ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় পাউবোর অধিগ্রহণকৃত জমি বেহাত

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 কলাপাড়ায় পাউবোর অধিগ্রহণকৃত জমি বেহাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৬ সেপ্টেম্বর ॥ সাগরপাড়ের জনপদ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত স্লুইস খালাশিদের বসবাসের অন্তত ৯০টি বিধ্বস্ত দশার ভবন বেদখল হয়ে গেছে। কোন ভবনের অর্ধেক আছে। কোনটি বিধ্বস্ত দশার ভবন রয়েছে, কিন্তু দরজা-জানালার কাঠ পর্যন্ত নেই। কোনটির দেয়ালের ইটসহ ছাদের পলেস্তরা পর্যন্ত উধাও হয়ে গেছে। এমনকি ভবন নির্মাণ কিংবা খালাশি বসবাসের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি পর্যন্ত বেহাত হয়ে গেছে। কয়েক কোটি টাকার সম্পদসহ সম্পত্তি বেহাতের পাশাপাশি পরিত্যক্ত এ ভবনগুলোতে বখাটে কিংবা মাদকসেবীর আড্ডা পর্যন্ত বসে। ফলে ফের স্লুইস নিয়ন্ত্রণে এ ভবনসহ অধিগ্রহণকৃত জমি পাউবোর ব্যবহারে জটিলতার শঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ মানুষের দেয়া তথ্যমতে, ষাটের দশকের পরে সাগর ও নদীর লোনা জলের প্রবেশ ঠেকাতে কলাপাড়ার গোটা উপকূলে করা হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের প্রাণহানি রক্ষায় এবং কৃষিকাজের স্বার্থে এই বাঁধ করা হয়। এর পরেই ষাটের দশকের মাঝামাঝি বাঁধের অভ্যন্তরের খালের সঙ্গে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে করা হয় অন্তত শতাধিক স্লুইসগেট। পরবর্তীতে এ স্লুইসের সংখ্যা দাঁড়ায় আড়াই শতাধিক। এর মধ্যে ড্রেনেজ স্লুইস ও ফ্লাসিং স্লুইসের সংখ্যা ১১৯টি। শতাধিক স্লুইসগেট রক্ষণাবেক্ষণসহ কৃষকের স্বার্থে পানি ওঠা নামানোর যথাযথ তদারকির জন্য স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করা হয়। করা হয় একটি করে ভবন। নিয়োগ করা হয় খালাশি। তখন থেকে এ ভবনকে খালাশি ভবন বলা হয়। কলাপাড়ায় এমন অন্তত ৯০টি খালাশি ভবনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরপর থেকে কৃষকরা তাদের কৃষিকাজের স্বার্থে খালাশিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝি সময় স্লুইস খালাশি নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। ফলে অবসরে যাওয়ার পর থেকে খালাশি ভবনগুলো পরিত্যক্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে সকল খালাশির পদ শুন্য হয়ে যায়। অরক্ষিত হয়ে যায় স্লুইসগেট। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে কৃষকের স্বার্থে করা স্লুইসগেটসহ অভ্যন্তরীণ খালের পানি ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম। যদিও এরপরে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে বড়, মাঝারি ও ছোট তিন শ্রেণীর কৃষকের সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নিয়োজিত পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) কে সদস্য সচিব করে স্লুইস ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কার্যত একমিটি স্লুইসের নিয়ন্ত্রণে কৃষকের স্বার্থ নিশ্চিত করতে পারেনি। মূলতঃ অধিকাংশ স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারী দলের একটি প্রভাবশালী মহল। তারা জাল পেতে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করে স্লুইস। সরেজমিনে দেখা গেছে, একেকটি স্লুইস খালাশি ভবনসহ বসবাসের এলাকার আয়তন ১৫ থেকে ৫০ শতক জমি। দীর্ঘদিনে অরক্ষিত থাকায় এসব ভবনের এখন চরম জীর্ণদশা। পলেস্তরাসহ মূল ভবন পর্যন্ত ধসে পড়ছে। ৫০টিরও বেশি ভবনের ইট পর্যন্ত গায়েব হয়ে গেছে। জমি পর্যন্ত বেহাত হয়ে গেছে। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, তার ইউনিয়নে নয়টি খালাশি ভবন পরিত্যক্ত, বিধ্বস্ত দশায় রয়েছে। একই দৃশ্য ১২টি ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার। এসব রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেয়াসহ ফের স্লুইস খালাশি নিয়োগ দেয়ার দাবি কৃষকসহ সাধারণ মানুষের। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। পরিত্যক্ত খালাশি ভবনগুলোসহ অধিগ্রহণকৃত জমি উদ্ধারে কাজ চলছে।
×