ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ;###;সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ৩-এর পাতায়

সব আসনেই শক্তিশালী আওয়ামী লীগ, সাম্রাজ্য ফিরে চায় বিএনপি ॥ ঢাকা জেলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সব আসনেই শক্তিশালী আওয়ামী লীগ, সাম্রাজ্য ফিরে চায় বিএনপি ॥ ঢাকা জেলা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সারাদেশে বইছে নির্বাচনের দমকা হাওয়া। বেজে উঠেছে নির্বাচনী ডামাডোল। নির্বাচনের সেই দমকা হাওয়া যেন একটু বেশি করেই লেগেছে সারাদেশের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকাতে। রাজধানী বলে কথা। সেজন্য প্রতিটি আসনেই হেভিওয়েট প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। মনোনয়ন নামক সোনার হরিণটি পেলেই নিশ্চিত বিজয়। প্রতিটি মনোনয়ন প্রত্যাশীরই মুখে এই একই ভাষ্য। সে পোড় খাওয়া নেতা কিংবা বারবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই হোক কিংবা নির্বাচনকে সামনে রেখে মৌসুমি প্রার্থীরাই হোকÑ সবাই যেন নামের পাশে ‘সংসদ সদস্য’ লিখতে মরিয়া। ফলে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, মনোনয়নকে ঘিরে প্রতিটি আসনেই দ্বন্দ্ব-বিবাদ প্রতিটি বড় দলেই যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ঢাকা জেলার মধ্যে পড়েছে পাঁচটি আসন। সেই আসনগুলো হচ্ছে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ), ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ আংশিক-কামরাঙ্গীরচর-সাভার আংশিক), ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ আংশিক), ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) এবং ঢাকা-২০ (ধামরাই)। বর্তমানে ঢাকা জেলার এই পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং একটি আসন জোটশরিক জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ চাইছে সব আসনই ধরে রাখতে। বিএনপি চাইছে তাদের হারানো সা¤্রাজ্য ফিরে পেতে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি চাইছে অন্তত দুটি আসনে তাদের বিজয় পতাকা ওড়াতে। ঢাকা জেলার এই পাঁচটি আসনেই টানা সাড়ে ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে ব্যাপক উন্নয়ন তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। তবে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের মুখোমুখি এখন আওয়ামী লীগ। এই চারটিতেই দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য। এই সাড়ে ৯ বছরে সাংগঠনিকভাবে পাঁচটি আসনেই বিএনপি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়লেও শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে কোন্দলের সুযোগ নিয়ে দলটি চাইছে তাদের আসনগুলো পুনরুদ্ধার করতে। এলাকার রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুতই যদি আওয়ামী লীগ এই পাঁচটি আসনে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারে তবে আগামী নির্বাচনেও নৌকার বিজয় ঠেকানো কঠিন হবে। অন্যথায় ভুগতে হবে দলটিকে। ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) ॥ রাজধানীর উপকণ্ঠে ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসন। নবম জাতীয় নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। আগামী নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী হয়ে মহাজোটের সমর্থন নিয়ে জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চান জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পরাজিত হওয়া আবদুল মান্নান খান আগামী নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয়ে আসনটি পুনরায় আওয়ামী লীগের দখলে নিতে চান। ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির বেসরকারী খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা। ওই নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। নাজমুল হুদা সম্পর্কে সালমান এফ রহমানের ভাতিজা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক বছর ধরেই নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন দেশের বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর কর্ণধার সালমান এফ রহমান। নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের অবদানের কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী বলয়ও গড়ে তুলেছেন। সালমা ইসলাম, আবদুল মান্নান খান এবং সালমান এফ রহমান আগামী নির্বাচনে দল ও মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। হেভিওয়েট এই প্রার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আরও রয়েছেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ এবং আইনবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট নূরে আলম উজ্জ্বল। তবে বর্তমান এমপি সালমা ইসলাম আবারও মনোনয়ন পাবেন বলে তার সমর্থকরা নিশ্চিত। অন্যদিকে হাতছাড়া হওয়া আসনটি পুনরুদ্ধারে নিয়মিত গণসংযোগ চালাচ্ছেন আবদুল মান্নান খানও। তবে এই আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সালমান এফ রহমান। সম্প্রতি দোহারের এক জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সামনে ৩১টি দলের সমন্বয়ে গঠিত বিএনএ তথা জাতীয় জোট ও তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও এ আসনে সালমান এফ রহমানকে সমর্থন দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। বিএনপির একাধিবারের মন্ত্রী ও এমপি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবার ঢাকা-১৭ আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এদিকে হারানো দুর্গ পুনরুদ্ধারে বসে নেই বিএনপি। