করবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল। এসব বিজয় মঞ্চে বিজয়ের গান, আলোচনা সভাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। নির্বাচনে চূড়ান্ত বিজয়ের পর বিজয় মঞ্চগুলোতে হবে বিজয় উৎসব। সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গত সাড়ে ৯ বছরে বর্তমান সরকারের আমলের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এখন যে কোন জায়গায় দাঁড়ালেই উন্নয়নের চিত্র চোখে পড়ে। দেশের এত উন্নয়ন দেখে বিএনপি-জামায়াত ভীত, সন্ত্রস্ত ও হতাশ আর গত নয় বছরে তারা নয়দিনও আন্দোলন করতে না পেরে ড. কামাল হোসেন, মইনুল, রব, মান্নাকে ভাড়া করেছে। খালেদা-তারেক যে অপরাধ করেছে তাতে সারাজীবনই তাদের জেলের ভেতরে থাকতে হবে অথবা দেশ থেকে পালানো ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনও হবে সংবিধানের আলোকেই। তবে সংলাপ হতে কোন দোষ নেই। আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ঢাকা-৮ আসন থেকে তাঁকে বিজয়ী করার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন এবং এলাকাবাসীর কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ চান। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল হক মাইজভা-ারী এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়েছেন, তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নৌকা ও শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। এ সময় তিনি নৌকা উচ্চারণ করে সেøাগান দেন। জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিএনপি গোরস্তানে চলে যাবে। জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ড. কামাল হোসেন কখনও প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। ক্ষমতায় যেতে চান না। সেই ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মিশেছে বিএনপি। বর্তমান বিএনপি কামাল হোসেনের সঙ্গেই থাকুক। তাহলে বিএনপিরও কোন দিন ক্ষমতায় যাওয়া হবে না। তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভা-ারী বলেন, শেখ হাসিনার মন অনেক বড় বলেই সংলাপের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি জেপির এ এইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ, গণতন্ত্রী পার্টির নেতা ডাঃ শাহাদত হোসেন, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, জাসদের যুগ্ম সম্পাদক অভিনেতা নাদের চৌধুরী, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ অসিত বরণ রায়, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত, ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর সভাপতি অমল হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক আহকাম উল্লাহ প্রমুখ।
×