ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাফিক আইন না মানার কারণেই দুর্ঘটনা কমছে না ॥ ডিএমপি কমিশনার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ অক্টোবর ২০১৮

ট্রাফিক আইন না মানার কারণেই দুর্ঘটনা কমছে না ॥ ডিএমপি কমিশনার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মহানগর কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা ঢাকা শহরের বার্নিং ইস্যু। ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা আশানুরূপ কমছে না। চালকের অসতর্কতা, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, অদক্ষতা, পেশাদারিত্বের অভাবের পাশাপাশি পথচারীদের জেব্রাক্রসিং-ফুটওভার, আন্ডারপাস ব্যবহারে অনীহা, অবকাঠামোগত অপর্যাপ্ততা, নাগরিক দায়িত্ববোধের অভাবে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। নিরাপদ সড়কের জন্য সবার আইন মানার সংস্কৃতি ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন। শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়াসংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে মক স্পীকার ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এ্যান্ড টেকনোলজি বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী বিতর্কিতদের সার্টিফিকেট ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মঈনুল আলম, ফ্রী-ল্যান্স সাংবাদিক জাহিদ রহমান, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম মোরশেদ, ড. তাজুল ইসলাম তুহিন এবং সাংবাদিক আহমেদ সারোয়ার। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে এখনও পুলিশ হাত উঁচিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। মানসম্পন্ন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা প্রয়োজন। অথচ আমাদের দেশের শহরগুলোতে ৮ শতাংশের বেশি রাস্তা নেই। যে কারণে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে না। তিনি আরও উল্লেখ করেন বাংলাদেশে চালকদের লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া এখনও পুরোপুরি আধুনিকায়ন সম্ভব হয়নি। নেই কোন আধুনিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটও। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন হলো। এরপর আমরা ১০ দিনব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করেছি। গত সেপ্টেম্বর জুড়ে রাজধানীতে ট্রাফিক সচেতনতা মাস পালন করেছি। সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের যথেষ্ট আন্তরিকতা আছে। ট্রাফিক ব্যবস্থায় আমাদের সফলতা আছে। তারপরও সড়ক দুর্ঘটনা আশানুরূপ কমছে না কেন? তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালকদের ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু একমাত্র চালকদের সচেতনতায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। যাত্রী-পথচারীদের সচেতনতাও প্রয়োজন। ভৌত কাঠামো একটি বড় বিষয়। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনির যে স্থানে দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন সে স্থানটি ছিল দেশের অন্যতম দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। কারণ সড়কের ওই স্থানটিতে বাঁক থাকার কারণে অপর পাশের যানবাহন দেখা যেত না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের হাইওয়েকে সাধারণত আঞ্চলিক সড়ক বলা যায়। কারণ একই সড়কে দূরপাল্লার যানবাহন যেমন চলে সেই সড়কেই নসিমন, করিমন, ভটভটি লক্কর-ঝক্কর যান চলাচল করে। একই সড়কে ৮০ কিলোমিটার গতির যানবাহন চলে আবার ৫ কিলোমিটার গতিরও যানবাহন চলে। এটিও মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। কিন্তু ওভারটেকিংয়ের কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটে সেখানে চালকের অসচেতনতা, নির্বুদ্ধিতা ও অদক্ষতাই দায়ী। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও আইন না মানার প্রবণতার ফলে সব চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আইন না মানার মানসিকতা। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, প্রত্যেকটি সড়ক দুর্ঘটনা একটি পরিবারকে ছিন্নভিন্ন, অসহায় করে তুলছে। অপরিকল্পিত সড়ক-মহাসড়ক, মহাসড়কের ওপর হাটবাজার ও চাঁদা তোলার নামে হুটহাট গাড়ি থামানো, হাইওয়েতে ধীরগতির গাড়ি নসিমন-করিমন, ভটভটির অবাধ চলাচল, আইন প্রয়োগকারী কিছু ব্যক্তির অনৈতিকতা, লাইসেন্সবিহীন চালক দ্বারা গাড়ি চালানো, অননুমোদিত ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, পথচারীদের অসতর্ক চলাফেরাÑ সর্বোপরি চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে।
×