ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশের সাঁকোই ভরসা

গ্রামের পথ আছে, নেই শুধু সেতু

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গ্রামের পথ আছে, নেই শুধু সেতু

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ওদের প্রতিদিন যাওয়া-আসা করতে হয় স্কুল-কলেজে। অভিভাবকরাও থাকেন বড়ই দুশ্চিন্তায়। পানির চাপ বাড়লে কখনও আবার বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গেও পড়ে। নিত্যদিন এভাবে চলাচল করতে হয় ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নিমোজখানা চেকাডারা, শিবগঞ্জসহ কিছু গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসীর। ওই ইউনিয়নের এসব গ্রামের সঙ্গে ডোমার উপজেলা শহরের সহজপথ হলো চেকাডারা নদীর বাবুরবান নামক স্থানের পথটি। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামগুলোর স্থানীয় বাসিন্দা একটি সেতুর জন্য ধর্ণা দিতে দিতে হাফিয়ে উঠেছে। ফলে গ্রামের মানুষজন প্রতিবছর নিজেরাই চেকাডারা নদীর বাবুরবান এলাকায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে নিমোজখানা স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মহাদেব,কাজল চন্দ্র,তুলসী রানী জানায়, বর্ষায় বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে গেলে প্রায় ৫কিলোমিটার দূর দিয়ে স্কুল-কলেজ, হাটবাজারসহ প্রয়োজনীয় কাজে ডোমার সদরে যেতে হয়। নদীর তীরে অবস্থিত শিবগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুমি আকতার, মাধবী রানী, মোনা সরকার জানায়, আমরা স্কুল শুরু ও ছুটির সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পারাপারের সময় দুশ্চিন্তায় থাকি। এলাকার গোপাল চন্দ্র রায়,বিকাশ চন্দ্র রায়,হরিহর চন্দ্র রায়,পরিমল চন্দ্র রায়, বিষ্ণু চক্রবর্তী জানান, অনেকদিন ধরে আমরা এই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও সেতু নির্মাণ হয়নি। সেতু নির্মাণ বর্তমানে এলাকার প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তারা ক্ষোভের সঙ্গে জানায়, আমরা দেখেছি পথঘাট নেই এমন স্থানে অকারণে ব্রিজ নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। অথছ আমাদের গ্রাম আছে পথ আছে নেই ব্রিজ। নিজেরাই বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে চলাচল করছি। এ ব্যাপারে বোড়াগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ জানান, আমি চেষ্টা করছি সেখানে একটি সেতু নির্মাণ করার। পাবনা নিজস্ব সংবাদদাতা পাবনা থেকে জানান, ভাঙ্গুড়া উপজেলার ম-ুতোষ ইউনিয়নের দহপাড়া গ্রামের বড়াল নদীর ওপর সেতু না থাকায় ১৫টি গ্রামের অন্তত অর্ধলাখ মানুষ নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এলাকাবাসী এ নদীটির উপর নিজ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দফতরে সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘকাল ধরণা দিলেও এখন পর্যন্ত ব্রিজ নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এলাকাবাসী জানিয়েছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণে নব্বই সালের দিকে সরকারীভাবে ভাঙ্গুড়া উপজেলার দহপাড়া ও চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে বড়াল নদীতে ওয়াপদা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে নদীটি খালে পরিণত হয়। তখন থেকে ওই ওয়াপদা বাঁধটি নদীর দক্ষিণ পাড়ের ভাঙ্গুড়া উপজেলার ম-ুতোষ ইউনিয়নের সঙ্গে উত্তর পাড়ের অষ্টমণিষা ও চাটমোহরের গুনাইগাছা ইউনিয়নের একমাত্র যোগাযোগ স্থাপনকারী সড়ক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। একপর্যায়ে ২০০৮ সাল থেকে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি নদীটি সচল করতে ওয়াপদা বাঁধ অপসারণের জন্য সভা-সমাবেশ ও আন্দোলন শুরু করে। এমনকি ওই কমিটি এবিষয়ে আদালতে মামলাও করে। পরবর্তীতে তাদের দাবিতে জাতীয় নদী বিষয়ক টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্তে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নদী থেকে বাঁধ অপসারণ করতে আসে। এসময় স্থানীয় জনসাধারণ তাদের যোগাযোগের অসুবিধার কথা ভেবে বাঁধ অপসারণে বাধা দেয়। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সেখানে দ্রুত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে বাঁধ কেটে নদী অবমুক্ত করেন। তখন এলাকাবাসী নদী পারাপারে প্রথম ছয় মাস নৌকা ব্যবহার করে। কিন্তু মালামাল পারাপারে অসুবিধা হওয়ায় পরে তারা সেখানে ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মর্তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতির আড়াই বছর পার হলেও নদীতে সেতু নির্মাণ হয়নি। পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম জহুরুল হক এ বিষয়ে জানিয়েছেন, জনসাধারণের অসুবিধার কথা ভেবে ওই স্থানে সেতু নির্মাণের বিষয়ে তার দফতর খুবই আগ্রহী। কিন্তু এত বড় সেতু নির্মাণে জাতীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া সম্ভব নয়।
×