ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রাশেদুল হক

শ্রমিক থেকে শতাব্দীর সেরা!

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

শ্রমিক থেকে শতাব্দীর সেরা!

মোহাম্মদ আব্বাসের উত্থানের গল্পটা সিনেমার কাহিনীকেও হার মানাবে। অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান সংসারে সাহায্য করতে, জীবিকার তাগিদে সাধারণ শ্রমিক থেকে অফিস বয়ের কাজ পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু কোন অবস্থায় ভালবাসার ক্রিকেটটা ছাড়েননি। ১০ উইকেট নিয়ে আবুধাবি টেস্টে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক ন্যূনতম ৫০ শিকারে গড়েছেন গত ১০০ বছরে সেরা বোলিং গড়ের নতুন রেকর্ড। চামড়ার কারখানায় ঢালাইকর থেকে অফিস বয়; এই সংগ্রামের পাশাপাশি শুধু ক্রিকেটটা খেলেছিলেন বলে আজ তিনি জাতীয় দলে। আর দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আব্বাসের এসব কীর্তি কী বলে? পাঞ্জাবের প্রত্যন্ত এক গ্রামে জন্ম নেয়া পেসারের গল্পটা রূপকথার চেয়ে কোন অংশে কম নয়! গত বছর টেস্ট অভিষেকের পর এই সংস্করণে ১০ ম্যাচে তার উইকেটসংখ্যা ৫৯। গড় ১৫.৬৪! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তার উইকেটসংখ্যাই সর্বোচ্চ ১৭। কোন সিরিজে কমপক্ষে ১৫ উইকেট পেয়েছেন এমন পারফর্মেন্স করা পাকিস্তানী বোলারদের মধ্যে আব্বাসের গড়ই সবচেয়ে ভাল ১০.৫৮। তবে টেস্ট আঙ্গিনায় এ ক’দিনের পথচলায় আব্বাস এমন এক কীর্তি গড়েছেন যা এই সংস্করণে গত ১০০ বছরের মধ্যে সেরা! টেস্ট ক্রিকেটে ন্যূনতম ৫০ উইকেট পেয়েছেন এমন বোলারদের মধ্যে গত এক শতাব্দীতে আব্বাসের বোলিং গড়ই সেরা ১৫.৬৪। আর সবকাল বিবেচনায় চতুর্থ সেরা। ১০ ম্যাচে ১৯ ইনিংসে বল করেছেন আব্বাস। ২২৪৪টি বৈধ ডেলিভারিতে ৯২৩ রান খরচায় তার উইকেটসংখ্যা ৫৯। ১৭.৯৭ বোলিং গড় নিয়ে গত ১০০ বছরের এই তালিকায় দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি স্পিনার বার্ট আয়রনমঙ্গার। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসার ফ্রাঙ্ক টাইসনের বোলিং গড় ১৮.৫৬, তিনি এই তালিকায় তৃতীয়। আয়রনমঙ্গার ও টাইসনের ক্যারিয়ার যথাক্রমে ১৪ ও ১৭ টেস্টের। আব্বাসের ক্যারিয়ার এখনও পড়ে আছে। সময়ের সঙ্গে ম্যাচসংখ্যা বাড়লে তার বোলিং গড়েও যে পরিবর্তন আসবে সে কথা বলাইবাহুল্য। কিন্তু তার আগে টেস্ট আঙ্গিনায় ক’জনের এমন স্বপ্নের শুরু হয়। ক’জন এত প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছেন। সেটিও আবার অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে দারুণ পারফর্ম করে। আরব-আমিরাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে আব্বাস যে পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন তা জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসে। গত ১০০ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোন সিরিজে পেসারদের মধ্যে আব্বাসের বোলিং গড়ই সেরা (১০.৫৮)। ক্রিকেটে যেসব দেশে প্রায়শ বিস্ময়কর সব প্রতিভার আবির্ভাব হয়, পাকিস্তান তার অন্যতম। কষ্টের আগুনে পুড়ে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়ে ওঠা ২৮ বছর বয়সী আব্বাস যে হারিয়ে যেতে আসেননি সেটি সহজেই অনুমেয়।
×