ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মালিক-শ্রমিকদের শাস্তি কমিয়ে সংসদে শ্রম আইনের সংশোধনী বিল পাস

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

মালিক-শ্রমিকদের শাস্তি কমিয়ে সংসদে শ্রম আইনের সংশোধনী বিল পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ শ্রমিকদের জন্য উৎসব ভাতা, শিশুশ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, নারী শ্রমিকদের প্রসূতি ছুটি, মালিক-শ্রমিক-সরকারের ত্রিপক্ষীয় পরিষদ, ছয় মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি, ২৫ জন শ্রমিক হলে কারখানায় খাবার কক্ষের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এতে মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন অপরাধের শাস্তিও কমানো হয়েছে। তবে এই বিলটি ইপিজেড এলাকার কারখানার জন্য প্রযোজ্য নয়। বুধবার রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন বিরোধীদলীয় সদস্যরা। অবশ্য তাদের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে শ্রম আইন করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে আইনটির ব্যাপক উদ্যোগের মাধ্যমে ৯০টি ধারা সংশোধন করা হয়েছিল। বর্তমান শ্রম আইনে ৩৫৪টি ধারা রয়েছে। সংশোধিত বিলে নতুন দুটি ধারা, চারটি উপধারা ও আটটি দফা সংযোজন, ছয়টি উপধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে। সংশোধিত শ্রম বিলে মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণ বা বিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড করা হয়েছে। আগে শাস্তি ছিল ২ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। বিলে বলা হয়েছে, বল প্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, কোন স্থানে আটক বা উচ্ছেদ শারীরিক আঘাত এবং পানি, বিদ্যুত, গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অথবা অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করে মালিককে নিষ্পত্তিনামায় দস্তখত করতে বা কোন দাবি গ্রহণ বা মেনে নিতে বাধ্য করতে চেষ্টা করতে পারবেন না শ্রমিকরা। করলে এটা অসদাচরণ হবে। অন্যদিকে কোন মালিক শ্রমিকের চাকরির চুক্তিতে ট্রেড ইউনিয়নে যোগদান নিষেধাজ্ঞা, কোন ট্রেড ইউনিয়নে এর সদস্য পদ চালু রাখার অধিকারের ওপর কোন বাধা সংবলিত কোন শর্ত আরোপ করতে পারবেন না। মালিক এই বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তি পাবেন। বেআইনী ধর্মঘট ডাকার দ- আগে এক বছর ছিল, এখন ৬ মাস করা হয়েছে। জরিমানা আগের মতোই ৫ হাজার টাকা রয়েছে। কোন ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে তিনি আগে ৬ মাস কারাদ-ে দ-িত হতেন। এখন সেটা কমিয়ে এক মাস করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সমর্থনের হার কমানো হয়েছে। বর্তমানে কোন প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে মোট শ্রমিকের ৩০ শতাংশের সমর্থন প্রয়োজন হয়। এখন সেটা কমে হচ্ছে ২০ শতাংশ। ধর্মঘট ডাকার ক্ষেত্রে আগে দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকের সমর্থন লাগত, নতুন আইন অনুযায়ী সেটা ৫১ শতাংশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বিল পাস ॥ বুধবার রাতে সংসদে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বিল-২০১৮ কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ রহিত করে আইনের বিধানাবলী বিবেচনা ক্রমে সময়ের চাহিদার আলোকে আইনটি প্রণীত হয়। এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে জারিকৃত উক্ত অধ্যাদেশ অকার্যকর হয়ে গেলে আবশ্যিকতা বিবেচনায় ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতির জারি করা অধ্যাদেশ বলে আইনটি কার্যকর রাখা হয়।
×