ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব বাণিজ্যে শ্লথগতি

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২ অক্টোবর ২০১৮

বিশ্ব বাণিজ্যে শ্লথগতি

বিশ্ব বাণিজ্যের গতি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। গত এপ্রিলের প্রতিবেদনে সংস্থাটি বিশ্ব বাণিজ্যের গতি ৪ দশমিক ৪ শতাংশের পূর্বাভাস দিয়েছিল। সেপ্টেম্বরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে সেই পূর্বাভাস কমিয়ে করা হয়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এর জন্য কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছে ডব্লিউটিও। অন্যতম কারণ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, মুদ্রামানের অস্থিরতা, উন্নত বিশ্বের সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি, সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা, অসন্তোষ, যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদি। এসব কারণে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। বিশ্ব বাণিজ্যে কিছু অনিশ্চয়তা সৃষ্টির ফলে সংস্থাটি বলছে, সার্বিকভাবে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ধীর গতিতে এগোচ্ছে। সমূহ ঝুঁকির কথাও বিবেচনা করছে। উদাহরণত, সম্প্রতি চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের কথা উল্লেখ করা যায়। দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বভাবতই অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নীতি-নির্ধারক ও বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে। এর পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা-অস্থিরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে উত্তেজনা কমলেও ইরানের ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে উত্তেজনা বেড়েছে অনেকাংশে। ইরাক-সিরিয়া, ইসরাইলে-সৌদি আরব-কাতার-ইয়েমেন-লিবিয়া-জর্দান-লেবাননসহ প্রায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে চরম উত্তেজনা, অনেক ক্ষেত্রে যুদ্ধাবস্থাসহ প্রবল অর্থনৈতিক টানাপোড়েন। রাশিয়ার অর্থনৈতিক উত্থানও কম ভীতিকর নয়। ব্রেক্সিটসহ শরণার্থীদের চাপে ইউরোপের অবস্থাও যে ভাল, এমন কথা বলা যাবে না। ডব্লিউটিওর মতে, সব মিলিয়ে আমদানি-রফতানিসহ বিশ্ব বাণিজ্যের আকার বাড়লেও জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সিদ্ধান্তকে মন্থর করে দেয়। সে তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ভাল। সম্প্রতি একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে গত অর্থবছরের (২০১৭-১৮) জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও দারিদ্র্যের হারের চূড়ান্ত তথ্য উপস্থাপন করেন। তাতে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫১ মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৯ টাকা। দেশে দারিদ্র্য হার কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮ ভাগে। হতদরিদ্র মানুষের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩ ভাগে। উল্লেখ্য, অর্থবছরের শুরুতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে ৮৬ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, যেভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে। তবে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগের শ্লথগতির কথা স্বীকার করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের অর্থনীতি ছিল প্রায় ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। মানুষের আয় ছিল সীমিত অথচ দ্রব্যমূল্য ছিল আকাশচুম্বী। সেই অবস্থা থেকে জাতীয় অর্থনীতি ও সমৃদ্ধিকে টেনে তোলা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো, এ সময় প্রায় সমগ্র বিশ্ব দু’দুটো মন্দাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় প্রবৃদ্ধি গেছে কমে। এমনকি অনেক দেশে লক্ষ্য করা গেছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থার উত্তাপ লাগেনি বললেই চলে। বরং শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শনৈঃশনৈঃ গতিতে এগিয়ে গেছে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এখন উচিত হবে বিশ্ব বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য রেখে সমন্বয় ও সামঞ্জস্য বিধান করে এগিয়ে চলা।
×