ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানিস্তানে খরা, বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২০ অক্টোবর ২০১৮

 আফগানিস্তানে খরা, বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতের  সংখ্যা

আফগান কৃষক মুরাদ খান ইসহাকজাই জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। তিনি এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন ৮০ বছর আগে। বাসস্থান ত্যাগ করেছেন তিনি যুদ্ধের কারণে নয়, স্মরণকালের ভয়াবহ অনাবৃষ্টির কারণে। আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে কয়েক মাস ধরে চলছে তীব্র খরা। ধ্বংস হয়ে গেছে মাঠে কৃষকের ফসল, গবাদিপশু, নেই পানি সরবরাহ। এলাকা ত্যাগ করেছে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি অধিবাসী। নিজের গমের জমিতে অনেক বছর ধরে কাজ করে করে শীর্ণ ত্বক ও রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মুরাদ তাদের মধ্যে অন্যতম। গ্রামগুলোতে বৈরী পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেক পরিবার ভাড়া করা ট্রাকে শত শত কিলোমিটার পাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাদেশিক রাজধানী হেরাত শহরে পৌঁছার জন্য। তালেবান যোদ্ধা ও সরকারী সৈন্যদের মধ্যে দখল নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে এমন এলাকাগুলো অতিক্রম করতে হয়েছে তাদের। তারা এখন বাস করছে রাজধানী হেরাতের শিলাময় উপকণ্ঠে নাজুক অস্থায়ী তাঁবুগুলোতে। ইসহাকজাই বলেন, কৃষকরা ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়ে গেছে আমাদের গবাদিপশুগুলো। মরুভূমিতে আমাদের গাধাগুলো ত্যাগ করেছি। কারণ, আমরা এদের জন্য আর খাবার যোগাড় করতে পারছিলাম না। ইসহাকজাই দেশে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাদগিজে গোরামাক জেলা থেকে এখানে এসেছেন পরিবারসহ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শিবিরগুলোর অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দুর্ভোগপূর্ণ এ প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে শিবিরগুলো। কারণ গড় উচ্চ তাপমাত্রা ও তীব্র লড়াইয়ের কারণে আরও অসংখ্য মানুষ তাদের গ্রামের বাস ও জীবিকা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। অবিরাম বাতাসে উড়ে আসা ধূলোয় শিবিরের বাসিন্দাদের ত্বক ঢেকে যায়। শিশুদের পাথরশিলা ছাড়া খেলা করার অন্য কিছু নেই। শিশুরা পরিবারের জন্য ট্রাক থেকে সরবরাহকৃত পানি জগে না ভরে খেলায় মেতে ওঠে। যে সকল পুরুষ গর্বের সঙ্গে তাদের পরিবারের জন্য ভরণপোষণ যুগিয়েছে তারা এখন অলসভাবে বসে থাকে শিবিরে এবং তাদের স্ত্রীরা মাটিতে বসে রুটি তৈরি করে। মাথায় সাদা পাগড়ি পরিহিত ইসহাকজাই বলেন, আমি বাদগিজে অবস্থান করতে পারলে এখানে আসতাম না, এমনকি সমগ্র হেরাত শহরের বিনিময়েও নয়। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে অনাবৃষ্টির শিকার হয়ে পরিবার নিয়ে সাময়িকের জন্য বাসস্থান ত্যাগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি বলেন, এবারের বাড়ি ত্যাগ আমার জীবনের সবচেয়ে দুর্ভোগপূর্ণ ঘটনা। গৃহচ্যুত পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আফগান কর্মকর্তা ও বিদেশী ত্রাণগ্রুপগুলো বিস্মিত। এ সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে তারা কয়েকমাস যাবৎ শিবিরগুলোতে খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন মেটাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শীত চলে আসছে। আফগানিস্তানে জাতিসংঘ সমন্বয়ক টবি ল্যানজার বলেছেন, জরুরীভাবে আরও আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন। তিনি গত মাসে নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেন, অনাবৃষ্টি ও সংঘাতের কারণে ৫৫ লাখের বেশি মানুষের জন্য জরুরী সাহায্যের প্রয়োজন এবং এ সাহায্য যোগানে ব্যর্থ হলে আমাদের অর্জিত অর্জন নাও থাকতে পারে। আফগানিস্তানে ২২ লাখ অধিবাসী অনাবৃষ্টির শিকার হয়েছে।
×