ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৬ অক্টোবর ২০১৮

  ভুটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

জাহিদুল আলম জয় ॥ প্রথমবারের মতো আয়োজিত সাফ অনুর্ধ-১৮ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার রাতে সেমিফাইনালে স্বাগতিক ভুটানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে গোল করেন সানজিদা আক্তার, মিশরাত জাহান মৌসুমী, কৃষ্ণা রানী সরকার ও শামছুন্নাহার সিনিয়র। এর আগে প্রথম সেমিফাইনালে অন্যতম ফেবারিট ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট পেয়েছে নেপাল। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। এখন রবিবার শিরোপা লড়াইয়ে নেপালের তরুণীদের বিরুদ্ধে লড়বে বাংলাদেশের মেয়েরা। এই নেপালকেই গ্রুপপর্বে ২-১ গোলে হারিয়ে সেরা হয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই একই প্রতিপক্ষ হওয়ায় ফাইনালে স্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে খেলবে বাংলাদেশ। শেষ চার থেকে ভারতের বিদায়ে প্রতিশোধ নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হলো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যদের। কেননা এই একই ভেন্যুতে মাস দেড়েক আগে অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলার কিশোরীরা। ওই দলের একঝাঁক খেলোয়াড় এই দলেও খেলছেন। যে কারণে প্রতিশোধের স্পৃহাও কাজ করছিল সবার মনে। কিন্তু ভারতের বিদায়ে সেই সুযোগ আর পেলেন না মারিয়া, তহুরা, সানজিদারা। স্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামে বাংলাদেশ। তবে স্বাগতিক হওয়ায় ভুটানকে সমীহ করেই মিশন শুরু করে ছোটনের শিষ্যরা। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে স্বাগতিকদের পাত্তাই দেয়নি স্বপ্না, মৌসুমী, তহুরারা। পুরো ম্যাচে দাপটের সঙ্গে খেলে ফাইনাল নিশ্চিত করে তারা। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই সংঘবদ্ধ আক্রমণে এগিয়ে যায় অতিথি বাংলাদেশ। গোল করেন সানজিদা আক্তার। ডিফেন্ডার আঁখির লম্বা পাস ধরে ডানপ্রান্ত দিয়ে বক্সের সামনে থেকে সানজিদার উঁচু কৌনিক শট গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়ায় (১-০)। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে (৪৮ মিনিট) ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলার বাঘিনীরা। কর্নার থেকে বক্সের মধ্যে সৃষ্ট জটলা থেকে পাওয়া বল জালে পাঠান তারকা মিডফিল্ডার ও অধিনায়ক মিশরাত জাহান মৌসুমী (২-০)। বিরতির পর প্রাধান্য ধরে রেখে খেলে বাংলার মেয়েরা। ফলশ্রুতিতে ৬০ মিনিটে কৃষ্ণা রানী সরকার বাংলাদেশকে ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন। এই গোলের পর অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের ফাইনাল খেলা। ম্যাচ শেষের চার মিনিট আগে ভুটানের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন শামছুন্নাহার সিনিয়র। ম্যাচের আগে বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেছিলেন, শুধু ভুটান নয়, আমরা প্রতিটি দলকেই সমান শক্তিশালী মনে করি। মাঠে নেমে সেভাবেই আমরা খেলব। প্রতিটি ম্যাচে আমরা যেভাবে খেলি, সেমিতে সেই খেলাটা ধরে রাখতে পারলেই আশাকরি আমরা ফাইনালে উঠতে পারব। ফাইনাল নিশ্চিতের পরও প্রায় অভিন্ন কথা ছোটনের। বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ধাপে ধাপে এগোনো। প্রায় সব লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এখন আমাদের মিশন ফাইনাল। এটা কিভাবে সফলতার সঙ্গে উতরানো যায় এটাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। মজার ব্যাপার, গত আগস্টে এই ভেন্যুতেই অনুর্ধ-১৫ আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেবার সেমিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল এই ভুটানই। সেবার বাংলার কিশোরীদের কাছে উড়ে যাওয়া ভুটানীরা এবারও পাত্তা পায়নি বাংলার বাঘিনীদের কাছে। এই ম্যাচকে সামনে রেখে ফুরফুরে মেজাজে ছিল খেলোয়াড়রা। ভুটানের পারফর্মেন্স নিয়ে রিভিউ মিটিং করে বাংলাদেশ। তার আগে সকালে প্রাতভ্রমণে বের হয় পুরো দল। করে স্ট্রেচিং সেশন। নেপালের বিপক্ষের ম্যাচে ইনজুরিতে পড়া খেলোয়াড়দের অবস্থা দেখভাল করেন কোচিং স্টাফরা। এরপর জিমে কন্ডিশনিং ও রিকভারি সেশন চলে। কোচিং স্টাফরা কয়েকজন খেলোয়াড়ের জন্য হাল্কা ডেভেলপমেন্ট সেশন আয়োজন করেন। এরপর পুরো টিম স্থানীয় শহরে শপিংয়ে যায়। এভাবে খোশ মেজাজে থেকেই সেমির যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় বাংলার মেয়েরা। সেই যুদ্ধ বীরের বেশে জিতে বাংলাদেশের সোনার মেয়েরা এখন স্বপ্নের ফাইনালে।
×