ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দশম জাতীয় সংসদ শেষ হলো

প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেত্রীর উপস্থিতির রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেত্রীর উপস্থিতির রেকর্ড

সংসদ রিপোর্টার ॥ বর্তমান দশম জাতীয় সংসদের সমাপ্তি ঘটল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ বড় একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ভোট বর্জনের ভেতর দিয়ে গঠিত হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ। শুরু থেকেই এই সংসদ নিয়ে রাজপথে বিরোধী দল বিএনপিসহ তার মিত্ররা আপত্তি জানালেও তা ধোপে টেকেনি। মেয়াদ পূর্ণ করেই সোমবার পর্দা নামল দশম জাতীয় সংসদ অধিবেশনের। আগামী নির্বাচনের পর শুরু হবে একাদশ জাতীয় সংসদ। নানা ঘটনার কারণে এই সংসদ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই প্রথম টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার অনন্য নজির স্থাপন করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত ইসলামের অনুপস্থিতিও এই সংসদ ইতিহাসের পাতায় অনন্য হয়ে থাকবে। এই দশম সংসদ আরও দুটি ঘটনার জন্য ইতিাসের পাতায় লেখা থাকবে। এই সংসদের দুই সদস্য আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ দুটি গণতান্ত্রিক সংসদীয় ফোরামের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন; যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। দশম জাতীয় সংসদকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রমাণ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৭ সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হন, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। দশম এই সংসদের যাত্রা শুরু ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। আর শেষ হচ্ছে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর। দশম জাতীয় সংসদে মোট ২৩টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে ২০১৪ সালে ৪টি অধিবেশন, ২০১৫ সালে ৪টি অধিবেশন, ২০১৬ সালে ৫টি অধিবেশন, ২০১৭ সালে ৫টি অধিবেশন এবং ২০১৮ সালে ৫টি অধিবেশন। প্রথম অধিবেশনের কার্য দিবস ছিল ৩৬দিন, দ্বিতীয় অধিবেশন ২৩ দিন, তৃতীয় অধিবেশন ১৪দিন, চতুর্থ অধিবেশন ১০ দিন, ৫ম অধিবেশন ৩৯ দিন, ষষ্ঠ অধিবেশন ২৬ দিন, ৭ম অধিবেশন ৮ দিন, অষ্টম অধিবেশন ১২দিন, ৯ম অধিবেশন ২৭ দিন, ১০ অধিবেশন ৯ দিন, ১১তম অধিবেশন ৩২ দিন, ১২তম অধিবেশন ১০ দিন, ১৩তম অধিবেশন ৫দিন, ১৪তম অধিবেশন ৩২দিন, ১৫তম অধিবেশন ৫দিন, ১৬তম অধিবেশন ২৪দিন, ১৭তম অধিবেশন ৫দিন, ১৮তম অধিবেশন ১০ দিন, ১৯তম অধিবেশন ৩৫দিন, ২০তম অধিবেশন ৫দিন, ২১তম অধিবেশন ২৫দিন, ২২তম অধিবেশন ১০ দিন, ২৩তম অধিবেশন ৮ দিন। মোট ৪১০ কার্যদিবস অনুষ্ঠিত হয়। দশম সংসদে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৩৮ দিন উপস্থিত ছিলেন। আর বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন ২৪১দিন। যা আগে কোন বিরোধীদলীয় নেতা কখনই এতদিন উপস্থিত ছিলেন না। এক্ষেত্রে সংসদে উপস্থিতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা উভয়েই নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন। এই সংসদে ১৯৯টি বিল পাওয়া যায়, শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত ১৯৩টি পাস হওয়ার কথা। রবিবার ৪০৯তম কার্য দিবস পর্যন্ত মোট বিল পাস হয়েছে ১৯১টি। এছাড়া দশম সংসদে ১৬টি বেসরকারী বিল পাওয়া যায়। এরমধ্যে ৮টি নিষ্পত্তি হয়েছে আর ৬টি সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। এছাড়া দশম সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তিন বার ওয়াক আউট করে। যদিও তাদের ওয়াক আউট ছিল অল্প সময়ের জন্য। এরমধ্যে একবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, আরেকবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে, শেষবার সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিল উত্থাপনকালে। অধিবেশনের শেষদিনে বিষাদের ছায়া ॥ সমাপনী দিন সোমবার অধিবেশনে ছিল বিষাদের ছায়া। সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য শেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগে জড়িয়ে পড়েন। শেষদিনে অধিবেশন কক্ষের চিত্র ছিল একেবারে ভিন্ন। সরকারী দলের পাশাপাশি বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও শরিক দলের এমপিরা একে অপরের সঙ্গে অনেকটা শেষবারের মতো করমর্দন করেন। নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময় করেন। স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকে আবার অধিবেশন কক্ষের মধ্যেই মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। সাধারণত একটি অধিবেশনের সমাপনী দিনে বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী সমাপনী বক্তব্য রাখেন। কিন্তু গতকাল সরকারী ও বিরোধী দলের সিনিয়র ও নবীন কয়েক এমপি সমাপনী বক্তব্যে অংশ নেন। বিল পাসের সময় যারা সংশোধনীর ওপর বক্তব্য রাখেন তারা বিদায়ী প্রতিক্রিয়া জানান। এসময় প্রায় সবার বক্তব্যেই আবেগের ছোঁয়া পাওয়া যায়। শেষদিনে সংসদ ভবনে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদও। তার সঙ্গে মন্ত্রী-এমপিরা বিদায়ী কুশল বিনিময় করেন। অধিবেশন কক্ষের বাইরে ও সংসদ সচিবালয়জুড়ে ছিল অনেকটা বিদায়ের সুর। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের নির্বাচনী এলাকার পছন্দের মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে কুশল বিনমিয় করেন। অনেক মন্ত্রী ও এমপিকে দেখা গেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িয়ে ধরতে। সংসদ সচিবালয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন এমন এক কর্মকর্তারা জনকণ্ঠকে বলেন, টানা কয়েকটি সংসদ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। এতে অনেক রাজনীতিবিদকে দেখেছি। তাদের আসা-যাওয়ার স্বাক্ষী হয়েছি। বর্তমান সংসদ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, দশম জাতীয় সংসদ হচ্ছে সবচেয়ে পিসফুল সংসদ। বিরোধী দল সংসদীয় ভাষার বাইরে কোন বক্তব্য রাখেনি। সব ধরনের সংসদীয় শিষ্টাচার মেনে চলেছেন। তারা ওয়াক আউট করেছেন। আবার ফিরে এসেছেন। এটাই পার্লামেন্টারি ডেমোক্র্যাসি। তিনি বলেন, অতীতের সব সংসদের তুলনায় এবারের সংসদে সবচেয়ে বেশি আইন পাস হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিতি ও প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করেছেন।
×