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাস করে ঢাকা-২ আসনের আওতাধীন নবাবগঞ্জ উপজেলা ঢাকা-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত করায় ওই নির্বাচনে কর্তৃত্ব হারায় বিএনপি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান খানের কাছে পরাজিত হন বিএনপির আবদুল মান্নান। দলীয় এমপি না থাকায় একসময়ের দুর্গে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে বিএনপি। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতাকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর গ্রুপিংয়ের কারণে আগামী নির্বাচনেও বেকায়দায় পড়তে পারে দলটি। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এবারও এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি আবদুল মান্নান। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে হাইকমান্ডে তার অবস্থা সুদৃঢ়। তবে বয়সজনিত কারণে তিনি প্রার্থী না হলে আগামী নির্বাচনে তার মেয়ে ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তার স্বামী বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম। অন্যদিকে ধানের শীষের প্রতীকের শক্ত দাবিদার হিসেবে মাঠে রয়েছেন নবাবগঞ্জ উপজেলার দু’বারের চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় তিনি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছেন। ছাত্রদলের সাবেক এই নেতাকে ঘিরে দলের তরুণ নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত। তবে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আবদুল মান্নান ও আবু আশফাকের সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদফা সংঘর্ষও হয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে মান্নানের সমর্থকদের কোণঠাসা করে রেখেছেন আশফাক। আবদুল মান্নানের সমর্থকদের দাবি, আশফাকের উত্থান ঘটেছে আবদুল মান্নানের হাত ধরে। কিন্তু দলীয় পদবি পাওয়ার পর তিনি গ্রুপিং তৈরি করেছেন। অন্যদিকে আশফাকের সমর্থকরা কোন্দলের জন্য আবদুল মান্নানকে দায়ী করেন। দুই নেতার দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে বিএনপির জয়-পরাজয়ের পেছনে কাজ করবে দলের বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ভূমিকাও। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নাজমুল হুদার নিজস্ব ভোটব্যাংকের ভোট বিএনপি নাও পেতে পারে বলে আশঙ্কা দলটির নেতাকর্মীদের। ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ আংশিক-কামরাঙ্গীরচর-সাভার আংশিক) ॥ এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। আগামী নির্বাচনেও তিনি পুনরায় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রী কামরুল ইসলামকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাঠে নেমেছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। প্রার্থিতা নিয়ে এই দুই নেতাকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকায় দ্বন্দ্ব-বিরোধী চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ওই দুই নেতা ছাড়াও কেরানীগঞ্জ মডেল থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি শাকিল আহমেদও নির্বাচনী প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। গত দুই নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ২০০৮ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক মতিউর রহমানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে চমক দেখান এবং মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে আইন প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে। এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার কাজেও বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তিনি। সবশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত কামরুল ইসলাকে খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মন্ত্রী কামরুল ইসলাম নিয়মিত এলাকায় সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই মেয়াদে এমপি হয়ে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারক ও প্রভাবশালী মন্ত্রীদের সঙ্গেও তার রয়েছে সুসম্পর্ক। তাই দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তার সমর্থকদের দাবি, তৃতীয়বারের মতো এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম হাইকমান্ড থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চেয়ারম্যান নির্বাচনী এলাকায় শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। গত নির্বাচনেও ব্যাপক শোডাউন করে মনোনয়নপত্র কিনলেও দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কামরুল ইসলামকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি। তবে এবার তিনি কোন ছাড় দিতে নারাজ। কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হিসেবে প্রত্যেক ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে সম্মেলন করে দলকে সুসংগঠিত রেখেছেন। এ আসনের নির্বাচিত সাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও শাহীন চেয়ারম্যানের পক্ষে রয়েছেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। এলাকার তরুণ ভোটারদের মধ্যেও তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। নির্বাচন যতই এগোচ্ছে এই দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। আওয়ামী লীগের এমন বিরোধের সুযোগ নিয়ে মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টির শাকিল আহমেদ। স্থানীয় নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, আওয়ামী লীগের এই কোন্দলে সুযোগ নেবে বিএনপি। নির্বাচনের আগে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে পারলে আগামী নির্বাচনেও এ আসনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক ডাকসু ভিপি আমানউল্লাহ আমান একক প্রার্থী হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছেন। তবে ২০০৮ সালের মতো এবারও আইনী জটিলতায় প্রার্থী হতে না পারলে তার ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অংশ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির চারবারের এমপি আমানউল্লাহ আমান নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ায় ফলে স্থানীয় বিএনপি নেতা অধ্যাপক মতিউর রহমানকে প্রার্থী করা হয়। তবে আওয়ামী লীগের কামরুল ইসলামের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তবে আমানউল্লাহ আমানই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন, নেতাকর্মীদের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তবে অসংখ্য মামলার আসামি হয়ে আইনী জটিলতায় আগামী নির্বাচনেও আমানউল্লাহ আমান প্রার্থী হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমানের পরিবর্তে তার ছেলে ব্যারিস্টার ইরফানকে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে আমান পরিবারের বাইরেও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন বিএনপির ঢাকা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম পল, কামরাঙ্গীরচর থানা সভাপতি মনির হোসেন চেয়ারম্যান, তানাকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মহিউদ্দিন মাহীন এবং বিএনপি নেতা প্রয়াত নাসির উদ্দিন পিন্টুর ছোট ভাই হাজী রিয়াজ উদ্দিন মনি। আগে আসনটিতে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও আসন পুনর্বিন্যাসের পর সেই শক্তি দলটির আর নেই। তবে কামরুল ইসলাম ও শাহীন আহমেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারের আশায় দিন গুনছে। এছাড়াও এ আসনে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম। ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ আংশিক) ॥ ঢাকা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের একক ও প্রভাবশালী প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু। তার বিকল্প নেই আওয়ামী লীগে। ২০০১ সাল থেকে টানা তিন নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রথমবার পরাজিত হলেও পরবর্তী দুই নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি। তার বিকল্প না থাকায় আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন, তা অনেকটাই নিশ্চিত। এরপরও দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় প্রবীণ নেতা হাজী আতাউর রহমানের নাম রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন চান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য রমজান ভুঁইয়া। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপুর রয়েছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ও ব্যাপক পরিচিত। তার বাবা হামিদুর রহমান ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হামিদুর রহমান। প্রতিমন্ত্রী বিপুর মা হাসনা হামিদও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নসরুল হামিদ বিপুও তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক কর্মকা-ের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। তিনি আবাসন ব্যবসায়ী সংগঠন রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি। ২০০১ সালে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির আমানউল্লাহ আমানের কাছে পরাজিত হন নসরুল হামিদ বিপু। পরাজিত হলেও বিএনপির দুঃশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে এলাকায় থেকে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলে ভোটারদের মন জয় করেন বিপু। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে হারিয়ে এবং সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমান মেয়াদে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন নসরুল হামিদ বিপু। শুধু এলাকায় নয়, সারাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিয়ে সবচেয়ে সফল মন্ত্রী হিসেবেও তাঁর সুনাম দেশের সর্বত্র। তাঁর সমর্থকদের দাবি, সৎ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে সদালাপী নসরুল হামিদ বিপুর নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। রাজনীতির বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের মধ্যেও অসম্ভব জনপ্রিয় আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি। নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক উন্নয়নেরও প্রধান দাবিদার তিনি। ফলে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন নসরুল হামিদ বিপু। