ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কবে হবে বলতে পারেন না মন্ত্রী

ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারছে না বিটিআরসি

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারছে না বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ নয় মাস আগে ইন্টারনেটের ‘কস্ট মডেলিংয়ের’ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারছে না। বিশেষ করে মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর বিটিআরসির কোন নিয়ন্ত্রণই নেই। বিটিআরসি বলছে, আমরা কস্ট মডেলিংয়ের রিপোর্ট মন্ত্রণালয়য়ে জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পেলেই নতুন দাম নির্ধারণ করতে পারি। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বললেন অন্য কথা। তার হাতে এখনও আইটিইউ’র রিপোর্ট আসেনি। হাতে পেলেই আমরা সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ দাম নির্ধারণ করে দিতে পারি। আমি দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনই ঘোষনা করেছিলাম সবার আগে ইন্টারনেটের দাম কমাবো। কিন্তু তিনি নানা প্রতিকুলতায় দাম কমাতে পারেননি। তবে আশা করছি রিপোর্ট হাতে পেলেই সাড়ে ৮ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন. আমি মন্ত্রীর গ্রহণ করেই বলেছিলাম সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ইন্টারনেটের দাম কমাতে হবে। ঘোষনাও দিয়েছিলাম ইন্টারনেটের দাম কমানোর। কিন্তু এটা একটা বড় কাজ। এরপরও কস্ট মডেলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন আশা করা যায় ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব হবে। তবে ঠিক কবে নাগাদ এটা হবে তা বলা মুশকিল। এমনিতেই ফোরজি নেটওয়ার্ক থেকে এমএনপি পর্যন্ত (নম্বর না বদলে অপারেটর পরিবর্তন পদ্ধতি) নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। দিনে ২২২ কোটি মিনিট কলড্রপ হচ্ছে। ইন্টারনেট থেকে অপারেটররা নানা প্যাকেজের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব আমার জানা আছে। সব কিছু মিলেই সেক্টরটিতে যে ভূত ঢুকে আছে তা তাড়াতে একটু সময় লাগছে। তবে বেশি দিন এই ভূত থাকবে না। নির্বাচনকালীন সরকারের সময় অনেক কাজই সমাপ্ত হবে আশা করি। আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) থেকে কেনা হচ্ছে ব্যান্ডউইথ আর বিক্রি করা হচ্ছে ডাটা। তার মানে ব্যান্ডউইথকে ডাটাতে কনভার্সনের মধ্যে যা দাঁড়ায়, তাতে ভালোভাবে মনোযোগ দেয়া গেলে এই জায়গায় অনেক সুযোগ আছে গ্রাহককে সেবা দেয়ার। কিন্তু তা হচ্ছে না। আমরা এরই মধ্যে আইটিইউ’র (ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) কাছ থেকে ইন্টারনেটের দামের ওপর একটা কস্ট মডেলিংয়ের রিপোর্ট পেয়েছি। বিটিআরসিকে বলেছি একটা কস্ট মডেলিং দাঁড় করাতে। আমার জানা মতে, এটা এখন চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের দাম বেধে দেয়ার বিষয়টি এখন পর্যন্ত চুড়ান্ত কিছু হয়নি। বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য ‘কস্ট মডেলিং’ করার জন্য জাতিসংঘের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক কর্মকর্তাকে পরামর্শক নিয়োগ করেছিল। নিয়োগ কৃত পরামর্শক ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্ত বিটিআরসি ওই দাম এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের দেয়নি। এমন কি সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ দাম কত করা হচ্ছে তাও জানায়নি। পুরো বিষয়টি অন্ধকারেই রয়ে গেছে। জানা গেছে, ইন্টারনেট সেবা দিতে কি পরিমান খরচ হয় অপারেটরদের তা বের করার পদ্ধতিকে বলা হয় কস্ট মডেলিং। ইন্টারনেট সেবার দাম কি হবে তা গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে কস্ট মডেলিং করা হবে। ২০০৮ সালে মোবাইল ফোন কলের মূল্য কত হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল আইটিইউর পরামর্শক দিয়েই। এরপর দীর্ঘ সময় পার হযে গেলেও মোবাইল ফোনের কল রেট নির্ধারণ করা হয়নি। ওই সময় মোবাইল ফোনের কল রেট করা হয়েছিল প্রতি মিনিট (ভয়েস কল) সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা আর সর্বনিম্ন মূল্য ৫০ পয়সা। এবারই প্রথম বিটিআরসি ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্ব নিম্ন দাম নির্ধারণ করে রেখেছে। প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল এটা ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য একটি সুখবর। কারণ মোবাইল অপারেটররা নিজেদের ইচ্ছে মতো বিভিন্ন প্যাকেজের নামে ইন্টারনেট সেবা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একটা প্যাকেজ থেকে দিনে যদি এক টাকা করেও হাতিয়ে নেয় তাহলে দেশে ১২ কোটি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৮ কোটি গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের স্বার্থ দেখার বিষয়টি গত ৯ মাস ধরে উপেক্ষিত হচ্ছে। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মোবাইল ফোনের কোয়ালিটি অব সার্ভিসের দিকে মনোযোগ দিতে পেরেছি। আর ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। আমি মনে করি ইন্টারনেটের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে না পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ এখন আর ভয়েস কলের তেমন গুরুত্ব নেই। এখন বিশ্ব চলছে ডাটার ওপর। তাই ইন্টারনেটের দাম কমাতেই হবে। সেই কাজটি যদি আমি দায়িত্বে থাকতে করতে পারি তো ভাল-না থাকলেও যে কাজ করা হয়েছে তাতে ইন্টারনেটের দাম কমবেই। কাজটি এ বছরই হবে।
×