ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমানে অবৈধ পথে বিদেশ থেকে আমদানি করছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট

নিয়ন্ত্রিত পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে ড্রোন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৭ অক্টোবর ২০১৮

নিয়ন্ত্রিত পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে ড্রোন

এম শাহজাহান ॥ আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ড্রোনকে নিয়ন্ত্রিত পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। নীতিমালা না থাকায় আপাতত কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ড্রোন আমদানির অনুমতি দিচ্ছে না সরকার। তবে ড্রোনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে শক্তিশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র বিদেশ থেকে অবৈধপথে ড্রোন নিয়ে আসছে। এসব ড্রোন জঙ্গী তৎপরতাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে ব্যবহার হওয়ায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই বাস্তবতায় ড্রোন উড্ডয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, মানুষবিহীন উড়ুক্কুযান বা ড্রোনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কিছু ব্যবসায়ী বৈধপথেই ড্রোন আমদানির জন্য আবেদন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। প্রতিদিনই এ সংক্রান্ত আবেদন আসায় টনক নড়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। গত কয়েক মাসে ড্রোন আমদানির জন্য কয়েকশ’ আবেদন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে। এ কারণে ড্রোন আমদানির বিষয়ে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ড্রোনকে নিয়ন্ত্রিত পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ২০১৮-২১ সালের জন্য যে আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে, তাতে ড্রোন আমদানিকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে রাষ্ট্রীয় বা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজন হলে সরকারী তিন সংস্থা-বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়ে ড্রোন আমদানি করতে পারবে যে কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান। কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ড্রোন আমদানি, কোথায় কিভাবে এবং কি কাজের জন্য উড্ডয়ন করতে পারবে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে উড্ডয়ন নীতিমালা তৈরি করছে বেবিচক। জানা গেছে, খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি নীতিমালায় নিয়ন্ত্রিত পণ্য হিসেবে ড্রোন তালিকাভুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উইংয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব প্রাণেশ রঞ্জন সূত্রধর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ড্রোনের চাহিদা দেশে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমদানির অনুমতি চেয়ে শতাধিক আবেদন এসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে। কিন্তু দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা সাপেক্ষে এখন কোন ধরনের ড্রোন আমদানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এমনকি খেলনা ড্রোন আমদানিও নিষিদ্ধ। তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের জন্য যে আমদানি নীতিমালা করা হচ্ছে, তাতে ড্রোন আমদানির কোন সুযোগ রাখা হচ্ছে না। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে উড্ডয়ন নীতিমালার ওপর। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের করা ওই নীতিমালায় যদি আমদানির কোন সুযোগ রাখা হয় তবেই এসব পণ্য বিদেশ থেকে আনা যাবে। আর সরকারী বা রাষ্ট্রীয় কাজে প্রয়োজন হলে তিনটি সংস্থার ছাড়পত্রে ড্রোন আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, ভূমি জরিপ, ওপর থেকে নিচের ছবি তোলা, চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজে ড্রোনের ব্যবহার বিশ্বে বাড়ছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। কিন্তু এ সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির ব্যাপারে কোন অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আমদানির অনুমতি না থাকায় দেশে অবৈধপথে প্রতিদিন ড্রোন আনা হচ্ছে। ড্রোন আনা ও তা বিক্রি করার জন্য অভ্যন্তরীণ মার্কেটে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে আটক ড্রোনের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একাধিক গোয়েন্দা সদস্য ইতোপূর্বে কাস্টম হাউসে সংশ্লিষ্ট শুল্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তারা এখন উদ্বিগ্ন। তবে ২০১২-১৫ এবং ২০১৫-১৮ তে ড্রোন আমদানির বিষয়ে কোন নির্দেশনা না থাকলেও দেশে কেন এবং কি কাজে ব্যবহারের জন্য ড্রোন আমদানি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ইতোপূর্বে পদ্মা সেতুর কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ ড্রোন ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া অন্যান্য দেশে ভূমি জরিপের ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করা হয়। তবে দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করছেন। সিলেটে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রোন উড়িয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত বছর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতর (আইএসপিআর) এ সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল ড্রোন বা রিমোট কন্ট্রোল চালিত বিমান বা হেলিকপ্টার উড্ডয়ন সক্ষমতা নিরীক্ষণের লক্ষ্যে কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই পরীক্ষামূলকভাবে উড্ডয়ন করা হচ্ছে, যা উড্ডয়ন নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিস্বরূপ। তাই নির্ধারিত আকাশপথগুলো ছাড়া অন্যান্য স্থানে যে কোন ধরনের বিমান (বেসামরিক, সামরিক ড্রোন, রিমোট কন্ট্রোল-চালিত হালকা বিমান-হেলিকপ্টার) উড্ডয়নের জন্য বিমানবাহিনী কর্তৃক মতামত ও পূর্ব অনুমোদন প্রয়োজন। জানা গেছে, অবৈধভাবে এখন পর্যন্ত কতগুলো ড্রোন দেশে আনা হয়েছে কিংবা এগুলোর মালিক কারা এমন কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থার কাছে। এ কারণে ড্রোনের রেজিস্ট্রেশন ও এর অপারেটরদের লাইসেন্সিংয়ের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। এ লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এদিকে বর্তমানে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির রেগুলেশন ফর অপারেটিং রিমোটলি পাইলট এয়ারক্রাফট সিস্টেম (আরপিএএস) নামে একটি নীতিমালা রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আঠারো বছরের কম বয়সী কেউ ড্রোন উড্ডয়নের অনুমতি পাবে না। মদপানের ৮ ঘণ্টার মধ্যে কেউ ড্রোন ওড়াতে পারবেন না। ড্রোনটি কোন ক্ষতিসাধন করলে তার দায় ড্রোনের অপারেটরকে বহন করতে হবে। ড্রোন যে স্থানে ওড়ানো হবে সে এলাকার ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া ভূমি থেকে ২০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় ড্রোন ওড়ানো যাবে না। যে কোন বিমানবন্দরের ১০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ড্রোন ওড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
×