ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামবাংলার সোনার মেয়েরা

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

গ্রামবাংলার সোনার মেয়েরা

কলসুন্দর জায়গাটাকে আমরা অনেকেই চিনতাম না। আগে এর নামও শুনিনি। বাংলাদেশের আর কয়েকটা সাধারণ গ্রামের মতই একটি গ্রাম। এই সাধারণ গ্রামেই রয়েছে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা কিছু অসাধারণ মেয়ে। যে মেয়েরা দেশের গৌরব বাড়িয়ে দিয়েছে। এএফসি বাছাই পর্বে মেয়েদের বিজয় থেকে শুরু করে কিছুদিন আগে ফুটবলে মেয়েদের অর্জন আমাদের গর্বিত করেছে। কয়েকজন কিশোরী, মুখে রাজ্য বিজয়ের হাসি, হাতে বাংলাদেশের পতাকা উঁচু করে ধরে রাখা। দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধ জয় করে বিজয়ী হয়ে দেশকে তুলে ধরছে। এদের বয়স কতই বা হবে! এরা তো কিশোরী। কিন্তু এদের হাত ধরেই আমাদের দেশে আজ উচ্ছ্বাসের বেগ। খেলাটা ফুটবল। আমাদের দেশের একসময়কার তুমুল জনপ্রিয় খেলা। আমাদের সোনার মেয়েরা। দেশের পতাকা তুলে ধরলো সবার ওপরে। যেন জানান দিতে চাইছে আমরা আসছি। এই আমাদের দেশ। সেই সঙ্গে আরও একটা দিক জানাল ফুটবল এখনও নিভে যায়নি। আমাদের হাতেই আবার ফিরবে। আমরাই ফেরাব সোনালি গৌরব। অথচ সারা বিশ্বে এই দৃশ্য ভিন্ন। বেশিরভাগ দেশেই এই খেলাটাই জনপ্রিয়। ফুটবলারদের তারকা দুত্যিতেই সারা বিশ্বের মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে। এই আমাদের দেশেই বিশ্বকাপ বা কোপা আমেরিকা বা ইউরো কাপ খেলা শুরুর আগে সারাদেশ এক জ্বরে কাঁপতে থাকে। আবার বাছাই পর্বের খেলাতেও মনোযোগ থাকে। এটাকে নাকি বলে বিশ্বকাপ জ্বর। বাড়িতে, বাড়িতে ওড়ে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইংল্যান্ডসহ অন্য দেশের পতাকা। গালে, মুখে সেই দেশের পতাকা চিত্র এঁকে রাস্তায় দৌড়ে বেড়াই। মেসি না নেইমার সেই তর্কে দিনরাত কেটে যায়। কোথাও কোথাও তো বাড়াবাড়িই হয়ে যায়। তাহলে আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু এক কথায় ফুটবল ভক্ত। সেই বহু বছর আগে থেকে। বর্তমান সময়ের আমাদের দেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট যখন গ্রামে গঞ্জে পৌঁছেনি তখন থেকে। ফুটবল নিয়ে উন্মাদনায় ভাটা পড়েছে। এখন তো ক্রিকেটের সময়। চারদিকে শুধু ক্রিকেট আর ক্রিকেট। দেশের ফুটবল খেলাটা আজ জৌলুসহীন। হারের বৃত্ততে বন্দী যেন। বিদেশী কোচরা আসছে আমাদের দেশের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে। তবে খেলায় খুব বেশী উন্নতি ফুটবল প্রেমীদের চোখে পড়ছে না। এখন ঘরে ঘরে ক্রিকেট ব্যাট আর বল। এরও একটা কারণ আছে। আসল কারণটা হলো ক্রিকেটাররা আমাদের আনন্দের উপলক্ষ উপহার দিচ্ছেন তা ফুটবল খেলোয়াড়রা দিতে পারছেন না। অথচ একসময় এই দেশে নামকরা সব ফুটবলার চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলেছেন। আমরা চাই ফুটবল মাঠে গিয়ে উল্লাস করবো, দেশের হয়ে গলা ফাটাবো, বিজয়ের আনন্দে রাস্তায় নেমে আসবো; আবার হেরে যাওয়ার কারণে চোখে জল আসবে। ক্রিকেটে যা হয় আরকি। সাকিব, তামিম সৌম্যরা আজ তরুণদের চোখের স্বপ্ন। তাদের আইডল। কৃষ্ণা, মারজিয়া, সানজিদা, মারিয়ারা বহুদিন পর ফুটবল প্রেমীদের চোখে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছিল। মনে হলো এইতো আমাদের ভবিষ্যত ফুটবল এগিয়ে নেওয়ার সারথীরা। হোক না মেয়ে। ওরাই তো করে দেখাল। ওরাই বাংলাদেশের স্বপ্ন হয়ে মাঠে নেমেছে। ওদের চোখে ভয় দেখিনি। দেখেছি প্রতিপক্ষকে ভেঙে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। ওরাই দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে অন্য দেশের মেয়েদের সাথে লড়াই করেছে। ওরাই আমাদের অনুপ্রেরণা। আমাদের মেয়েরা প্রমাণ করেছে অন্য দেশের মেয়েদের থেকে আমাদের দেশ পিছিয়ে নেই। শক্তি প্রমাণ হলো মাঠে। তাতে বাংলাদেশের মেয়েরা বিজয়ী। সেই সঙ্গে বিজয়ী সারাদেশ। এভাবে যখন কৃষ্ণারা আমাদের গর্ব করার সুযোগ করে দেয় তখন সেই বিষয়টা নিয়ে আমাদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। যেমন এক সময় গলফ খেলাটা আমরা বুঝতাম না। গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে খেলাটা সম্পর্কে জানতও না। এর কিন্তু একটা কারণ হলো আমাদের দেশ থেকে এমন কোন গলফার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতো না যাকে নিয়ে মিডিয়ায় প্রচুর আলোচনা হয়েছে। সিদ্দিকুর রহমান আমাদের সেই সুযোগ তৈরি করে দিলেন। দেশের গ-ি পেরিয়ে গলফের আসনে বাংলাদেশের নাম লিখে দিলেন। এখন এই খেলাটায় কিন্তু অনেক যুবকের আগ্রহ জন্মেছে। কারণ তারা সিদ্দিকুর রহমানকে চেনে। আমরা ফুটবল প্রেমীরা আশা করি একদিন ফুটবল নিয়ে আবারও সেই উন্মাদনা, সেই আগ্রহ সৃষ্টি হবে যা আজ অনেকটাই মলিন। -পাবনা থেকে
×