ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম জেলের জেলার মাদক, নগদ সাড়ে ৪৪ লাখ টাকাসহ আটক

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

 চট্টগ্রাম জেলের জেলার মাদক, নগদ সাড়ে  ৪৪ লাখ টাকাসহ  আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেনসিডিল, নগদ প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা ও এফডিআর, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকসহ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেছে ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশ। শুক্রবার ভৈরবে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিআরপি এ সময় তার কাছ থেকে এসব আলামত ও এফডিআর সংক্রান্ত নথি উদ্ধার করে। কারা ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোন উর্ধতন কারা কর্মকর্তা বিপুল অর্থসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হলো। ভৈরব রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মজিদ ও চট্টগ্রামের উপ কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিক জনকণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কারাসূত্র জানায়, এই ঘটনায় জেলার সোহেল রানাকে কারা অধিদফতর থেকে সাময়িক বরখাস্তের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে । কারাসূত্র জানায়, পুলিশের রিপোর্ট পাওয়ার পর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে। জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা ভৈরব থেকে জানান, দুপুর পৌনে একটার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেসে ভৈরব এসে পৌঁছলে জিআরপি পুলিশের ওসি আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে ট্রেনে তল্লাশিকালে একটি কেবিনে সোহেল রানা আটক হন। এ সময় তার লাগেজে ১২ বোতল ফেনসিডিল, নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে থানায় নেয়া হলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার নিজের নামে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার তিনটি চেক ও তার স্ত্রী হোসনে আরা পপি ও শ্যালক রকিবুল হাসানের নামে ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এফডিআরের ব্যাংক রিসিট উদ্ধার করা হয়। ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মজিদ জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতার হওয়া জেলার সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে তিনি আগে থেকেই মাদকাসক্ত। দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসাসহ মাদক সেবনে লিপ্ত। আমরা তাকে আটক করেছি। তার বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জনকণ্ঠের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, জেলার সোহেল রানা ময়মনসিংহে ভাগ্নির বিয়ের কথা বলে শুক্রবার থেকে ৫ দিনের ছুটি নেন। শুক্রবার সকালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে বিজয় এক্সপ্রেসে রওনা দেয়ার পর ভৈরবে মাদক ও অবৈধ অর্থের রিসিট ও নগদ টাকাসহ জিআরপি পুলিশের কাছে হাতেনাতে আটক হন তিনি। চট্টগ্রাম কারাসূত্র জানায়, সোহেল রানার বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকে মাদকাসক্তি, উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্বব্যহারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতন ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিভিন্ন অনৈতিক পন্থায় অবৈধ অর্থ আদায়ের ঘটনাও ইতোপূর্বে প্রকাশ পেয়েছে। কারা উপমহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক জনকণ্ঠকে জানান, সোহেল রানা ৯ মাস আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হয়ে আসেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগসমূহ কারা অধিদফতরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শুক্রবার জিআরপির হাতে মাদক ও অবৈধ অর্থসহ হাতেনাতে ধরা পড়ার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সোহেল রানা কারা উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, সময়মতো অফিসে না আসা, বন্দীদের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন না করা, উর্ধতন কাউকেই তোয়াক্কা না করা, সরকারের বিভিন্ন নির্দেশ নিয়মমতো না মানা, বেসরকারী কারা পরিদর্শকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া রয়েছে। তিনি গ্রেফতার হওয়ায় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে তাকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে এবং পরবর্তীতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে, জিআরপির নিয়ম অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
×