ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাওসকে হারিয়ে সেমির সম্ভাবনা উজ্জ্বল বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২ অক্টোবর ২০১৮

লাওসকে হারিয়ে সেমির সম্ভাবনা উজ্জ্বল বাংলাদেশের

রুমেল খান, সিলেট থেকে ॥ ‘জয় বাংলাদেশ! বাংলাদেশের জয়! জিতেছে রে জিতেছে, বাংলাদেশ জিতেছে! ... এ রকম অসংখ্য স্লোগানে সোমবার মুখরিত হয়ে উঠেছিল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। উল্লসিত হাজার বিশেক দর্শকের অধিকাংশের হাতেই মোবাইল ফোনের অন করা ফ্লাশলাইট যেন সৃষ্টি করেছিল মায়াবী এক পরিবেশের। সুরমাবাসীর এই আবেগকে বৃথা যেতে দেননি ‘লোকাল বয়’ বিপলু আহমেদ। ম্যাচের ৬০ মিনিটে তার দেয়া গোলেই হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছে আসিয়ান অঞ্চলের ফুটবল-শক্তি লাওসকে। সিলেটের মাটিতে এটাই হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ঐতিহাসিক ‘প্রথম’ জয়! এই জয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে ‘বি’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। আর এই ম্যাচটি দিয়েই সোমবার পর্দা উঠল পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত আসরটির। যার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। মাঠের চারদিকে ডিজিটাল সাইনবোর্ডের অনুপম প্রদর্শনীÑ সিলেট দিয়েই শুরু হলো। বাংলাদেশের পরের গ্রুপ ম্যাচ ৫ অক্টোবর, প্রতিপক্ষ ফিলিপিন্স। তবে ৩ অক্টোবর ফিলিপিন্স-লাওস ম্যাচের পরেই বোঝা যাবে বাংলাদেশ দল সেমিতে নাম লেখানো নিশ্চিত করতে পারবে কি না। ওই ম্যাচে যদি ফিলিপিন্স জেতে বা লাওস হারে, তাহলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সেমিতে চলে যাবে স্বাগতিক দল। সেক্ষেত্রে ৫ অক্টোবরের ম্যাচটি হবে গ্রুপসেরা নির্ধারণী ম্যাচ। সোমবারের ম্যাচে বল নিয়ন্ত্রণে (৪৮%-৫২%) এবং আক্রমণ রচনায় পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আসল যে কাজটি, সেটিই ঠিকঠাক করে বাজিমাত করে তারা। তৃতীয়বারের চেষ্টায় অবশেষে লাওস-বধে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ২-১ গোলে, ২০০৩ সালে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ড্র করে ২-২ গোলে, এ বছরের মার্চে। ‘সেমিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মনে হচ্ছে ম্যাচটি খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’ ম্যাচের আগেরদিন ১৯৩ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ দলের কোচ জেমি ডের এই মন্তব্য অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে। খেলায় জিতলেও বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে জেমির শিষ্যদের। গোলের একাধিক সুযোগ নষ্ট না করলে গোলের সংখ্যা বাড়াতে পারত তারা। একই কথা প্রযোজ্য ১৭৯ র‌্যাঙ্কিংধারী লাওসের ক্ষেত্রেও। দুই দলই খেলেছে গতিশীল ও আক্রমণাত্মক ফুটবল। ফলে ম্যাচটি হয়ে ওঠে যথেষ্ট আক্রমণাত্মক। তবে গোল করার পর বাকি ৩৪ মিনিট পর্যন্ত যথেষ্ট টেনশনে ছিলেন সিলেটের দর্শকরা। কারণ লাওস ছেঁকে ধরেছিল। একের পার এক আক্রমণ, কর্নার, সেটপিস ... ভয়ের শিহরণ ধরানোর জন্য যা যথেষ্ট। শেষ পর্যন্ত ওমানি রেফারি মাহমুদ সেলিমের খেলা শেষের বাঁশির পর সবার শঙ্কা পরিণত হয়েছে পরম স্বস্তিতে! আগের দিন অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য সেমিফাইনালে নাম লেখানো।’ সোমবার লাওসকে হারিয়ে সেই লক্ষ্য পূরণে অনেকটাই এগিয়ে গেল তারা। সাদ উদ্দিন এবং আতিকুর রহমান ফাহাদ দলে নেই চোটের কারণে। তাদেরকে মিস করছেন বলে জানিয়েছিলে জামাল। তবে লাওসকে হারানোর পর মনে হচ্ছে তাদের মোটেও মিস করেনি লাল-সবুজরা। সেট পিস থেকে গোল খাওয়া পুরনো অভ্যাস বাংলাদেশ দলের। এ নিয়ে জোর অনুশীলন করার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ দল। লাওসের কাছে গোল হজম না করে সে কথার সত্যতা কিছুটা হলেও প্রমাণ করেছে তারা। চায়ের নগরী খ্যাত সিলেটে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। উচ্ছ্বাসটা তো বাঁধাভাঙ্গা হওয়ারই কথা। বাংলাদেশের জয়ের পর সেটা হয়েছেও। ৫ অক্টোবর ফিলিপিন্সের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে খেলবেন জামাল ভূইয়ারা। জাতির পিতার নামের এ টুর্নামেন্টের কো-স্পন্সর হা-মীম গ্রুপ। এর আগে বেলুন উড়িয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ম্যাচের বিরতির পরই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেটা লোকালবয় বিপলুর বদৌলতে। এই স্টেডিয়ামে খেলেই যার ফুটবলার হওয়া। ম্যাচের ৬০ মিনিটে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ে জীবন শট নেন। তা প্রথমে ফেরান লাওস গোলরক্ষক। তখন ডান প্রান্ত দিয়ে উঠে আসা বিপলু আহমেদের ক্রসে জীবনের হেড আবার গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এরপর একেবারে পোস্টের কাছে বল পেয়ে বিপলুর ডান পায়ে নিচু-কোনাকুনি শট গোলরক্ষকের পায়ে লেগে ঢুকে যায় জালে (১-০)। উল্লাসে ফেটে পড়ে দর্শকরা। শেষ পর্যন্ত এই গোলেই জিতে তিন পয়েন্ট ও অনাবিল চিত্তসুখ নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল।
×