ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মালদ্বীপ ৩-০ নেপাল

‘টসজয়ী’ সেই মালদ্বীপই ফাইনালে

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

‘টসজয়ী’ সেই মালদ্বীপই ফাইনালে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা শ’খানেক নেপালী দর্শক খেলা শেষ হতেই ‘নেপাল, নেপাল’ বলে এবং ড্রাম পিটিয়ে, ভুভুজেলা বাজিয়ে যেভাবে আধঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চেঁচাচ্ছিল তাতে করে ওই মুহূর্তে গ্যালারিতে ঢোকা নতুন কোন দর্শকমাত্রই ধরে নেবেন নেপাল জিতেছে। কিন্তু অবাক হবেন তখনই, যখন শুনবেন এর উল্টোটিই ঘটেছে! আসলে নিজেদের দল হারলেও নেপালীদের দেশপ্রেম এবং ফুটবলপ্রেম যে কতটা খাঁটি, জাতীয় দল হারলেও যে দুঃখ ভুলে তাদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন যোগানো যায়, তারই এক অনুপম নিদর্শন দেখাল নেপালী ফুটবলপ্রেমীরা। তাদের এই ভালবাসায় সাড়া দিয়ে হারের শোক ভুলে এক নেপালী ফুটবলার গ্যালারিতে এসে স্বজাতিদের সঙ্গে করমর্দন করে গেলেন। এদিকে এক রসিক দর্শক বললেন, ‘লিখে দেন, ভাল খেলেও হেরে গেল বালের দল নেপাল!’ পাঠক, বিভ্রান্ত হবেন না বাক্যটি পড়ে। যখন জানবেন নেপাল জাতীয় ফুটবল দলের কোচের নাম বাল গোপাল মহারজন, তখন নিশ্চয়ই বাক্যটিকে অশ্লীল মনে হবে না। রসিকতা থাক, আসল প্রসঙ্গে আসা যাক। সাফ সুজুকি কাপে বুধবার প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচে ১৯৯৩ সাফের তৃতীয় স্থান অধিকারী নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ২০০৮ আসরের শিরোপাধারী মালদ্বীপ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের প্রথমার্ধে বিজয়ী দল এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। ‘জয়ের জন্য এক গোলই যথেষ্ট। তবে আমরা আশা করছি গোল চার-পাঁচটি হবে।’ ম্যাচের আগেরদিন মালদ্বীপের কোচ সেগ্রেট পিটারের এত আত্মবিশ্বাস দেখে মুখ টিপে হেসেছিলেন অনেকে। তবে চার গোল না হলেও নেপালের জালে তিন গোল ঢুকিয়ে ফাইনালে ঠিকই নাম লিখিয়েছে পিটারের শিষ্যরা। অথচ মজার ব্যাপারÑ এই আসরে মালদ্বীপ সেমির আগ পর্যন্ত কোন ম্যাচেই জেতেনি। তারা সেমিতে ওঠে নিতান্তই ভাগ্যক্রমে! গ্রুপপর্বে তারা গোলশূন্য ড্র করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। পরের ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় ০-২ গোলে। ফলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের গোল তফাত, পয়েন্ট, হেড টু হেড... সবকিছুই সমান হয়ে যায়। তখন টুর্নামেন্টের ‘হাস্যকর’ বাইলজ অনুযায়ী তারা টসে জিতে সেমিতে খেলা নিশ্চিত করে। এবার সেমিতে জিতে টুর্নামেন্টের প্রথম জয়টি কুড়িয়ে নিল এই আসরের দ্বিতীয় সফল (চারবারের ফাইনালিস্ট) মালদ্বীপ। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে উঠলো তারা। এই মাঠেই তারা সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলেছিল ২০০৯ আসরে। নেপাল কখনও সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়নি। এমনকি ফাইনালেই ওঠেনি। তবে এবার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ার হাতছানি দিচ্ছিল তাদের। তাছাড়া এই মাঠেই দু’বছর আগে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। কিন্তু এই পয়মন্ত মাঠেই কি না তারা হেরে গেল! নিল বিদায়! র‌্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য নেপালের (১৬১) চেয়ে ১১ ধাপ এগিয়ে মালদ্বীপ (১৫০)। ১৬ বারের মোকাবেলায় ৮ বারই জিতেছে মালদ্বীপ। ৪ বার জিতেছে নেপাল। বাকি ৪ ম্যাচ ড্র হয়। দু’দল সাফে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০১১ সালে। দিল্লীতে অনুষ্ঠিত সেবারের আসরে গ্রুপপর্বে দু’দলের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। বুধবার জিতে প্রতিশোধও নিয়ে নিল মালদ্বীপ। এই মাঠেই ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে নেপালের কাছে ৪-১ গোলে হেরেছিল তারা। বুধবার সেমির ম্যাচে হারলেও নেপাল যথেষ্ট ভাল খেলে। বেশ কটি ভাল আক্রমণ করে। এমনকি বল নিয়ন্ত্রণেও এগিয়ে ছিল তারা (৬৫%-৩৫%)। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়াতে গোলের দেখা পায়নি। ৯ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় মালদ্বীপ। ডানপ্রান্তে ডি-বক্সের বাইরের কোনায় ফ্রি কিক পায় মালদ্বীপ। অধিনায়ক আকরাম আবদুল ঘানির নেয়া বাঁ পায়ের বাঁকানো শট থেকে মালদ্বীপের মোহাম্মেদ সামদুহ পা লাগাতে ব্যর্থ হলেও গোল পেতে অসুবিধা হয়নি মালদ্বীপের। ঘানির নেয়া ফ্রি-কিক নেপালের গোলরক্ষক কিরণ কুমার লিম্বুকে বোকা বানিয়ে জাল স্পর্শ করে (১-০)। এর পরপরই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিভেজা পিচ্ছিল মাঠে দু’দলই স্বাভাবিক খেলা প্রদর্শনে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। বৃষ্টি এবং বিপজ্জনক বজ্রপাতের কারণে খেলা বন্ধ থাকে ৩৫ মিনিটের মতো। এরপর আবারও খেলা শুরু হলে দুইদলই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করে খেলতে থাকে। ৮৪ মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড আসাদুল্লাহ আবদুল্লাহর শট ফিরিয়ে দেন নেপালের এক ডিফেন্ডার। কিন্তু ফিরতি বলে বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফরোয়ার্ড ইব্রাহিম ওয়াহেদ (২-০)। ৮৬ মিনিটে আবারও নেপালের জালে বল পাঠায় মালদ্বীপ। বক্সের মধ্যে বল পেয়ে নিখুঁত শটে আবারও গোল করেন ইব্রাহিম (৩-০)। আর এই গোলেই ফাইনাল নিশ্চিত হয় মালদ্বীপের। এই সেই মালদ্বীপ, যারা ধুঁকে ধুঁকে এক ম্যাচ না জিতেও ‘টস’-এ জিতে সেমি পর্যন্ত ওঠেছিল। আর তারাই কিনা এখন ফাইনালে।
×