ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরিতে কোটা তুলে দেয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চাকরিতে কোটা তুলে দেয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা তুলে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোটা সংস্কার কমিটির দেয়া সুপারিশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। সোমবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অবিলম্বে কোটা সংস্কার কমিটির সুপারিশ বাতিলসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরে প্রতিবাদ কর্মসূচীরও ডাক দিয়েছেন। কোটা তুলে দেয়ার পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দেয়া বক্তব্য দিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রতিবন্ধী ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাঝে। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সরকারী চাকরির নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে কোন ধরনের কোটা না রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছে কোটা পর্যালোচনায় গঠিত ‘উচ্চ পর্যায়ের কমিটি’। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগে চলমান কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ করে সরকারের এ কমিটি বলেছে, এক্ষেত্রে নিয়োগ হবে কেবল মেধার ভিত্তিতে। ত্রয়োদশ থেকে বিংশতম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে আগের নিয়মই বহাল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কোটা বাতিল করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ইতোমধ্যে বলেন, আমাদের ফাইন্ডিংস হলো নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত যে প্রাথমিক নিয়োগ হয়, সে নিয়োগে কোন কোটা থাকবে না, কোন কোটাই থাকবে না। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা অন্য কোনভাবে রাখা যায় কি না তা ভাবা হবে। এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, ‘তারা যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন, এখন কোটা ‘না হলেও চলতে পারে’। আদালতের একটি নির্দেশনা আছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে। এ বিষয়ে আমরা এক্সামিন করেছি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার পলিসি ম্যাটার হিসেবে যেটা সিদ্ধান্ত দেবে সেটা ঠিক আছে। ‘আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি, তারা বলেছেন, এটা যেহেতু গবর্নমেন্ট পলিসির ডিসিশন, এটা আদালতের রায় স্পর্শ করবে না। কোন সমস্যা নেই।’ কমিটির সুপারিশ নিয়ে এবার ব্যাপক আপত্তি তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। সংস্কার কমিটির সুপারিশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ঢাবি শাখা। সোমবার ঢাবির সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছেন তারা। সংবাদ সম্মেলন থেকে ৬ দফা দাবি পেশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড (ঢাবি শাখা)। দাবিগুলো হলো- মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক গঠিত কোটা বাতিল বা সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হওয়ায় তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বিসিএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা (৩০ শতাংশ) বাস্তবায়ন করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন ও তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কটূক্তিকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও তাদের বংশধরদের চিহ্নিত করে সব সরকারী চাকরি থেকে বহিষ্কার করে এদের নাগরিকত্ব বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। দাবি বাস্তবায়নে সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর শাহবাগে মহাসমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাবি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি মিজানুর রহমান পিকুল, শফিউল আলম রিয়াদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান প্রমুখ। এদিকে কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ ও কমিটির বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী ও আদিবাসীরা। প্রতিবন্ধীদের সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে কোটায় খুঁজে পাওয়া যায় না, পৃথিবীর কোন দেশে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু নেইÑ বিভিন্ন সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্যের অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন পৃথিবীর কোন দেশে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু নেই। আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে জানাচ্ছি তার এই বক্তব্য সঠিক নয়। কেননা বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ক্যাডার পর্যায়ে ৪ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন ॥ শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন ও শিক্ষকদের সুবিধা বৃদ্ধিসহ ৯ দফা দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বেসরকারী আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বৈঠকে শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার ও বিভাগীয় প্রধানদের অবরুদ্ধ করে আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
×