ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের আগে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের পাঁয়তারা নয়ত?

হোল্ডিং ট্যাক্সের নামে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অর্থ আদায় হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

হোল্ডিং ট্যাক্সের নামে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অর্থ আদায় হচ্ছে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এ নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সরকার দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে ইতিবাচক ভূমিকায় রয়েছে। আর ষড়যন্ত্রকারীরা তুলে ধরছে কথিত নেতিবাচক দিকগুলো। উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষ তথা ভোটারদের বিভ্রান্ত করা। এমন পরিবেশে গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত চৌকিদারি ট্যাক্সকে গৃহকর বা হোল্ডিং ট্যাক্স নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া এখন দৃশ্যমান, যা বর্তমান সরকারের ক্ষমতার শেষ মেয়াদেও এবং আগামী নির্বাচনের আগে ভাবমূর্তিতে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাঁচ বছর আগে প্রণীত একটি গেজেটের দোহাই দিয়ে গ্রামাঞ্চলে হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকেও হোল্ডিং ট্যাক্স নামে অর্থ আদায় করা হচ্ছে কিছু এনজিওর মাধ্যমে। এই অর্থ আদায়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিছু ইউনিয়ন পরিষদ। এমন ঘটনা চলছে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার আওতার বাইরে প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদে। এই জনগোষ্ঠী গৃহকর সম্পর্কে সচেতনও নয়। তাদের মনে ভীতির পাশাপাশি চাপা ক্ষোভও সৃষ্টি হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের রশিদ বই জালিয়াতির মাধ্যমেও অর্থ আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গৃহ মালিক থেকে যে টাকা নেয়া হচ্ছে তা এক ধরনের রশিদ আর সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার রশিদে রয়েছে ভিন্নতা। অর্থাৎ মাঝখানে বড় অঙ্কের অর্থ লোপাট হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার এ ধরনের একটি ঘটনায় দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় গৃহকর আদায় করতে গিয়ে জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়ে এনজিও কর্মীরা। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অর্থ আদায়কারী ওই এনজিও কর্মীকে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তী নির্দেশনা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে প্রেরণ করা হয়। সমতলবিচ্ছিন্ন এ দ্বীপটি এমনিতেই অনগ্রসর। এই উপজেলায় সর্বোচ্চ জনবসতি দেড়লাখের কাছাকাছি। দালান কোঠার সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। অধিকাংশ মাটির তৈরি। আর কিছু রয়েছে একেবারে নি¤œস্তরের কাঁচাঘর, ছন বা পলিথিনের ছাউনিযুক্ত। কোনভাবে বসবাস করা। এই ধরনের ঘর থেকেও সর্বনি¤œ এক থেকে ৫শ’ টাকা আবার দালান কোঠা থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা আর মাঝারি গোছের ঘরগুলো থেকে ৫শ’ থেকে তদুর্ধ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে গেজেটের দোহাই দিয়ে এ ধরনের অর্থ আদায় জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে যোগাযোগ করা হয় কুতুবদিয়ার ইউএনও মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ইতোপূর্বে একবার তিনি এ ধরনের ঘটনার কথা শুনেছেন। জনকণ্ঠ প্রতিবেদকের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বার ঘটনাটি শুনলেন। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আওরঙ্গজেব মাতব্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয় সুস্পষ্ট নয়। এনজিও কর্মীর মাধ্যমে গৃহকরের নামে অর্থ আদায় নিয়মের আওতায় পড়ে না। মূলত এটি চৌকিদারি ট্যাক্স। নেয়া হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স নামে। সিটি কর্পোরেশন নয়, পৌরসভাও নয়-এমন উপজেলাগুলোতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের বিষয়টিও বিস্ময়কর বলে তিনি মত দেন। এরপর যোগাযোগ করা হয় কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল ফেরদৌসের সঙ্গে। বিষয়টি তিনি অবহিত নন বলে জানিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার কথা বলেন এবং সদর এলাকার মগডেইল থেকে গৃহকর আদায়রত এনজিও কর্মী বিপ্লব আচার্য নামে একজনকে থানায় নিয়ে যান। পরে তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সোপর্দ করেন। অভিযোগ রয়েছে, দু’মাসের জন্য গ্রাসরুট কো-অপারেশন নামের একটি এনজিও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে চুক্তি করে এলাকায় কোন ওয়ার্ডে কত বাড়ি, বাড়ির শ্রেণীভেদ, লোকসংখ্যা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ইত্যাদির তালিকা তৈরিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু এরা গৃহকরের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে এক ধরনের হুমকি দিয়ে। বলা হচ্ছে, গৃহকর না দিলে তাদের ভবিষ্যতে সরকারের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। ফলে অশিক্ষিত বা হতদরিদ্র জনগণ যে যেভাবে পারে ওই এনজিও কর্মীর হাতে তার নির্ধারিত অর্থ দিচ্ছেন। এ উপজেলায় ক’মাস আগেও একটি ওয়ার্ডে এনজিও কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে যে হোল্ডিং কর আদায়ের মাধ্যমে গৃহের নাম্বার গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। তাদের পক্ষ থেকে একটি গেজেটের কথা বলা হলেও এ ধরনের সুনির্দিষ্টভাবে অর্থ আদায় এবং এনজিও কর্মীর মাধ্যমে তা গ্রহণ নিয়ে নিশ্চিত কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। অর্থ আদায়কারী এনজিও গ্রাসরুট কো-অপারেশন প্রধানের নাম সানি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার সংস্থার কর্মীরা অর্থ আদায় করে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ তা সরকারী কোষাগারে দিচ্ছে কি দিচ্ছে না, দিলেও কী পরিমাণ দিচ্ছে তা তার জানার কথা নয়।
×