স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার আইনী মুখোশে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূল করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে কোটা বাতিল নিয়ে সরকারের দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে তার বাস্তবায়ন হবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা কখনও কোটা বাতিল চায়নি, তারপরেও সিদ্ধান্ত হয়েছে কোটা তুলে নেয়ার। আবার এদিকে ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-নাতনিদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে আন্দোলনে। উপজাতীয়দের আন্দোলনে নামিয়ে দেয়া হয়েছে- এটা দ্বিচারিতা। উদ্দেশ্য এই যে, কোটা সংস্কারের আন্দোলন তারা বাস্তবায়িত হতে দেবে না। কোটা বহাল রাখার দাবিতে শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততিদের প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন আন্দোলন কর।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, উনি কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারে এত উৎসাহী? কেন পুলিশকে লাগামছাড়া লাইসেন্স দিয়েছেন পত্রিকা অফিসে ঢুকে কাগজপত্র সিজ করার এবং গ্রেফতার করার। অন্য গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের কোন দৃষ্টান্ত নেই।
রিজভী বলেন, কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে আইনী মুখোশে সর্বনাশা চক্রান্তের খেলা খেলছে, তা কারও অগোচরে নেই। এই সরকারের সঙ্গে আপোস করা মানে মানুষের জীবনের সঙ্গে আপোস করা।
রিজভী বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ অন্য নেতারা ও সরকারের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ন্যায়বিচার পাবেন কি না, সেটি নিয়ে জনগণের প্রশ্ন এখন দীর্ঘতর হচ্ছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেই বলেছেন, যে দেশে প্রধান বিচারপতিই ন্যায়বিচার পান না, সেদেশে সাধারণ মানুষ কীভাবে ন্যায়বিচার পাবে? তিনি বলেন, মুফতি হান্নানকে নির্যাতন করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সরকার তারেক রহমানের নাম জড়ানোর চেষ্টা করছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় কয়েক দফা চার্জশীট দেয়া এবং বিচার কার্য অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার পর বিচারিক আদালত থেকে চার্জশীট ফিরিয়ে এনে সম্পূরক চার্জশীট দেয়া হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। যা ছিল বেআইনী ও নজীরবিহীন।
রিজভী বলেন, সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের ধড় থেকে মু-ু খসিয়ে ফেলার নীতিতে রয়েছে। তাই বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন প্রতিনিয়ত হামলা-মামলার শিকার। কোন কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে দেশকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে সরকার। কোন জায়গায়ই তিনজন নেতাকর্মী একসঙ্গে চলাফেরা করতে পারছেন না। বাসাবাড়ি তছনছ করে চিরুনি তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
রিজভী বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার ও আটক নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ ৭ দফা এবং সুশাসনের অঙ্গীকার সম্বলিত ১২ দফা লক্ষ্যসহ একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকদের কাছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপি প্রদানকালে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে। এতে ঠাকুরগাঁওয়ে ৩০ জনও মুন্সীগঞ্জে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৭ জন, মুন্সীগঞ্জে ১০ জন এবং ফেনীতে একজন জনকে গ্রেফতার করা হয়। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করছি।
রিজভী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোন কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় দেশকে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন প্রতিনিয়ত হামলা-মামলার শিকার। ক্রমাগত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ির সামনে রাতের অন্ধকারে এসে থামে কালো মাইক্রোবাস। কর্কশ কড়া নাড়ার শব্দে ভেঙ্গে চুরে খান খান হয়ে যায় রাতের নিস্তব্ধতা। তুলে নিয়ে যায় কিশোর, তরুণ, ছাত্রদল, যুবদল এবং অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এমনকি বয়স্ক বিএনপি নেতাকর্র্মীদেরও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর খাল, বিল ও নদীধারে মাইক্রো থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। কখনও কখনও কিছুদিনের জন্য, নয়তো চিরদিনের জন্য গুম করে অদৃশ্য করা হচ্ছে।