ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ বিজ্ঞান ॥ বিষয় ॥ শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১ নভেম্বর ২০১৮

সমাজ বিজ্ঞান ॥ বিষয় ॥ শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ

অভ্যন্তরীণ মৌলিক মানবীয় গুণাবলীর জন্য মানুষকে মানুষ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই মানবীয় গুণাবলীর প্রভাব একজন মানুষের উপর যত বেশি হয় সে ততবেশি শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধসম্পন্ন, নৈতিকতাসম্পন্ন, পরিশীলিত, বিচক্ষণ হয়ে ওঠে। সে যেমন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য উপকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হয় ঠিক তেমনি নিজ ব্যক্তি সত্তার নিকট পরিতৃপ্তি লাভ করে । অপরদিকে দানবীয় গুণাবলীর প্রভাবে একজন মানুষ ভয়ঙ্কর জীবে পরিণত হয়। গর্ব অহঙ্কার, হিংসা, লোভ, আত্মকেন্দ্র্রিক চিন্তার ফলে একজন মানুষের মাঝে উত্তম গুণাবলীর অন্যতম শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ কমে যায়। নিজেকে সবার থেকে উত্তম মনে করা নিজের চাওয়া-পাওয়া, রুচিশীলতাকে অন্যান্য সবার উপর প্রাধান্য দেয়াও শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের অবক্ষয় পরিবার থেকে শুরু করে সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খল ও অনাচারের সৃষ্টি করেছে। পরিবারের সদস্যদের মাঝে এই গুণাবলীগুলোর অনুপস্থিতি ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। বড়দের প্রতি সম্মানবোধ এবং ছোটদের প্রতি স্নেহের জায়গা কমে যাওয়ার ফলে পরিবারে ভাঙ্গন সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটে যাচ্ছে সন্তানের হাতে পিতা-মাতার, পিতা-মাতার হাতে সন্তানের খুনের ঘটনা। সমাজের মধ্যে পারস্পরিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যের ধারাবাহিকতায় ফাটলের ফলে ঠুনকো স্বার্থ হাসিলের জন্য অপরকে খুন করতেও দ্বিধা করছে না। এক প্রতিবেশী অপর প্রতিবেশীর সম্মান, সম্পদের ক্ষতি সাধনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অফিস-আদালতে উচ্চপদস্থ কোনো কোনো কর্মকর্তার শিষ্টাচার বহির্ভূত উগ্র আচরণের ফলে নি¤œপদস্থদের মাঝে এর ব্যাপকতা লাভ করেছে। উচ্চপদস্থরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে খোশামোদিতে। কিন্তু এই খোশামোদ যারা করছে তারাও মনে মনে উচ্চপদস্থের প্রতি চরম ক্ষিপ্র মনোভাব বহন করছে। এক্ষেত্রে যদি উচ্চপদস্থদের মাধ্যমে সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচারের চর্চা নিম্নপদস্থদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি, সমতা আনয়নের মতো কাজ করত তাহলে খুব সহজেই অফিসে পরস্পরের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত ভাব বিরাজ করত। সমগ্র রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সব স্তরে বড়ই অভাব হয়ে গিয়েছে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের সংস্কৃতি। এই গুণাবলী কোন রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যক্তিকে বাধ্য করা সম্ভব নয় বরং এসব ব্যক্তির অভ্যন্তরে লালিত উত্তম গুণাবলী। যে গুণাবলীর পাঠদান শিশু অবস্থা থেকে শুরু“হয় এবং জীবনব্যাপী চলতে থাকে। পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং সময়ের সঙ্গে এই গুণাবলীর উন্নতি এবং অবনতি সাধিত হয়। ছোট-বড়দের মাঝে সম্মান ও স্নেহবোধ, ধর্মীয় অনুভূতির বিকাশ, অনমনীয়তা ইত্যাদি চর্চার মাধ্যমে আমরা খুব সহজে সৌজন্যবোধ ও শিষ্টাচারের বিকাশ সাধন করতে পারি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×