ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যার যার বিকল্প ধারা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

যার যার বিকল্প ধারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার শুরুতেই অনৈক্যের সুর। যুক্তফ্রন্টের উদ্যোক্তা ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপিসহ চার রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নতুন এই জোটের নাম ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। এই ফ্রন্টে অন্য দলগুলোর মধ্যে গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য। বিএনপির দলীয় দফা ও লক্ষ্যের সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে ২০ দলীয় জোটে রেখেই বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু হলো। এদিকে রাতে বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসায় সংবাদ সম্মেলনে বিকল্পধারার নেতারা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন যুক্তফ্রন্ট নেতারা। জামায়াত ইস্যুতে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে না থাকার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। তবে দুই শর্ত পূরণ করলে তারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণার আগে দিনভর চলেছে নানা নাটকীয়তা। বিকল্পধারার নেতাদের বাদ দিয়ে দফায় দফায় কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে বৈঠক করেছেন যুক্তফ্রন্টের অন্য নেতারা। এতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাই বিকেল থেকেই বিকল্পধারার মাহি বি. চৌধুরী বলছিলেন, ঐক্য প্রক্রিয়া নষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জোট গঠনের প্রক্রিয়া এবং তা নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা আসে। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ড. কামাল হোসেন সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, জাফর উল্যাহ চৌধুরী, মোস্তফা মোহসীন মন্টু, জেএসডির আ স ম রব, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আ ব ম মোস্তফা আমীন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের ডাক কোন দলীয় স্বার্থে নয়, এটা জাতীয় স্বার্থে। কোটি কোটি জনগণের পক্ষ থেকে এই ডাক। এটা কোটি মানুষের উদ্যোগ। এই জোটে যুক্তফ্রন্টের দুই শরিক দলও আছে। আমি অন্যদেরও আশা করি এই ঐক্যে। আশাকরি বিকল্পধারার নেতৃবৃন্দও আসবেন। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ঘোষণা পড়ে শোনান মাহামুদুর রহমান মান্না। যিনি বি. চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টেরও সদস্য সচিব। যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ছিলেন না এই সংবাদ সম্মেলনে। এ সময় মান্না বলেন, আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই কয়েকটি সংগঠনের দীর্ঘদিনের চেষ্টার আজ সফল পরিণতি ঘোষণা করব। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্য দিয়ে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই শুরু হলো। তিনি বলেন, আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। এক দিনের ভোট কোন গণতন্ত্র নয়। আজ ফ্রন্টের যাত্রা শুরু হলো । আস্তে আস্তে আমরা কর্মসূচী ঘোষণা করব। অভিন্ন দাবি ও লক্ষ্য অর্জনে ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে ঘোষিত দফা ও লক্ষ্য এবং বিএনপির সমাবেশে ঘোষিত দলীয় দফা ও লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে মিল রেখে এসব দফা ও লক্ষ্য নির্বাচন করা হয়েছে বলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন। ঘোষিত ৭ দফা হচ্ছে ॥ ১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদাসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে। ২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। ৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। ৪. কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে। ৫. নির্বাচনের ১০ দিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে। ৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোটকেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনা স্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোন বিধিনিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে। ৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোন ধরনের নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। ঘোষিত ১১টি লক্ষ্য ॥ ১. মহান মুক্তি সংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায়ভিত্তিক, শোসনমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতার অবসান কল্পে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা। ২.৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ-যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দানের জন্য সাংবিধানিক কমিশন ও সাংবিধানিক কোর্ট গঠন করা। ৩. বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের নীতমালা প্রণয়ন ও সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা। ৪. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হাতে দমন। ৫. দেশে বিনিয়োগ ৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কোটা সংস্কার করা। ৬. সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তার বিধান করা। কৃষক, শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও পুষ্টি সরকারী অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। ৭. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ক্ষমতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা। ৮. রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক সচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। নিম্ন আয়ের মানবিক জীবন মান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা। ৯. জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোন জঙ্গীগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া। ১০. ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব-কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’-এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সৎ-প্রতিবেশী বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ১১. বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা। কামাল হোসেনের চেম্বারে দিনভর বৈঠক ॥ শনিবার গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া প্লাটফর্মে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরীকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে সকাল থেকে কয়েকদপা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বি. চৌধুরী ও মাহি বি. চৌধুরীর সঙ্গে সরকারের আঁতাত রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তাদের বিশ্বাস করা যায় না। এ কারণে তাদের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শনিবার ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে শুরু হওয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শনিবার বিকেলে বেইলি রোডের বাসায় যুক্তফ্রন্ট নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কামাল হোসেন। বাসায় তালা দেখে ফিরে যান যুক্তফ্রন্টের নেতারা। তখন মাহি বি চৌধুরী বলেন, আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বাসায় গেট খোলার মতো কেউ নেই এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। পরে কামাল হোসেনের বাসা থেকে ফিরে গিয়ে বিকল্পধারার নেতারা পৃথক বৈঠক করেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে দলটির অবস্থান তুলে ধরা হয়। বিকল্পধারার দুই শর্ত ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ( বি. চৌধুরী)। তিনি বলেন, বিকল্পধারার দুটি শর্ত পূরণ হলেই ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে বিকল্পধারা। শনিবার সন্ধ্যায় বারিধারায় নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। শর্ত দুটি প্রসঙ্গে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে ঐক্য প্রক্রিয়া চলছে তার সঙ্গে বিকল্পধারা থাকবে না। এছাড়া সংসদে ভারসাম্য এবং স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে নিজ দলের জন্য ১৫০ আসন দাবি করেন তিনি। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর জন্য বিকল্পধারা বাংলাদেশ কোন চক্রান্তে সম্পৃক্ত হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) এমএ মান্নান। বি চৌধুরীর বাসভবনে তিনি লিখিত বক্তব্যে এ ঘোষণা দেন। এ সময় বিকল্পধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরী, তার ছেলে মাহি বি চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মান্নান বলেন, আজকের পর থেকে জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির সঙ্গে কোন বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ বিকল্পধারা দেবে না। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গ ত্যাগ করে জাতীয় সংসদে ভারসাম্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাচার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় শুধুমাত্র বিএনপিকে এককভাবে ক্ষমতায় বসানোর জন্য কোন চক্রান্তে সম্পৃক্ত হবে না বিকল্প ধারা। তিনি বলেন, এ সময় বিকল্পধারার মাহি বি চৌধুরী অভিযোগ করেন, ঐক্য প্রক্রিয়া বিনষ্ট করার চক্রান্ত চলছে। ঐক্য চাইলেও না হওয়ার জন্য কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদেরই দায়ী করেছেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা আসার আধা ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, তারা যুক্ত হওয়ার পরও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন কর্মসূচী এবং বক্তব্যের বিষয়ে লুকোচুরি করা হচ্ছিল। বিকল্পধারা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমান বিএনপি যেমন ২০ দলে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে পারে তেমনই আ স ম আবদুর রব ও মাহামুদুর রহমান মান্নারও ওইটা (ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে থাকা) হচ্ছে পরকীয়া। আর এখানে (বি চৌধুরী) আসল বিয়ে। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে এটা ঠিক হয়ে যাবে। মাহি বি চৌধুরী বলেন, আমরা এখনও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে সরে যাইনি। তারা (ড. কামাল, রব ও মান্না) বাদ দিলে তা ঘোষণা দিতে হবে। বিকল্পধারার নেতা বহিষ্কার ॥ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের সহ-সভাপতি শাহ আলম বাদলকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাদলের নেতৃত্বে বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই অভিযোগে দলটির কৃসম্পাদক জানে আলম হাওলাদারকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। দলরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাদের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বষ্কার করা হ। শনিবার বিকেলে বারিধারায় বি. চৌধুরীর বাসায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের এক বৈঠকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে দলের মহাসচিব মেজর (অব) মান্নান, মাহি বি চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব) আবদুল মান্নান বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৫ এর ৫: ২ গ ধারায় শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা অনুযায়ী তাদের প্রাথসদস্যপদসহ দলের সব পদ স্থকরা হয়। আজ তাদের দুইজনকে চূড়ান্তভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হলো।
×