ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ॥ ২০ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবে আদালত

খালেদার অনুপস্থিতিতে মামলা চলা নিয়ে মতানৈক্য

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

   খালেদার অনুপস্থিতিতে মামলা চলা নিয়ে মতানৈক্য

বিকাশ দত্ত ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম চলবে কিনা এ নিয়ে বিপরীতমুখী মত দিয়েছেন আইনজীবীরা। সাবেক আইনমন্ত্রী ও দুদকের আইনজীবী বলেছেন, খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচার চলতে কোন আইনী বাধা নেই। ‘ফৌজদারি আইনের ৫৪০ (এ) অনুযায়ী কোন আসামি উপস্থিত না হলে হাজিরা মওকুফ দেখিয়ে বিচার কাজ পরিচালনা করা সম্ভব। অপরদিকে ভিন্নমত পোষণ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেছেন, জেলে থাকা কোন আসামিকে আদালতের সামনে যতক্ষণ পর্যন্ত উপস্থিত না করতে পারবে ততক্ষণ বিচারকার্য পরিচালনায় আইনী কোন সুযোগ নেই। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন এ বিষয়ে আমি কোন কমেন্ট করব না। উল্লেখ্য ১৩ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম চলবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবে আদালত। সেদিন নাজিমউদ্দিন রোডের পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারের ঢাকার অস্থায়ী ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান এদিন ঠিক করেন। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, যদি রাষ্ট্রপক্ষ কোন একটি নির্দিষ্ট আইন দেখাতে পারে তা হলে বিচার চলবে না কেন। কেউ আদালতে হাজির না হলে মামলা চলবে না কেন? আইনে এমন কোন বাধা নেই। সরকার গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আদালত বসিয়েছে। যেহেতু খলেদা জিয়ার বিচার বাইরে হতে দেবে না এমন হুমকি আছে। লোকজন দিয়ে গন্ডগোল সৃষ্টি করতে পারে। সে জন্যই সরকার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই পুরান কারাগারে আদালত স্থানান্তর করেছে। এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার জনকণ্ঠকে বলেছেন, খালেদা জিয়া এখন আইনজীবীদের কাস্টডিতে নেই, আদালতের কাস্টডিতে আছে। আদালতে কাস্টডিতে থাকা মানে জেলে আছেন। জেলে থাকা আসামিকে আদালতের সামনে যতক্ষণ পর্যন্ত উপস্থিত করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিচারকার্য চালানোর আইনগত কোন সুযোগ নেই। ফৌজদারির কার্যবিধির ৫৪০ ধারার বিধান মতে জেলে থাকা আসামির ক্ষেত্রে কোনক্রমেই প্রযোজ্য নয়। সুতরাং দুদকের আইনজীবীর ব্যাখ্যা গ্রহণ যোগ্য নয়। আরেক আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, খালেদা জিয়া আদালতের অধীনে আছেন। তাকে আনার দায়িত্ব আদালতের। বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। জামিনে আছেন আদালতের অধীনে। ১৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, ‘ফৌজদারি আইনের ৫৪০ (এ) অনুযায়ী কোন আসামি উপস্থিত না হলে হাজিরা মওকুফ দেখিয়ে বিচার কাজ পরিচালনা করা সম্ভব। আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন মন্ত্রব্য করব না। একই ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন দুদকের আইনজীবী খোরশেদ আলম খান। তিনি বলেছেন, বিচারাধীন বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করবেন না। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর এই কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচার সম্পন্ন করতে ঢাকার পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এর পর থেকেই বিশেষ জজ আদালত-৫ এ বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি নাজিম উদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারে হচ্ছে। মামলার শুনানির জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১) মাহবুবার রহমান সরকার স্বাক্ষরিত এই গেজেটে বলা হয়েছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ বকশীবাজার এলাকার সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে পরিচালিত হচ্ছে। মামলা চলাকালীন ওই এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে এই আদালত স্থানান্তর করা হচ্ছে। এখন থেকে এই মামলার বিচার কার্যক্রম পুরান কারাগারে ঘোষিত অস্থায়ী আদালতে চলবে। যদিও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করেন, তারা আদালত স্থানান্তরের কোন নোটিস পাননি। সে কারণে ৫ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে তারা কারাগারের আদালতে উপস্থিত হননি। পরে আদালত ১২ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির জন্য নতুন দিন ঠিক করে দেন। ১৩ সেপ্টেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরা দেয়া না দেয়া ইস্যুতে যুক্তিতর্ক শুনানি করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ও দিন যুক্তিতর্ক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, এই মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরা মওকুফ করে বিচারকাজ অব্যাহত রাখা সম্ভব। অপরদিকে আসামিপক্ষ বলেছে, খালেদা জিয়া কারাগারে মানে তিনি বিচারকের কাস্টডিতে আছেন। সুতরাং তাকে হাজির না করে মামলা চলার কোন সুযোগ নেই। বাদীপক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘ফৌজদারি আইনের ৫৪০ (এ) অনুযায়ী কোন আসামি উপস্থিত না হলে হাজিরা মওকুফ দেখিয়ে বিচার কাজ পরিচালনা করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে তার আইনজীবীরা যদি সহযোগিতা করতে অপরাগ হয় তাহলে এ মামলার রায়ের জন্য দিন ঠিক করে দিতে তারা আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন’। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল মামলার বিচার চলবে কি না এবং তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেয় আদালত। দুর্নীতির এই মামলায় মোট আসামি চার। খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অন্য তিন আসামি হলেন খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ’১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটিতে খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।
×