ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এবার জমজমাট লীগের প্রত্যাশা...

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

এবার জমজমাট লীগের প্রত্যাশা...

নতুন মৌসুমের ঘরোয়া ফুটবলের দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। ১১তম পেশাদার লীগকে ঘিরেই সব দল নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। বিগত কয়েক আসরে একতরফা শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে চলেছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। তবে এবার তাদেরকে টেক্কা দিতে আসছে নবাগত বসুন্ধরা কিংস, সাইফ স্পোর্টিং, শেখ রাসেল, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও জমজমাট হবে। নতুন মৌসুমে প্রথম দল হিসেবে ফুটবলারদের আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নবাগত দল বস্ন্ধুরা কিংস। ড্রাম বাজিয়ে, বিশাল গাড়িবহর নিয়ে, উৎসবমুখর পরিবেশে শনিবার বিকেলে দলবদল সেরে ফেলে তারা। তিন বিদেশীর সঙ্গে ৩০ দেশী ফুটবলারÑ মোট ৩৩ জনকে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে ক্লাবটি। এদের মধ্যে বর্তমান জাতীয় দলেরই আছেন নয় ফুটবলার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে নতুন চমক নিয়ে এসেছে বসুন্ধরা কিংস। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার তারকা ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে দলভুক্ত করেই সবচেয়ে বড় চমকটি দেখিয়েছি তারা। এ ছাড়া যোগ দিয়েছেন ব্রাজিলের ভিনিসিয়াস। থাইল্যান্ড লীগে খেলে এসেছেন ২৭ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড। কোচ হিসেবে নিয়েছে মালদ্বীপের নিউ রেডিয়েন্টের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রোজেনকে। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নেয়া হয়েছে এক যুগেরও বেশি বাফুফেতে কাজ করা বিএ জোবায়ের নিপুকে। ব্রোজেনের সহকারী হিসেবে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী কোচ মাহবুব আলম রক্সি এবং ফয়সাল মাহমুদ। স্প্যানিশ ফিটনেট ট্রেনার জাভিয়ারের সঙ্গে গোলরক্ষক কোচ হিসেবে আছেন মোহাম্মদ সেলিম। আক্রমণভাগে আছেন থাইল্যান্ড লীগ খেলা ব্রাজিলিয়ান ভিনিসিয়াসকে, যিনি সেখানকার পুলিশ থার্টিন এএফসির হয়ে ২৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৩ গোল। এশিয়ান ফুটবলার বাদে চূড়ান্ত করা হয়েছে বাকি তিন বিদেশী। পাশাপাশি দেশী ফুটবলার সংগ্রহও মন্দ নয় ক্লাবটির। রক্ষণভাগে আছেন সুশান্ত ত্রিপুরা, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, রেজাউল করিম রেজা, দিদারুল আলম, স্প্যানিশ গিওর্গি গোটর ও নুরুল নাঈম। মধ্যমাঠে আছেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া আবাহনীর ছেড়ে আসা ইমন বাবু, চট্টগ্রাম আবাহনীর মাসুক মিয়া জনি, সাইফ স্পোর্টিংয়ের মোহাম্মদ ইব্রাহিম, হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, মতিন মিয়াসহ অনেক দেশি খেলোয়াড়। পাশাপাশি ড্যানিয়েল কলিনড্রেসের সঙ্গে যোগ হবেন এশিয়ান কোটায় আরেক মিডফিল্ডার। তাতে শক্তিমত্তা আরও বাড়বে দলটির। ফরোয়ার্ড লাইনে ভিনিসিয়াসের সঙ্গী হবেন দেশী মাহবুবুর হমান সুফিল কিংবা তৌহিদুল আলম সবুজ। কদিন আগেই মালদ্বীপের নিউ রেডিয়েন্ট ক্লাবের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে (নীলফামারীতে অনুষ্ঠিত) ৪-১ গোলে জেতে নিজেদের শক্তির জানানটা ভালমতোই দিয়েছে বসুন্ধরা। ক্লাবটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান বলেন, ‘দুটি কারণে বড় বাজেটের দল গড়েছি আমরা। এক ভাল মানের কিছু বিদেশী ফুটবলার এনে মাঠে দর্শক ফেরাতে, পাশাপাশি মৌসুমে সবকটি ট্রফি জয়ের পাশাপাশি এএফসি কাপে অংশ নিতে।’ তবে নি¤œমানের রেফারিং নিয়ে বেশ শঙ্কিত ক্লাবটি। দলবদল নিয়ে পেশাদার লীগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আশা করি এবার লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এবার লীগে কোনো দলের জন্যই শিরোপা জয় সহজ হবে না। সব দলের জন্য আমার শুভ কামনা। ভাল দল গড়েও গেল কয়েক বছর সাফল্য পায়নি শেখ রাসেল। দলটি সবশেষ ২০১২-১৩ মৌসুমে পেশাদার লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়। শুধু তাই নয়, ওইবার ট্রেবল জিতেছিল দলটি। কিন্তু এরপর থেকে সঙ্গী শুধুই ব্যর্থতা। এবার সব ঝেড়ে ফেলে আবারও ট্রেবল জয়ের আশা তাদের। এ লক্ষ্যেই দল গড়েছে রাসেল। আগের মৌসুমের ১১ জন ফুটবলার ধরে রেখে বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার দলে ভিড়িয়েছে তারা। ডাগআউটে আনা হয়েছে কোচ সাইফুল বারী টিটুকে। এক মৌসুমের জন্য ৫০ লাখ টাকা পাবেন তিনি। যা বাংলাদেশের কোচদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। রাসেলের উল্লেযোগ্য ফুটবলারদের মধ্যে আছেন গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা, রাইটব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষ, সেন্টার ব্যাক ইয়াসিন খান ও মিডফিল্ডার বিপুল আহমেদ। এরা চারজনই বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলার। বিদেশীদের মধ্যে আছেন রাফায়েল অডোইন, এ্যালিসন উডোকো ও এ্যালেক্স রাফায়েল। দল নিয়ে শেখ রাসেলের ডাইরেক্টর ইনচার্জ ইসমত জামিল আকন্দ বলেন, দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে আমাদের দলটা বেশ শক্তিশালী। আমরা মনে করি আমাদের দলটা সেরা দলগুলোর একটা। শিরোপা জয়ই আমাদের লক্ষ্য। দলটির কোচ সাইফুল বারী টিটুরও একই প্রত্যাশা। তিনি বলেন, আমি সবার মুখে হাসি ফোটাতে চাই। ক্লাব কর্তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে চাই। সামনে ফেডারেশন কাপ তখনই দল নিয়ে যাচাই-বাছাই করা যাবে। আমাদের দলটা অনেক ভাল, ব্যালেন্সড। আশা করছি এই দলটিকে নিয়ে অনেক দূর যাওয়া যাবে। আমরা ট্রেবল জয়ের লক্ষ্যেই খেলব। টিটু আরও বলেন, লক্ষ্য আছে সবকটি শিরোপা। তবে আমাদের ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। প্রথমে ফেডারেশন কাপ। এরপর পেশাদার লীগ। যা সবচেয়ে কঠিন। লীগের ফেবারিট দলের কাতারে নিজেদের রেখে নবাগত বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনীকেও রেখেছেন। তবে চারজন বিদেশী খেলার সুযোগ থাকায় যে কেউ ভাল করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতবার লীগে ষষ্ঠ হয়েছিল শেখ রাসেল। দলবল সম্পন্ন করেছে মুক্তিযোদ্ধাও। আগের মৌসুমে কোনরকমে অবনমন থেকে রক্ষা পায় মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবিজড়িত দলটি। এবারও খুব বেশি ভাল দল না হলেও কোচ আব্দুল কাইয়ুম সেন্টু চমক দেয়ার আশা করছেন। দলবদল সম্পন্ন করে সাইফ স্পোটিং ক্লাব। জাতীয় দলের অধিণায়ক জামাল ভুইয়া তাদেরও অধিনায়ক। তাকে নিয়ে সমর্থকরা বাফুফে ভবনে জড়ো হন। গত মৌসুমে লীগে প্রথম নাম লিখিয়ে সব শিরোপা জয়ের ঘোষণা দিয়েছিল সাইফ পাওয়ারটেক প্রতিষ্ঠিত এ ক্লাবটি। যদিও প্রথম আসর তাদের জন্য সুখকর হয়নি। ফেডারেশন কাপ ও স্বাধনীতা কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল এবং লীগে হয়েছিল চতুর্থ। তবে প্রথম মৌসুমে তাদের বড় প্রাপ্তি ছিল এএফসি কাপে খেলা। গতবারের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে এবার ঘরোয়া ফুটবলে ভাল করার প্রত্যয় নিয়ে দল গড়েছে ক্লাবটি। নতুন মৌসুমের জন্য ৩২ ফুটবলারকে নিবন্ধন করিয়েছে তারা। এদের মধ্যে সবশেষ জাতীয় দলের খেলোয়াড় আছেন জামাল ভূঁইয়াসহ ৪ জন। অন্য তিনজন হচ্ছেন- ডিফেন্ডার রহমত মিয়া, ফরোয়ার্ড জাফর ইকবাল ও জাভেদ খান। এছাড়া চার বিদেশীই রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে ক্লাবটি। দলের সবচেয়ে বড় তারকা নিঃসন্দেহে জামাল ভূঁইয়া। ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্বও থাকছে এ ডেনমার্ক প্রবাসী মিডফিল্ডারের কাঁধে। রেজিস্ট্রেশন করতে এসে জামাল বলেন, আমাদের দলটি তারুণ্যনির্ভর। বেশি সিনিয়র খেলোয়াড় নেই। সবাই খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন। তারা সব টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। এবার বেশ কয়টি ক্লাব ভাল দল গড়েছে। এই বছর সবচেয়ে মজা হবে। এবার আমরা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইট করব আশা করি। আসাম ও কলকাতায় প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে সাইফ স্পোর্টিং। এখন তারা ফেডারেশন কাপে চোখ রেখে নিজেদের প্রস্তুত করছেন। ঢাকা আবাহনী এবারও ট্রেবল জয়ের লক্ষ্যে দল গড়েছে। তবে আবারও রেলিগেশন বাঁচানোর লক্ষ্য আরেক জনপ্রিয় মোহামেডানের। অনেকটা অনাড়ম্বরভাবেই দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। এমিলি-মিঠুন-তকলিসদের মতো স্থানীয় ফুটবলারের পাশাপাশি চার বিদেশী ফুটবলার নিয়েছে তারা। অথচ লীগ চ্যাম্পিয়ন হবেÑ এই কথাটা বলার সাহস নেই তাদের! দলীয় ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু তেমনটাই জানিয়েছেন, ‘এবার মোহামেডানের কোন লক্ষ্য নেই। তবে ফেডারেশন কাপের দু’একটা ম্যাচ দেখে তারপর একটা লক্ষ্য স্থির করব।’
×