ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন ১০১ নারী সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী। মঙ্গলবারের রাতে একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান একাত্তর জার্নালে এই মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এর পরদিন বুধবার নারী সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি। তিনি লিখেছেন, ‘একাত্তর টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান একাত্তর জার্নালে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্পর্কে আলোচনায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন যুক্ত হলে উপস্থাপকের অনুমতি নিয়ে যখন তাকে প্রশ্ন করি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলেই এই প্রশ্ন তুলছেন যে, আপনি এই ঐক্যফ্রন্টের আয়োজনে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন কি না? তখন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আমাকে ‘চরিত্রহীন‘ বলে গাল দেন। তার এই গালি শোনার পর যে প্রশ্নগুলো মাথায় আসছে: ১. আজকে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া বেঁচে থাকলে কী করতেন? ২. ১/১১-র সময়ে এর হাতে দেয়া হয়েছিল রাষ্ট্রের দায়িত্ব? ৩. এরাই করবে গণতন্ত্র উদ্ধার? যে গণতন্ত্রে প্রশ্নকারী সাংবাদিককে চরিত্রহীন গালি শুনতে হয়? ৪. আইন এক্ষেত্রে কী বলে? ৫. নারী বলেই চরিত্রহীন বলে গাল দেয়া যদি এতোটাই সহজ হয় তাহলে ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতাসীন হলে নারীর অবস্থান কী হবে এদেশে? ৬. ড. কামাল হোসেনের মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির পাশে এরকম একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তিকে কী মানায়? এদের সঙ্গে মিলে ড. কামাল হোসেন কী গণতন্ত্র দেবেন আমাদেরকে? চরিত্রহীন বলার গণতন্ত্র? ৭. রাজনীতিকে এতোটা পচিয়ে কারা নিজেদের রাজনীতির বাইরের সুশীল সমাজ বলে ১/১১-র সরকার গঠন ও তাকে সমর্থন দিয়েছিল?’ একই সঙ্গে একাত্তর জার্নালে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে ‘আপত্তিকর’ ও ‘ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক’ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)। বুধবার সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাকিবের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভির এক লাইভ আলোচনা অনুষ্ঠানে ওই সাংবাদিকের উদ্দেশে তিনি এ মন্তব্য করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা বলেন, ২০ দলীয় জোটের ঐক্যজোট থেকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) নামে দুটি দল বের হয়ে গেছে। কারণ তারা বলছে ১/১১ এর যারা কুশীলব, যারা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সে সময় মামলা করেছিল, যারা টু ফর্মূলাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে, আজ তারা বিএনপির পাশে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত মনে হয় আপনার দিকে। এ সম্পর্কে আপনি কিছু বলতে চান কি না জানতে চাইলে মইনুল হোসেন বলেন, ‘ইলেকশনের সময় আমি ছিলাম না। ২০০৭ সালের পর আমি চলে আসি। তাহলে হয়তো ইলেকশন এরকম হতো না। কিন্তু ইলেকশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ ভোট পাইলেন। এরপর আমরা হলাম কুশীলব, শেখ হাসিনা আপনারা হলেন পবিত্র লোক। এ বিষয়ে আমি আর আলোচনা করতে চাই না। পরে মইনুল হোসেনকে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন করেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আপনি যে হিসেবে উপস্থিত থাকেন-আপনি বলেছেন আপনি নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলছেন, আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে সেখানে উপস্থিত থাকেন।’ মাসুদা ভাট্টির এই প্রশ্নে রেগে গিয়ে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কানেকশনের কোন প্রশ্নই নেই। আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তা আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।’ পরে ‘শিক্ষিত ভদ্রমহিলা হিসেবে’ অন্য প্রশ্ন করার আহ্বান জানান ব্যারিস্টার মইনুল। এ সময় মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘আপনি শিবিরের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং আপনি সেই অনুষ্ঠানে বলেছেন যে আপনার সঙ্গে শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেই বক্তব্য এখন সব জায়গায় দেখানো হচ্ছে। এ কারণে মানুষ এই প্রশ্ন করছে যে আপনি জামায়াতের হয়ে এখানে উপস্থিত থাকছেন কি না।’ এর জবাবে মইনুল বলেন, ‘আমাকে বাদ দেন। আচ্ছা, ঠিক আছে আপনি কার প্রভু হিসেবে আসছেন?’ তখন মাসুদা ভাট্টি বলেন, ‘আমি কোন দলের নই, বরং সাংবাদিক হিসেবে এসেছি।’ তখন মইনুল হোসেন বলেন, ‘আজকে সাংবাদিকদের কেউ বাকশাল করে, আর কেউ বিএনপি করে। তাহলে আপনি কি করেন?’ পরে এমন প্রশ্ন বাদ রাখার আহ্বান জানান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা। পরে মাসুদা ভাট্টি তার প্রশ্নে বলেন, ‘খালেদা জিয়া আজ যে মামলায় জেল খাটছেন সে মামলাটি আপনি দায়ের করেছিলেন। আপনার সময়ে দায়ের করা হয়েছিল। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?’ এ প্রশ্নের জবাবে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আজকাল সাংবাদিকরা এমনভাবে দলীয় হয়ে গেছে যে তারা লেখাপড়া জেনে রাজনীতি করে না। আমাদের সময়ে বারবার আমি বলেছি যে দুর্নীতি দমন কমিশন আমাদের থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল।’ অনুষ্ঠানে নির্বাচনে সাত দফা দাবি দিয়ে যুক্তফ্রন্টের এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের দাবি কে মানবে, কে মানবে না এর ওপর নির্ভর করে আমরা দাবি করি নাই। আমরা চেয়েছি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সংসদীয় গণতন্ত্র ভারতসহ অন্য জায়গায় যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবে নির্বাচন হবে।’ সেই নির্বাচনে হারেন বা জেতেন সেটা বড় কথা নয় বলেও মন্তব্য করেন মইনুল হোসেন।
×