ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লবিস্ট নিয়োগ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

লবিস্ট নিয়োগ

একটি রাজনৈতিক দল কতটা দেউলিয়া হয়ে গেলে নিজের দেশের ওপর দেশের মানুষের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস না রেখে বিদেশীদের কাছে ধরনা দিতে পারে! সম্প্রতি বিএনপির বিদেশী লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে এবং দেশের মানুষ ছি-ছি করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওপর বিএনপি চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রতিষ্ঠানকে লবিস্ট নিয়োগ করেছে তারা। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তারা পায় কিভাবে? এই ঘটনার ভেতর দিয়ে বিএনপির গণবিচ্ছিন্নতার বিষয়টি আরও একবার সামনে চলে এসেছে। জাতি বার বার অবলোকন করেছে ক্ষমতায় যাবার মোহে বিএনপির মরিয়া-দশা। ধারাবাহিকভাবে তারা বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। জনসমর্থন হারানোয় নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করার চাইতে দেশে উদ্ভূত নানা ইস্যুকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র আন্দোলনের ওপর ভর করতে দেখা গেছে বিএনপিকে। তাদের দেউলিয়াপনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ছাত্রদের আন্দোলনকে তারা অপব্যবহার করার নীলনক্সা পর্যন্ত তৈরি করেছিল। কোটা আন্দোলনের সময়ও তারা নাশকতা ঘটায়। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভেতর সুকৌশলে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার ঢুকিয়ে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকান্ড ঘটানোর মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। সরকারের ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সেটি সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে একটি সুন্দর আন্দোলনের ওপরও সওয়ার হয়েছিল। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের সকল পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে আন্দোলনকে ধ্বংসাত্মক মাত্রা দিতে চেয়েছিল। তাদের অভিপ্রায় ছিল সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভেতর ছদ্মবেশ নিয়ে মিশে গিয়ে নৈরাজ্যকর কর্মকান্ড ঘটানো। কিছু কিছু অপকর্ম তারা ঘটাতে সফলও হয়েছে। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারও করেছে তারা। ফটোশপে হামলা-ভাংচুরের ছবি এডিট করে, অশ্লীল ও আপত্তিকর ভাষায় ব্যানার-ফেস্টুন-স্লোগান ইত্যাদি লিখে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে বহুবিধ পোস্ট ও ভিডিও দেয়া হয়েছে ফেসবুক-ইউটিউবে- যা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে গেছে মুহূর্তেই। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোই ছিল তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কুমিল্লায় অবস্থানরত এক শিবির নেতাকে বিএনপির এক শীর্ষ নেতার মোবাইল ফোনে ঢাকায় গিয়ে লোকজন জড়ো করে আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান রীতিমতো উস্কানির নামান্তর। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা দেশবাসী ভুলবে কী করে! কী ভীষণ অস্থির নৈরাজ্যকর বিপজ্জনক দিন গেছে জাতির জীবনে। খালেদা জিয়ার হুকুমে হরতাল-অবরোধের নামে দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার নাশকতা চলে টানা তিন মাস। গোটা দেশ হয়ে ওঠে সন্ত্রাসের জনপদ। আমরা আগেও বলেছি, বিএনপি বা দেশের যে কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু সে জন্য সবার আগে সংবিধান মেনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। জনতার রায় পেলেই শুধুমাত্র সরকার গঠন সম্ভব। এছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। বিদেশী প্রভুদের দিকে না তাকিয়ে, দেশের মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত করে লবিস্ট নিয়োগ করার মতো ন্যক্কারজনক কাজ না করে জনগণের কল্যাণে রাজনীতিতে শামিল হতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা অর্জন করা হয়ত সম্ভব। ক্ষমতায় যাওয়ার সেটাই সংবিধানসম্মত পথ। বিএনপির মনে রাখা উচিত যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী সরকার কখনই কোন বিদেশী শক্তির কাছে মাথা নত করেনি, করবে না।
×