ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুরন্ত লিটনের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  দুরন্ত লিটনের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস

মোঃ মামুন রশীদ ॥ তিন বছরে ১৭ ওয়ানডে, সুযোগ নিয়মিত পাননি ধারাবাহিকতার অভাবে। এবার এশিয়া কাপেও আহামরি কোন নৈপুণ্য দেখাতে পারছিলেন না। তাই ওপেনার লিটন কুমার দাসের খেলা নিয়ে বিতর্ক উঠতে শুরু করেছিল। তবে অপরিহার্য ওপেনার তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে উদ্বোধনী জুটির সঙ্গীদের অবস্থা ছিল আরও করুণ। তাই লিটনের বিকল্পও ছিল না বাংলাদেশ দলের হাতে। অবশেষে নিজের ১৮তম ওয়ানডেতে যা করলেন আগে কখনও তা করতে পারেননি কোন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এশিয়া কাপের ফাইনালে শুক্রবার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকালেন এ ডানহাতি ওপেনার। সেটিও আবার দ্রুতবেগে। মাত্র ৮৭ বলে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে উদ্বোধনী জুটিতে ১২০ রান তুলেছেন দলীয় সংগ্রহে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের পর এটিই বাংলাদেশ দলের প্রথম শতরানের পার্টনারশিপ। ভারতের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি। লিটন শেষ পর্যন্ত ১১৭ বলে ১২ চার, ২ ছক্কায় ১২১ রান করার পর বিতর্কিত একটি স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়েন। ফাইনালে বাংলাদেশ দল চমক দেখায় ওপেনিং জুটিতে লিটনের সঙ্গী হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজকে পাঠিয়ে। অনুর্ধ-১৯ দলের অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ২০১৬ যুব বিশ্বকাপে। ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিতি থাকলেও জাতীয় দলে আসার পর থেকেই মিরাজ নিজের ব্যাটসম্যান পরিচয় তুলে ধরার সুযোগ পাননি। ১৬ ওয়ানডেতে তিনি ১০ ইনিংসের একটিতে ছয়ে, দুটিতে নয়ে এবং বাকি সাতটিকেই নেমেছেন ৮ নম্বরে। এবার সুযোগটা পেয়ে দারুণ কাজে লাগান তিনি। একপ্রান্তে আক্রমণাত্মক লিটনকে ধীরস্থির ভঙ্গিতে সঙ্গ দিয়েছেন। এদিন যেন লিটন অন্যরূপে আবির্ভূত হলেন। ঘরোয়া আসরগুলোতে যে লিটনকে বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে সেভাবেই নিজেকে শুরু থেকেই মেলে ধরেছেন দারুণ ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে। প্রথম পাওয়ার প্লেতেই ১০ ওভারে ৬৫ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। আক্রমণাত্মক লিটন শটের ফুলঝুরি ছুটিয়ে ভারতীয় বোলারদের ঘাম ঝরান। চলতি এশিয়া কাপে আগের ৫ ম্যাচে উদ্বোধনী জুটি নিয়েই ছিল যত মাথাব্যথা। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১, দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৫ এবং সুপারফোরের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১৫, দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৬ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৫ রান এসেছিল ওপেনিং জুটি থেকে। সেই আক্ষেপ থেকে মুক্তি দেন লিটন-মিরাজ জুটি। পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভার শেষ হয়ে গেলেও থামেননি লিটন। ব্যাট চালিয়েছেন ঝড়োগতিতে। আর মিরাজ দেখেশুনে খেলে গেছেন। মাত্র ৩৩ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি আদায় করে নেন একেবারে নিñিদ্র একটি ইনিংস খেলা লিটন। লিটন-মিরাজ জুটি কাঁদিয়ে ছাড়েন ভারতীয় বোলারদের। ১২০ রান তোলার পর জুটি ভেঙ্গে যায় মিরাজের ভুলে। কেদার যাদব বোলিংয়ে আসার পর তাকে তুলে মারতে গিয়ে ৫৯ বলে ৩২ রান করা মিরাজ সাজঘরে ফেরেন। ভারতের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সেরা ওপেনিং জুটি। ২০১৫ সালের ১৮ জুন মিরপুরে এর আগে ১০২ রানের জুটি গড়েছিলেন সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল। আর এশিয়া কাপে এটি ওপেনিংয়ে দ্বিতীয়বার শতরানের জুটি বাংলাদেশ দলের। এর আগে মিরপুরে ২০১৪ সালের ৪ মার্চ ১৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি উপহার দিয়েছিলেন এনামুল হক বিজয় ও ইমরুল কায়েস। ততক্ষণে অবশ্য প্রথম সেঞ্চুরির গন্ধ পেতে শুরু করেছেন লিটন। শেষ পর্যন্ত তিনি তা ৮৭ বলে করে ফেলেন। ভারতের বিপক্ষে অলক কাপালী (১১৫, করাচী, ২০০৮) ও মুশফিকুর রহীম (১১৭, ফতুল্লা, ২০১৪) কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি। সার্বিকভাবে ওয়ানডেতে ১৫তম ব্যাটসম্যান হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ৪৩তম ওয়ানডে শতক উপহার দিলেন। তবে এরপর তাকে একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়েছে ইমরুল কায়েস (২), মুশফিকুর রহীম (৫), মোহাম্মদ মিঠুন (২) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৪) গুরুত্বপূর্ণ উইকেটগুলো পড়তে। গতি কিছুটা থামলেও লিটন নিরুত্তাপ হয়ে খেলতে থাকেন সাবলীলভাবে। দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ৭ নম্বরে নামা শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু ১১৭ বলে ১২ চার, ২ ছক্কায় ১২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি থার্ড আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে। স্টাম্পিংয়ের আবেদনে টিভি রিপ্লেতে লিটনের পা পপিং ক্রিজের দাগে থাকলেও তাকে আউট দেন অস্ট্রেলিয়ার রড টাকার। দুর্দান্ত এই ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে এভাবেই। যে কোন ফরমেটে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলে অবশ্য দলের বিপর্যস্ত অবস্থাকে অনেকটাই ভাল চেহারা দিয়েছেন তিনি। টেস্টে ৩টি ও টি২০ ক্রিকেটে একটি অর্ধশতক ছিল লিটনের। এর আগে ওয়ানডেতে তার সেরা ইনিংস ছিল ৪১ রানের। এই আসরেই সুপারফোরে আফগানদের বিপক্ষে ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি। তবে বাকি চার ম্যাচে তার রান ছিল ০, ৬, ৭ ও ৬! এবার সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন, নিজের সামর্থ্যরেও প্রমাণ দিলেন।
×