ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টে যাচ্ছে ‘সৈকত রানী’ কক্সবাজারের দৃশ্যপট

মাতারবাড়ি বিদ্যুত হাবে দৃশ্যমান উন্নয়ন চিত্র

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

মাতারবাড়ি বিদ্যুত হাবে দৃশ্যমান উন্নয়ন চিত্র

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে তিন লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগ উন্নয়ন কর্মকা- এখন দৃশ্যমান। বিশেষ করে মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র ঘিরে রাস্তার উন্নয়ন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, কয়লা খালাসে জেটিসহ অনেক কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজও ৭০ শতাংশ এগিয়েছে। ’২১ সালে পুরো উদ্যমে চালু হবে কেন্দ্রটি। ’২৪ সালে আরও একটি বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হবে মাতারবাড়িতে। বিদ্যুত কেন্দ্র দুটি চালু হলে পাওয়ার হাবে পরিণত হবে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী। সূত্র জানায়, কক্সবাজারে চলমান উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে ৬৯ প্রকল্পে মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক মেগা প্রকল্প ১২। এগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ক্রমে পাল্টে যাচ্ছে সৈকত রানী কক্সবাজারের চিত্র। মাতারবাড়ির দু’টি কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্রসহ কয়েকটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ বর্তমানে দৃশ্যমান হয়েছে। দ্রুত এগিয়ে চলছে প্রকল্পগুলোর কাজ। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ড, ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ, দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প, সাবরাং এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী উপজেলায় চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল জালিয়ারদ্বীপ এক্সক্লুসিভ নাফ ট্যুরিজম পার্ক, হাইটেক পার্ক নির্মাণ, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প-এসব বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে উন্নয়ন দ্রুততর হচ্ছে। ওসব প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে কক্সবাজারের আয় (রাজস্ব) থেকে জাতীয় অর্থনীতির একটি বড় অংশ যোগান হবে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল। সূত্র জানায়, জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ির ওই বিদ্যুতকেন্দ্র বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রকল্প। মাতারবাড়িতে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ সরকারের মহাপরিকল্পনায় মাতারবাড়িকে ‘বিদ্যুত হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় যে বন্দর নির্মাণ করা হবে, পরে তাকে গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত করা হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ৫৯ ফুট গভীর এ বন্দরে ৮০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। জাপানের তোশিবা কর্পোরেশন এ বন্দরটি নির্মাণ করবে। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, বিদ্যুত কেন্দ্র ও দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে মাতারবাড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে। শিল্পনগরী ও পর্যটন স্পট হিসেবে এখানে আসবে দেশীবিদেশী বিনিয়োগকারী এবং ট্যুরিস্টরা। মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১৪১৪ একর জমিতে বিদ্যুত প্রকল্পটির প্রাথমিক অবকাঠামোর কাজ ৭০ভাগ এগিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিদ্যুতকেন্দ্রে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। বিদ্যুতকেন্দ্রটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য ২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়িতে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এই প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-জাইকা। বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হচ্ছে। অবশিষ্ট অর্থের যোগান দেবে কেন্দ্রটির বাস্তবায়নকারী ও স্বত্বাধিকারী সিপিজিসিবিএল। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারী সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, কোরিয়ান টেলিকম ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় ডিজিটাল আইল্যান্ড-মহেশখালী প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
×