ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিকবান্ধব আইন

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শ্রমিকবান্ধব আইন

শ্রমজীবী মানুষের জীবনে দুবেলা-দুমুঠো খাবার নিশ্চয়তার বাইরে স্বাচ্ছন্দ্য ও কর্মনিরাপত্তা অধিকতর প্রয়োজন। সুযোগ-সুবিধার দিগন্তগুলো তাদের জন্য বিদ্যমান থাকা অত্যন্ত জরুরী। কেবল কায়িক শ্রমের যোগান দিয়ে যাওয়া নয়, সেই শ্রম প্রদানে শারীরিক ও মানসিক শক্তিমত্তা বহাল রাখাও সঙ্গত। শ্রমিকদের জন্য শ্রমবান্ধব এবং সুশৃঙ্খল মালিক-শ্রমিক পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিষ্ঠানও হয় লাভজনক। যা উভয়ের জন্যই অতীব দরকার। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। ২০০৬ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে ব্যাপক সংশোধন করা হয়। যাতে ৩৫৪টি ধারা রয়েছে। সর্বশেষ এবারের সংশোধনে নয়া দুটি ধারা, চারটি উপধারা ও আটটি দফা সংযোজন, ছয়টি উপধারা বিলুপ্ত ও ৪১টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্ব শ্রম সংস্থার সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী শ্রমবান্ধব নীতি সর্বত্র নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই সংশোধন আনা হয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণকে সামনে রেখে মালিক, শ্রমিক ও সরকারী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়ার পর তা সংসদের চলতি অধিবেশনে উপস্থাপিত হবে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি কোন শিশু বা কিশোরকে কাজে নিযুক্ত করলে অর্থদ-ে দ-িত হবেন। শ্রমিকদের জন্য থাকছে কেন্দ্রীয় কল্যাণ ফান্ড। গ্রুপ বীমা আর থাকছে না। মালিক ও শ্রমিকদের অসদাচরণ বা বিধান লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- বা জরিমানা বা উভয় দ- থাকছে। বেআইনী ধর্মঘট ডাকার দ- কমিয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে বর্তমানে ছয় মাসের কারাদ-ের স্থলে এক মাস দ- ভোগ করবেন। নয়া আইনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বর্তমানের মোট শ্রমিকের ত্রিশ শতাংশের যে সমর্থন প্রয়োজন হয় তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ধর্মঘট ডাকার ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনের স্থলে হচ্ছে ৫১ শতাংশ। খসড়া আইনে সংযোজিত হয়েছে উৎসব ভাতা। কর্মরত শ্রমিকদের স্ব স্ব ধর্মীয় উৎসবের প্রাক্কালে বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে উৎসব ভাতা দিতে হবে। যা বিদ্যমান আইনে নেই। কোন কারখানায় ২৫ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থাসহ খাবার ঘর রাখতে হবে, সঙ্গে বিশ্রামের ব্যবস্থাও। শ্রমিকরা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পরে তা উৎসব দুটির সঙ্গে ভোগ করতে পারবে। উৎসবের ছুটিতে কাজ করলে একদিনের বিকল্প ছুটিসহ দুই দিনের ক্ষতিপূরণ মজুরি দিতে হবে। খাবার ও বিশ্রামের সময় বাদে টানা দশ ঘণ্টার বেশি কোন শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। মাতৃত্বকালীন ছুটির বিকল্প হিসেবে প্রসব পরবর্তী আট সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি পাবে। শ্রম আদালতে মামলার রায় বর্তমান ৬০ দিনে দেয়ার যে বিধান রয়েছে নয়া আইনে তা নব্বই দিনের মধ্যে দিতে হবে। শ্রম সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন ৬০ দিনে দেয়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা কমিয়ে ৫৫ দিন করা হয়েছে। আইনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার মিলে একটি ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক পরিষদ গঠন করতে পারবে। কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন এই আইনের বিরোধিতা করছে। কলকারখানা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা শুধু নয়, সাংবাদিকরাও এই শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত। কেবল ইপিজেড এলাকার শ্রমিকদের জন্য এই আইন প্রযোজ্য হচ্ছে না। খসড়া আইনটি শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের নয়া পথ খুলে দিচ্ছে। যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে শ্রমবান্ধব আইনের ভবিষ্যত।
×