ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গুর প্রকোপ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডেঙ্গুর প্রকোপ

রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। সেই সঙ্গে আছে চিকুনগুনিয়ার খবরও। প্রায় প্রতিদিনই সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত একাধিক রোগী ভর্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে। হিমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও আছে। তাই বলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গুজ্বর বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তাকে মহামারী বলা যাবে না। বরং বলা যায়, প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর যেরকম রুটিন আবির্ভাব ঘটে থাকে অনুরূপ এবার পর্যাপ্ত ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা প্রায় হয়নি বললেই চলে। তবে দফায় দফায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেক বাসাবাড়িতে পানি নিষ্কাশিত না হয়ে জমে আছে ফুলের টবে, পরিত্যক্ত টায়ারে, ফলের খোসায়, আনাচে-কানাচে। এসব স্থানে জমে থাকা পরিষ্কার টলমলে পানি ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী এডিস মশার প্রজননের ক্ষেত্রে আদর্শ। আরও একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, ঢাকা উত্তরের চেয়ে ঢাকা দক্ষিণে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল নগর বসতিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসবাহিত রোগ, যা ছড়িয়ে পড়ে এডিস মশার মাধ্যমে। সুতরাং ডেঙ্গু নিধনে সর্বাগ্রে প্রয়োজন মশক নিধন। এদিকে আমাদের ঘাটতি রয়েছে যথেষ্ট। দুই সিটি কর্পোরেশনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা তো আছেই। নাগরিক অবহেলাও কম দায়ী নয় কোন অংশে। প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে মশা মারা সিটি কর্পোরেশনের আয়ত্তের বাইরে। সে অবস্থায় পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশিত বৈকি। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, পানি জমতে না দেয়া, মশারি টানিয়ে শোয়ার অভ্যাস সর্বোপরি মশক নিধনে লিকুইড, কয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপরও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বর ও ব্যথানাশক প্যারাসিটামল ও প্রচুর তরল গ্রহণ করলেই চলে। আগের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা না বাড়লেও ডেঙ্গু শনাক্তকরণে জটিলতা, নগরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের সমস্যা, মশক নিধনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সে অবস্থায় স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের সাহায্যে সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরী। ডেঙ্গুর উৎস বন্ধ করতে না পারলে এ রোগের ঝুঁকি থেকেই যাবে। বর্তমান সরকারের অনেক সাফল্যের অন্যতম একটি দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক। সম্প্রতি এটি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের মতো বহুজাতিক দাতা সংস্থার। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সার্বিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নতিতে ‘অসাধারণ ভূমিকা’ রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য খাতে অভাবনীয় উন্নতির উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, এটি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে। এর ফলে নবজাতক ও শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণসহ ১০টি সূচকে সন্তোষজনক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে অবশ্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দারিদ্র্য, চিকিৎসা উপকরণের অভাব, বিভিন্ন রোগের প্রকৃতির পরিবর্তন ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। নারী ও শিশুর অপুষ্টির কথাও বলা হয়েছে। তদুপরি নগরায়নসহ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মোট দেশজ আয়ের তুলনায় (জিডিপি) পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণ না হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে চাহিদা পূরণ করাও কঠিন। ফলে অনেকেই সরকারের সরবরাহের বাইরে স্বাস্থ্যসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে অনেক গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা আরও সম্প্রসারণসহ প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া গেলে অচিরেই এর সুফল পাবে সাধারণ মানুষ। এই সমস্যা মোকাবেলায় দাতাদের অর্থ ছাড়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারী তহবিলের অর্থ ছাড়ের সমন্বয় সাধন করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত ও গতিশীল রাখতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। সে অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও কমে আসবে ক্রমশ।
×