ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২ অক্টোবর ২০১৮

ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগকবলিত দেশ। প্যাসিফিকের ‘রিং অফ ফায়ারে’ অবস্থিত দেশটি। এখানে বিশ্বের বড় বড় ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। বলা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ ইন্দোনেশিয়া। বিশেষ করে ভূমিকম্প ও সুনামির সঙ্গে যেন দেশটির নিত্যবসবাস। শুক্রবার দেশটির পালু শহরে প্রথমে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও পরে সুনামির আঘাতে ১২ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। জানা যায়, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামি হয়। সুনামিতে সৃষ্ট প্রায় ২০ ফুট উঁচু ঢেউ পালু শহরকে ভাসিয়ে দেয়। ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে হাজারো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিদ্যুতব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে। ভূমিধসে শহরের প্রধান সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। খোলা আকাশের নিচে লোকজন অবস্থান নিয়েছে। হাসপাতালের বাইরে তাঁবু গেড়ে আহত লোকজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের ভাষ্য, প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষয়ক্ষতির কথা যতটা ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি। পর্যটকদের কাছে প্রিয় সুলাওয়েসি দ্বীপের সৈকতে শত শত মানুষ শহরের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘বিচ ফেস্টিভালের’ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার আগেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় দ্বীপটি। উঁচু ঢেউ যখন উপকূলে আঘাত হানে তখন বিচ ফেস্টিভাল উপলক্ষে অনেকেই সৈকতে জড়ো হয়েছিলেন। তাদের বেশিরভাগই প্রাণ হারিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কেউ কেউ উঁচু গাছে চড়ে নিজেদের জীবন বাঁচিয়েছেন। শনিবার সকালেও ভূমিকম্পে একাধিকবার কেঁপে ওঠে দ্বীপটি। গত মাসে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে লম্বক দ্বীপে অন্তত ৫৩৫ জন প্রাণ হারান। আহত হন অন্তত সাড়ে ১৩শ’ মানুষ। এর সপ্তাহখানেক আগে ২৯ জুলাই এই দ্বীপেই আঘাত হানে আরেকটি ৬ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে ২০ জনের মৃত্যু হয়। দুটি ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে প্রায় চার লাখ মানুষ। ২০০৪ সালে দেশটি সবচেয়ে বড় দুর্যোগের কবলে পড়ে। ওই বছর সুমাত্রায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামিতে ১ লাখ ৬৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ভৌগোলিক কারণে নানা ধরনের ভূমিকম্প ও সুনামির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্বের বহু দেশের নিত্যসঙ্গী। বাংলাদেশেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। প্রকৃতি তার রুদ্র রূপের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর। নদীভাঙ্গন, বন্যা, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির মতো নিষ্ঠুর প্রাকৃতিক ঘটনা কেড়ে নেয় সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, সহায় সম্পত্তি। নিঃস্ব করে কত শত মানুষকে। মাঠ হয় ফসল শূন্য। অগণিত গবাদি পশুর মৃত্যু হয়। তবে ভূমিকম্পের বিষয়টি এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবকুল তথা প্রাণিকুলের জন্য একটা বড় ধরনের অভিশাপ। এ অভিশাপ থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে বিশ্বজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আগাম সতর্কবার্তা, দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতির প্রশমন, দুর্যোগের পর পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন, দুর্যোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতে যাতে দুর্যোগ না ঘটে সেজন্য অবকাঠামোগত ও সামাজিক উন্নয়নের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। যেহেতু প্রকৃতিসৃষ্ট নানারকম দুর্যোগ শতভাগ দূরীভূত করা সম্ভব নয়, সেহেতু সতর্কতা ও সচেতনতায় ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
×