ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা আমদানি স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২১ অক্টোবর ২০১৮

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা আমদানি স্থগিত

রশিদ মামুন ॥ বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। ফলে তিন ইউনিটের বিদ্যুত কেন্দ্রের দুটি সব সময় বসিয়েই রাখতে হবে। খনি থেকে পর্যাপ্ত কয়লা না পাওয়ার পাশাপাশি আমদানির উদ্যোগ ঝুলে যাওয়ায় কেন্দ্রটির জ্বালানি সংকট স্থায়ী রূপ পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে খনির কয়লা গায়েবের ঘটনার পর বড় পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের জ্বালানি সংকটের বিষয়টি সকলের সামনে আসে। এখানে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নœয়ন বোর্ড পিডিবির তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা ৫২৪ মেগাওয়াট। যার নীট উৎপাদন ক্ষমতা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪৪ মেগাওয়াটে। কেন্দ্রটি চালাতে দৈনিক পাঁচ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন। কিন্তু বড়পুকুরিয়া খনি রোজ তিন হাজার টন কয়লা দিতে পারছে। যা দিয়ে বড়পুকুরিয়ার তৃতীয় ইউনিট যার উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৪ মেগাওয়াট সেটিই চালানো সম্ভব। অন্য দুটি ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বড়পুুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রর এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, প্রথম ইউনিটটি চালু রয়েছে। কিন্তু সেটি প্রায় বন্ধ রাখতে হয়। আর দ্বিতীয় ইউনিটটির ওভারহোলিং (সংস্কার) এর কাজ চলছে। চলতি মাসের শেষ দিকে যা শেষ হতে পারে। কিন্তু কয়লার সংস্থান না হওয়াতে দুটি ইউনিট চালানো সম্ভব হবে না। কয়লা আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের কয়লার চাহিদা এবং কেন্দ্র পুরোদমে চালানোর জন্য খনির কয়লা যথেষ্ট নয়, তা জানিয়েছি। এখন আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আমাদের নয়। আশা করছি এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। বড়পুকুরিয়া-১ এবং বড়পুকুরিয়া-২ বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়াট করে। দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা এখন কমে ৮৫ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিতভাবে যার উৎপাদন ক্ষমতা ১৭০ মেগাওয়াট। চাইলেই আমদানি সম্ভব নয় এমন কি খনির কাছ থেকে কয়লা পাওয়ার নিশ্চয়তা না পেয়েই কেন্দ্র নির্মাণ করা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। জ্বালানির সংস্থান করা কঠিন হবে জেনেও কেন বড়পুকুরিয়াতে আবার বিনিয়োগ করে তৃতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হলে তা জানতে চেয়েছে সংসদীয় কমিটি। বড়পুকুরিয়ার তিনটি ইউনিটের মধ্যে এখন ২৭৪ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট চলছে। কিন্তু পুরোদমে এই কেন্দ্রটি চালানো হচ্ছে না। শুক্রবার কেন্দ্রটি দিনে ১৪৯ মেগাওয়াট আর রাতে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করেছে। অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় ১২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত কম উৎপাদন করেছে। বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের একটি সূত্র জানায়, ১৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ দুই মাস তিন সপ্তাহ খনি থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকবে। যে কারণে খনির কয়লা পুরোটা ব্যবহার না করে কিছু কয়লা ওই সময়ের জন্য জমিয়ে রাখা হচ্ছে। ওই সময় গ্রীষ্মের শুরুতে কেন্দ্রটি না চালাতে পারলে রংপুর জোনে ভয়াবহ বিদ্যুত সংকট এবং লোভোল্টেজ জনিত সমস্যায় পড়বে গ্রাহক। যে বিষয়টি মাথায় রেখে এখন কাজ করা হচ্ছে। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির একটি সূত্র জানায়, গত জুনে কয়লাখনির উত্তোলন বন্ধ হলে আমদানির চিন্তা করা হয়। সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। কিন্তু পরে ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে সরকার। আপাতত কয়লা আমদানি করা হচ্ছে না। পরে আমদানি করা হলে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। পিডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, যে পরিমাণ কয়লা প্রয়োজন হবে তা সড়ক পথে আনা সম্ভব নয়। তাহলে রাস্তায় শুধু কয়লার ট্রাকই দেখা যাবে। আর নদী পথেও সরাসারি দিনাজপুর আসা সম্ভব নয়। রেলওয়েকে অনুরোধ করা হয়েছিল কিন্তু তারা অবকাঠামো না থাকার কথা জানিয়েছে। রেলওয়ে প্রতিদিন চেষ্টা করেও একটি রেকারের বেশি সরবরাহ করতে পারবে না। যাতে এক হাজার টনের বেশি পাওয়া যাবে না। পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, এখনও আমদানির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
×