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ নেতাকে ঘিরেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। তবে আইনী জটিলতায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তাঁর পুত্রবধূ এ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী দলীয় প্রার্থী হতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুণ দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। এর আগে এ আসনে প্রার্থী হয়ে টানা চারবার এমপি হন বিএনপির আমানউল্লাহ আমান। প্রতিবারই মনোনয়নবঞ্চিত হন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তবে ২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর ঢাকা-২ আসনের প্রার্থী হন আমান। এ কারণে ঢাকা-৩ থেকে প্রার্থিতার সুযোগ পান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। নির্বাচনে অংশ নিয়েই তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপুর কাছে পরাজিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলটির একক প্রার্থী। বারবার মনোনয়নবঞ্চিত হলেও ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে টেকনোক্র্যাট কোঠায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী করা হয়। প্রায় এক দশক ধরে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির একক প্রার্থী হলেও সম্প্রতি এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে নেমেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী নাজিম উদ্দিন মাস্টার। মনোনয়ন পেলে তিনিও নির্বাচন করবেন বলে তাঁর সমর্থকরা বলছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সভাপতি ব্যবসায়ী হাজী সুলতান আহমেদ খানকে এ আসনে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) ॥ বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ডাঃ এনামুর রহমান এনাম। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ডাঃ এনাম আগামী নির্বাচনে শক্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও দলের আরও ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে থেকে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁরা হলেন- সাবেক এমপি তালুকদার মোঃ তৌহিদ জং মুরাদ, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক হাসিনা দৌলা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ কবির, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, ফারুক হাসান তুহিন ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর। এছাড়া মহাজোটের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হতে চান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ ও সাভার উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন বাবুকে রেকর্ডসংখ্যক ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুরাদ জং। সেই থেকে এখন অবধি আসনটি রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন স্থানীয় এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ এনামুর রহমান এনাম। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় আহতদের চিকিৎসায় ব্যাপক ভূমিকা রাখার কারণেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তহীন ডাঃ এনামকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন নিয়ে সৃৃষ্ট কোন্দলের কারণে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রয়েছেন এমপি এনাম। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা মনোনয়ন দৌড়ে নামায় আগামী নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কে দলীয় মনোনয়ন পাবেন এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হলেও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। কিছুদিন নীরব থাকলেও নির্বাচনী মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন সাবেক এমপি মুরাদ জং। পারিবারিকভাবেও এলাকায় বেশ প্রভাব রয়েছে মুরাদ জংয়ের। তাঁর বাবা সাবেক এমপি প্রয়াত আনোয়ার জং সাভারে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী ফিরোজ কবির সাভার উপজেলার তিন দফা নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি থাকার সুবাদে এলাকার মানুষের মধ্যে তাঁরও একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা প্রশাসক হাসিনা দৌলারও স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ প্রভাব রয়েছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমেদ নাসিম পাভেলও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকা ব্যাপক ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টার লাগিয়ে ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ফারুক হাসান তুহিনেরও এলাকার তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফখরুল আলম সমর দলীয় মনোনয়ন পেতে গণসংযোগসহ কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করছেন। স্থানীয় দলটির নেতাকর্মীদের মতে, দ্বন্দ্ব মিটিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী নিশ্চিত সম্ভব হলে আগামী নির্বাচনেও এ আসনটিতে নৌকার বিজয় অবশ্যম্ভাবী। অন্যদিকে হাতছাড়া হওয়া এ আসন ফিরে পেতে চায় বিএনপি। কিন্তু এ দলটিতেও মনোনয়ন নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব-বিভেদ। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপির তিন নেতা। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ডাঃ দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন বাবু। স্থানীয় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যও বেশি। তিনি ছাড়াও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন- দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) মিজানুর রহমান এবং পরিবহন ব্যবসায়ী ও সাভার উপজেলার বরখাস্ত হওয়া চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন আহমেদ। