ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান নয়

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১ নভেম্বর ২০১৮

অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান নয়

শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ কিছু কিছু বিশেষ জায়গা ব্যতিরেকে সব জায়গায় বিলুপ্তপ্রায়। বয়োকনিষ্ঠরা বড়দের সম্মান করবে, শ্রদ্ধা জানাবে আর বয়োজ্যেষ্ঠরা ছোটদের স্নেহ-ভালবাসা দেবেন এই স্বাভাবিক চিত্রটি পরিবারে, কমস্থলে, সামাজিক সম্মিলনে সর্বত্রই প্রায় অনুপস্থিত। কেন এই পরিস্থিতি? এ দায় কার? আমার মতে পারিবারিক শিক্ষা, দুর্নীতি, বিচারহীনতা, পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মীয় কুসংস্কারসহ অনুচ্চারিত অনেক কিছুই এর জন্য দায়ী। একটি শিশু বাড়িতে তার বাবাকে যখন তার মায়ের সঙ্গে বা বাবার সঙ্গে, দাদু-দিদার সঙ্গে, বয়স্ক ও কাজে সাহায্যকারী মানুষের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ করতে দেখে সেখান থেকে সে একটা শিক্ষা নেয়। এমনিভাবে পরিবারের বাইরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, পথে বা হাটে-বাজারে মানুষকে বিশেষ শ্রেণী বিবেচনায় আমরা বড়রা শ্রদ্ধা জানাই বা ¯েœহ-আদর জানাই। এসব জায়গা থেকেও বেড়ে ওঠা ছোট মানুষটি শিখে ফেলে কর্মস্থলে ছোট পজিশনে কর্মরত বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, গরিব ও অশিক্ষিত বড়দের শ্রদ্ধা জানাতে হয় না। আমাদের চারপাশ- অবক্ষয়ের আবরণে ছেয়ে গেছে। একজন মানুষ যখন সর্বত্রই দুর্নীতি, অনিয়ম দেখে তখন সেও সবাইকে নেতিবাচক ভাবতে শুরু করে, নিজের অজান্তেই রুক্ষ্ম মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হয়। পুঁজিবাদী সমাজের বৈশিষ্ট্যই লাভ খোঁজা। আমরা ছোট-বড় সকলেই লাভের পেছনে ছুটছি, আমি এবং আমার স্বার্থ ছাড়া কিছুই যেন নেই কোথাও। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ সেখানেই দেখাই যেখানে স্বার্থের গন্ধ পাই। অর্থশালী, সম্পদশালী ও শক্তিশালী মানুষ সমাজে পূজনীয় হচ্ছে বরেণ্য হচ্ছে, প্রকৃত শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য মানুষ সমাজের এককোনে ঠাঁই করে নিয়েছে। ছোট-বড় সকলেই বুঝে গেছে বস্তুগত উন্নয়ন লাভ বা মুনাফা থেকেই প্রাপ্ত, আত্মিক বা ইতিবাচক মূল্যবোধ থেকে নয়। কিন্তু সকল মানুষই জীবনের কোন এক লগ্নে বুঝতে পারে যে ভাল থাকার জন্য অর্থই সব কিছু নয়Ñ শ্রদ্ধা ও সম্মান পাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এক বিষয় যা অর্জন করতে হয় অন্যকে ¯েœহ করে, ভালবেসে, শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হচ্ছি। কিন্তু শিষ্টাচারে উন্নত হতে না পারলে জীবনের শেষ কালটা নিরানন্দে কাটাতে হবে, সভ্য জাতি হিসেবেও পরিচিত হতে পারব না পৃথিবীতে। এ জন্য কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নয় হলিস্টিক এ্যাপ্রোচে এগুতে হবে আমাদের। পরিবারের ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি একমুখী প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং সিলেবাসে মানবিক মূল্যবোধ শিক্ষা জরুরী। আমরা যারা বড় তারা অন্যদের চরিত্র তুলাধুনা না করে বা বিনা বিচারে অন্যের চরিত্র হরণ ও সম্মান নিয়ে খেলা না খেলে বরং প্রশংসা করার অভ্যাস গড়ে তুলি। কারণ নতুন প্রজন্মের জন্য রোল মডেল দরকার। প্রচার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে প্রোগ্রামসহ সিনেমায়, নাটকে, সভায়, টকশোতে সৌজন্য ও শিষ্টাচার অনুশীলন আজ সময়ের দাবি। ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু বড় বড় ধর্মীয় সভায় যখন অন্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে, নারীদের নিয়ে কথা বলা হয় তখন কিছু মানুষ অন্য মানুষকে হেয় করার শিক্ষা পায়, তাই নতুন আইন তৈরি ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে সর্বত্র ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার যে, পরিবার ও সমাজই শিষ্টাচার ও সৌজন্য শিক্ষা চর্চার আধার। কুড়িগ্রাম থেকে
×