ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভায় আবার তোলা হবে ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১ অক্টোবর ২০১৮

মন্ত্রিসভায় আবার তোলা হবে ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তির বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য তোলা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করার পর আবারও তারা সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বসবেন। সংবাদপত্রের সম্পাদকদের একটি সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে রবিবার প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানান আইনমন্ত্রী। সরকারের অনুরোধে মানববন্ধন কর্মসূচী স্থগিত করে সচিবালয়ে এ বৈঠকে আসেন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকরা। আইনমন্ত্রী ছাড়াও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ বৈঠকে অংশ নেন। আইনমন্ত্রী বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এ রকম একটা আইন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে, আমরা সেই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কিন্তু এ রকম একটা আইন যেন সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ না করে- সেই ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আনিসুল বলেন, অন্যান্য ধারা নিয়ে কারও বক্তব্য নেই। ‘৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকা হয়েছে, সেখানে অনেক এজেন্ডা আছে, হয়ত সেখানে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে না। এর পরে যে কেবিনেট মিটিং হবে সেখানে এটাকে উপস্থাপন করব। এডিটরস কাউন্সিলের যে আপত্তিগুলো তা তুলে ধরব। আলোচনা করার জন্য যে টার্মস অব রেফারেন্স দেয়া হবে সে অনুসারে আমরা আবার আলোচনায় বসার জন্য সম্মত হয়েছি। আনিসুল বলেন, সম্পাদক পরিষদের আপত্তিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য তথ্যমন্ত্রী এবং আইসিটি মন্ত্রীসহ আমরা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করব। ২১ ধারাটা মোটামুটি আমরা সমর্থন করেছি, যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। কিছু যদি আরও ভাল করা যায় চিন্তা করা হবে। সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলোর মতিউর রহমান, নিউ এইজের নুরুল কবীর, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নঈম নিজাম, যুগান্তরের সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠের ইমদাদুল হক মিলন, ইনকিলাবের এ এম এম বাহাউদ্দীন, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, ইনডিপেনডেন্টের শামসুর রহমান, বণিক বার্তার দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, সমকালের মুস্তাফিজ শফিসহ আরও কয়েকজন এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য সচিব আবুয়াল হোসেনও সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির সুরাহা না করেই গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ওই আইন পাস করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থী আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধনের কর্মসূচী দেয় সম্পাদক পরিষদ। পরে রাজপথের কর্মসূচীতে না নামার অনুরোধ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদকে চিঠি দেন তথ্যমন্ত্রী। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচী স্থগিত করে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয় সম্পাদক পরিষদ। আলোচনার উদ্যোগ নেয়ায় তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, আমরা মনে করি ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট সংবিধানের ফান্ডামেন্টাল রাইটস, ফ্রিডম অব স্পিচ, ফ্রিডম অব প্রেস লঙ্ঘন করে। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছি, এটা সে বাংলাদেশের আদর্শের পরিপন্থী। আমরা মনে করি এটা গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থী। আমরা মনে করি এটা সাংবাদিকতার মূল যে নীতি, সেটার বিরোধী। সম্পাদক পরিষদ থেকে বিস্তারিত অভিমত খবরের কাগজে প্রকাশ করার কথা জানিয়ে সংগঠনটি সম্পাদক বলেন, সাংবাদিক ও জনগণকে বলছি- নিজেরা আইনটি পড়ুন এবং বিচার করুন আইনটি দেশের জন্য ভাল কি না। বৈঠক প্রসঙ্গে মাহফুজ আনাম বলেন, উনারা শুনেছেন, কিছু মতবিরোধ হয়েছে। উনারা এ ব্যাপার সম্মতি দিয়েছেন যে আমাদের অভিযোগ আগামী বা তার পরের মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবেন এবং আলোচনার পথ উন্মোচন করবেন। এটাও উনারা আশ্বাস দিয়েছেন যে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেসব জায়গায় আমরা প্রতিবাদ লিপিবদ্ধ করেছি প্রত্যেকটা আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় আসবেন। উনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, উনারা এমন কিছু করতে চান না যা গণমাধ্যমবিরোধী। এ আইন পাসের আগে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুইবার আলোচনা হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, একটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, আমাদের সঙ্গে কথা ছিল তিন নম্বর সেশন করবেন কিন্তু সেটা কেন হলো না তা আমাদের মনে বিরাট প্রশ্ন। আমরা আশাবাদী যে আমরা আলোচনার মাধ্যমে যেসব জায়গায় আমাদের সন্দেহ, দুশ্চিন্তা বা কনসার্ন সেগুলো উনারা পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা আইনটি বাতিল করতে বলছি না, আমরা আইনটি সংশোধন করতে বলছি। সম্পাদক পরিষদের দাবি স্পষ্ট করে তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি আধুনিক আইন আসা উচিত, কিন্তু সেই আইন যেন কোনখানে সাংবাদিকতাকে প্রতিহত না করে বা সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে না দাঁড়ায়। তথ্যমন্ত্রী ইনু বৈঠক শেষে বলেন, যুগের পরিবর্তনে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি দিয়ে এখন অপরাধ করা হচ্ছে, সেটা মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছে। এই ডিজিটাল জগতে ডিজিটাল অপরাধীরা উৎপাত, আপদ ও বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই আপদ, বিপদ ও উৎপাত থেকে ডিজিটাল অপরাধীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। ইনু বলেন, আমাদের সরকার আলোচনা বিশ্বাসী এবং যে কোন সমস্যা তৈরি হলে আলোচনা করে নিষ্পত্তির পক্ষে। গণমাধ্যমেরকর্মীরা কোন আইন দ্বারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা আমাদেরও উদ্বেগ। আমি মনে করি গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তার বিধান গণতান্ত্রিক কাজ। ওই আইন নিয়ে রবিবার বিএফইউজে ও ডিইউজে এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তথ্যমন্ত্রীর।
×