ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবায়নের তারিখ বার বার পেছাচ্ছে

ঢাকা ওয়াসার তেঁতুলঝরা ভাকুর্তা প্রকল্প আজও আলোর মুখ দেখল না

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২ অক্টোবর ২০১৮

ঢাকা ওয়াসার তেঁতুলঝরা ভাকুর্তা প্রকল্প আজও আলোর মুখ দেখল না

ফিরোজ মান্না ॥ তেঁতুলঝরা-ভাকুর্তা ওয়েল ফিল্ড নির্মাণ প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। প্রকল্পটি গত বছরের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় প্রকল্পের মাত্র ৭৫ ভাগ শেষ হয়। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের তারিখ ঘোষণা করা হয় এ বছরের মার্চে। মার্চেও কাজ শেষ করতে পারেনি ওয়াসা। সরজমিনে সাংবাদিকদের নিয়ে নতুন তারিখ জানানো হয় এ বছরের জুন মাসে। সর্বশেষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে এ বছরের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। অভিযোগ উঠেছে, চার দফা তারিখ বদল করে ওয়াসার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৫শ’ ৭৩ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় প্রায় ১শ’ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকার মিরপুরে প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করার কথা রয়েছে। ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার মিরপুরে দীর্ঘকাল ধরে পানি সরবরাহ সমস্যা দূর করতে ঢাকা ওয়াসা ২০১২ সালের জুলাই মাসে ‘তেঁতুলঝরা-ভাকুর্তা ওয়েল ফিল্ড নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মে মাসে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় সীমা ছিল ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। পরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা বলা হয় ২০১৮ সালের মার্চে। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে প্রকল্পের পিডি নূরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোন কথা বলেননি। জানা গেছে, শুরুতে প্রকল্পটিতে দক্ষিণ কোরিয়া ৩৬২ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা সহযোগিতা দিয়েছে। বাকি ২শ’ ১৫ কোটি টাকা সরকার ও ওয়াসা বহন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে। এতে ঢাকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পানি সমস্যা দূর হবে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগায় প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এখন বাড়তি টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হচ্ছে। ওয়াসার এমন ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, যার কোনটিই নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এই ১৭ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে ২১ হাজার কোটিতে গিয়ে ঠেকেছে। গত বছরের শেষদিকে তেঁতুলঝরা-ভাকুর্তা প্রকল্পটি সরজমিনে সাংবাদিকদের পরিদর্শনে নিয়ে যায় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প এলাকায় সাংবাদিকদের ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি তখন বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মিরপুর এলাকার পানি সমস্যা দূর হবে। এ সময় প্রকল্প পরিচালক নূরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। হানকুক ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টের টিম লিডার ইয়োং বে ক্যাং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ অগ্রগতি অবহিত করেন। ওয়াসা জানিয়েছে, এই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি রাজধানীর গোটা মিরপুর এলাকায় সরবরাহ করা হবে। মোট ৪৬টি গভীর নলকূপ থেকে ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দেয়ার জন্য পাইপলাইন স্থাপনের কাজও করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে দুটি আয়রন রিমুভাল প্লান্ট, একটি ওভার গ্রাউন্ড রিজার্ভার, ক্লোরিন বিল্ডিং এবং ৪২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। মোট ৭ দশমিক ৮১ হেক্টর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাওয়ার নানা কারণ রয়েছে। মূল কারণ হচ্ছে ইচ্ছেকৃতভাবে প্রকল্পে ব্যয় বাড়িয়ে নয়-ছয় করা। আবার কিছু টেকনিক্যাল কারণও থাকে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাওয়ার। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য। এখানে রাজনৈতিক প্রভাবও থাকে। তেঁতুলঝরা-ভাকুর্তা প্রকল্পটিরও একই অবস্থা।
×