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী এই তিন নেতাই বিভিন্ন দিবস কিংবা উৎসবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ডিজিটাল পোস্টার-ব্যানার লাগিয়ে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা ও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। সাবেক এমপি ডাঃ সালাউদ্দিন বাবুর সমর্থকদের দাবি, এই আসনে সালাউদ্দিন বাবুর বিকল্প শক্তিশালী প্রার্থী নেই। নৌকার মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা ও গ্রুপিং থাকলেও বিএনপিতে বাবুর বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সমর্থকদের দাবি, দলের বর্তমান দুঃসময়েও এলাকায় বিএনপির রাজনীতি ধরে রাখতে সচেষ্ট রয়েছেন মিজানুর রহমান। আন্দোলন করতে গিয়ে তিনবার কারাগারেও যেতে হয়েছে তাঁকে। তাই আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলে তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত। ঢাকা-২০ (ধামরাই) ॥ এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের এম এ মালেক। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বর্তমান ও সাবেক এমপির কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দুনেতার বিরোধে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীরাও। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এই দুই নেতা হচ্ছেন বর্তমান এমপি এম এ মালেক ও সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁরা দুজন প্রকাশ্যে নিজেদের বিরুদ্ধে কুৎসা ও কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত। এ দুজন নেতার পাশাপাশি নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন- ধামরাই পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগে সহ-সভাপতি আবদুল আলীম খান সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সিআইপি আহম্মদ আল জামান, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল ও যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, বিএসটিআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক দেওয়ান আফসার উদ্দিন জিন্নাহ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডাঃ মোখলেস উজ জামান হিরু প্রমুখ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ঘাঁটি বলে একদা পরিচিত এই আসনটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জিয়াউর রহমান খানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেনজীর আহমেদ। কিন্তু সবশেষ নির্বাচনে বেনজীর আহমদের বদলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মালেক। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি নির্বাচিত হন। এমপি হওয়ার পর থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কর্মী সম্মেলন করে সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলীয় ও নির্বাচনী রাজনীতিতে তাঁর অবস্থায় অনেকটাই শক্ত। তবে বেনজীর আহমদও দলীয় মনোনয়ন পেতে শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন তিনি। স্থানীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে এম এ মালেক ও বেনজীর আহমদের দ্বন্দ্ব এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। আলাদা সভা-সমাবেশ, এমনকি সংবাদ সম্মেলন করেও একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন তারা। মালেক-বেনজীরের দ্বন্দ্ব নেতাকর্মীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। কোন্দলের জের ধরে আওয়ামী লীগের পথের কাঁটা হয়ে মাঠে রয়েছেন জোট শরিক জাতীয় পার্টির ঢাকা জেলা সভাপতি ও দু’বারের সাবেক এমপি খান মোহাম্মদ ইসরাফিল ও যুব সংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন খান মিলনও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধারে মাঠে নেমেছে বিএনপিও। দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে মাঠে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানা আহমেদ এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ। ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান এ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০০৬ সালে তিনি বিএনপি ছেড়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগ দেন। তবে ২০০৮ সালে তিনি পুনরায় বিএনপিতে ফিরে আসেন। তবে এ আসন থেকে বারবার মনোনয়নবঞ্চিত হন তমিজ উদ্দিন। ওয়ান ইলেভেনের সময় দক্ষতার সঙ্গে এলাকায় সংগঠনের নেতৃত্ব দেন তিনি। এর ফলে ব্যারিস্টার জিয়া ও তমিজ উদ্দিনকে ঘিরে এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দুভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানা আহমেদও এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রভাব রয়েছে। নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তৃণমূল থেকে উঠে আসা তরুণ নেতা ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদও নিজের অবস্থান অনেকটাই শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলটির ধামরাই উপজলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী হাজী আবদুল মান্নান নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন।
×