ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তি শুরুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তি শুরুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

তপন বিশ্বাস ॥ দীর্ঘ আট বছর পর জট খুলতে যাচ্ছে বেসরকারী হাইস্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তির কার্যক্রম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু করতে শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রাপ্ত আবেদনগুলো ভালভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখবেন। যে সকল প্রতিষ্ঠান সকল শর্ত পূরণ করেছে তাদের তালিকা তৈরি করেন। পরে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে কতগুলোর এমপিও দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সোমবার তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে মন্ত্রিসভার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। এছাড়া নদীভাঙ্গন বিষয়ে পূর্বপ্রস্তুতি না নেয়ায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে জানান, ২০১০ সালের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর এমপিওভুক্তি করা সম্ভব হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া করতে পারি না। আমরা অর্থ ছাড়ের জন্য আরও আগে থেকেই অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করে যাচ্ছি। তবে ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী রাজি হয়েছেন এবং কিছু টাকা বরাদ্দও দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য আমরা একটি ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছি। আগ্রহীরা অনলাইনে আবেদন করবেন। বাছাই করা হবে। কিসের ভিত্তিতে দেব, প্রধানমন্ত্রীর মত নিয়ে আগামী মাসের মধ্যে ফয়সালা হবে। তবে এর সংখ্যা কী হবে, সেটা বলতে পারছি না। এখানে অনেক বিষয় থাকে। আমরা চেষ্টা করছি বাড়ানোর জন্য। আগামী মাসের মধ্যে ফয়সালা হয়ে যাবে। এমপিওভুক্ত হতে পারে প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠান ॥ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপিওভুক্তির জন্য ছয় হাজার ১৪১টি স্কুল ও কলেজের (মাদ্রাসা ও কারিগরি ছাড়া) আবেদন রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৫৩৭ প্রতিষ্ঠান নতুন নীতিমালার আওতায় এমপিও পাওয়ার যোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা তৈরি করেছি। সবাই বসে তা দেখার সময় কিছু পরিবর্তনও আসতে পারে। তবে তালিকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন শিক্ষামন্ত্রী। তালিকা তৈরির ক্রাইটেরিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য ১০০ নম্বর রাখা হয়েছিল। একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থী ও উত্তীর্ণের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নম্বর দিয়ে উত্তীর্ণদের বাছাই করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এমপিওভুক্তি পেতে এক হাজার ৯৬৭ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আবেদন করেছিল, যার মধ্যে যোগ্য ৫৭৯টি স্কুল। দুই হাজার ৭৩৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আবেদন করেছিল, যার মধ্যে যোগ্য ৭৬৪টি প্রতিষ্ঠান। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্তি পাওয়ার যোগ্য ১২১টি কলেজ। এর মধ্যে স্কুল এ্যান্ড কলেজ এবং কলেজ দুই স্তরের প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। ৫৫৪টি ডিগ্রী কলেজ এমপিওভুক্তির আবেদন করেছিল, এর মধ্যে যোগ্য প্রতিষ্ঠান ৪৩টি। এদিকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে সে সর্ম্পকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় হাজার ১৪১টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করলে সরকারের বছরে অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯৭৫ কোটি ৩৫ লাখ দশ হাজার টাকা। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক এক হাজার ৯৬৭ প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ৬৮৪ কোটি টাকা এবং দুই হাজার ৭৩৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য বছরে প্রয়োজন হবে এক হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। আর এক হাজার ৪৩৫টি উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রী কলেজ এমপিওভুক্তি করতে বছরে প্রয়োজন হবে এক হাজার ৫৩ কোটি টাকা। জানা গেছে, ২০১০ সালে সর্বশেষ এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। ওই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ্য থেকে বলা হয়েছিল, নতুন করে আর কোন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না। এই ঘোষণায় অখ্যাত অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ‘আরও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে’-এমন ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দেয়া শুরু হয়। শিক্ষক সংগঠনগুলোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে এমপিওবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল আট হাজার। কিন্তু আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় বিগত সময়ে প্রায় দুই হাজার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এমপিওভুক্তির বর্তমান অবস্থা ॥ বর্তমানে দেশে ২৬ হাজার ৮১টি সাধারণ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ৭৭৫টি কারিগরি কলেজসহ প্রায় ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের এমপিও বাবদ প্রতিমাসে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৯৪০ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে মাউশি অধিদফতরের বাজেট ছিল ২৩৫ কোটি টাকার, ২০০৯ সালে যা ছিল প্রায় চার হাজার কোটি টাকার। বর্তমানে মাউশি’র বাজেট হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকার। এভাবে প্রতিবছরই এমপিও খাতের বরাদ্দ বাড়ছে। নদী ভাঙ্গন রোধে পূর্বপ্রস্তুতি না নেয়ায় অসন্তোষ ॥ মন্ত্রিসভা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে কয়েক হাজার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। সর্বস্ব হারিয়েছেন। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাৎক্ষণিক হয়ত মানুষের এক্ষেত্রে তেমন কিছুই করার নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রী সময়মতো সেখানে যাননি। কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেননি। সর্বস্ব হারানো মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে, তারা মানসিকভাবে শক্তি পেত। কিন্তু তারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি; দাঁড়াতে পারত, সহমর্মিতাও তো দেখাতে পারত। এটা হলো না, যা দুঃখজনক। এ সময় এক সদস্য জানান, নড়িয়ায় কোন প্রকল্প নেই। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প তো মানুষের জন্য। যেখানে মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে, আস্ত আস্ত দালানকোঠা, বাজার, নগর নদীর বুকে হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষ বিলাপ করছে, মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, মানুষের খাবার জুটছে না, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ভেসে যাচ্ছে; তখন প্রকল্প তো পরের কথা। প্রধানমন্ত্রী নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকার সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ এর সঙ্গে জড়িতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভাদ্র মাসে নদীতে পানির টান পড়ে। তাই এ সময় নদীভাঙ্গনের ঘটনা ঘটে। তবে আগে থেকে বুঝা যায় না কোন এলাকায় নদী ভাঙ্গন হবে। তারপরও যেসব এলাকা নদী ভাঙ্গন কবলিত বলে চিহ্নিত সেসব এলাকায় পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে রকমভাবে প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, এমনকি নদী ভাঙ্গন বিষয়ে তাকে কেউ জানায়ওনি। এজন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, গত কিছুদিন যাবত শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙ্গনের ঘটনা ঘটেছে। শরীয়তপুরে এখনও অব্যাহত রয়েছে পদ্মার ভাঙ্গন। গত দেড় বছরে পদ্মার ভাঙ্গনে সেখানে নিঃস্ব হয়েছে ৫ হাজার ৮১টি পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৮ হাজার পরিবার। ভাঙ্গনে নড়িয়ার কেদারপুর, মোক্তারের চর ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া উত্তারাঞ্চলেরও বেশ কয়েকটি এলাকা নদী ভাঙ্গনে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় সরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। শেখ হাসিনা নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আগে তো অসহায় মানুষের কাছে ছুটে যেতে হবে। তাদের বুকে জড়িয়ে ধরতে হবে। আশা দেখাতে হবে। পাশে দাঁড়াতে হবে।’ মন্ত্রিসভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত ॥ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি ও মুক্তিযোদ্ধা এবিএম আব্দুস সামাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভা একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম আব্দুস সামাদের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার ৮ নম্বর আসামি আব্দুস সামাদ গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লোগো উন্মোচন ॥ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে আলোচনা শুরুর আগে ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে আমাদের যে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, সেই কর্তৃপক্ষের লোগো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
×