ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোকের এই ঝর্ণাধারায়... হাতিরঝিলে লেজার শোর বর্ণচ্ছটা, আতশবাজি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 আলোকের এই ঝর্ণাধারায়... হাতিরঝিলে লেজার শোর বর্ণচ্ছটা, আতশবাজি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আঁধারে আলোর ঝলকে ঢাকার আকাশে উৎসব নামল সন্ধ্যায়। বসুন্ধরা কনভেনশন হল থেকে হাতিরঝিল, হাতিরঝিল থেকে সদরঘাট পুড়ল আতশবাজি, হলো মনোমুগ্ধকর লেজার শো। স্মৃতিতে তুলে রাখার মতো এই আয়োজনে গোটাদেশ একসঙ্গে জানল বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। এতেই বাঁধভাঙ্গা উৎসবে কেবল ঢাকার মানুষ নয় সারাদেশের মানুষের চোখ শুক্রবার সন্ধ্যায় আটকে গেল টিভির পর্দায়। সময়টি ২০০৯ দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। মাঝখানের ৯ বছর সেই উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে এখন হয়েছে ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াট। নয় বছরে উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ৩০৭ গুণ, যা এখন ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াট। এই অগ্রগতি বিস্ময়কর। ৯ বছরের ব্যবধানে বিদ্যুতের সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা ৪৭ ভাগ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০ দশমিক ৫০ ভাগ। একই সময়ের ব্যবধানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি আট লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৯৯ লাখ। আগামী জুনের মধ্যে দেশের সব উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকেই অধীর আগ্রহে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন হল, হাতিরঝিল আর সদরঘাটে অপেক্ষা করছিল লাখো মানুষ। ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর আলোক উৎসবের পর অনেকেই আক্ষেপ করেছিল কেন এমন আয়োজন সামনে থেকে তারা দেখতে পারলেন না। এবার সেই আক্ষেপ পূরণে আগেভাগে প্রচার চালানো হয়েছিল। বিস্তৃত করা হয়েছে উৎসবকে। প্রথমবার একটি জায়গাকে আলোক উৎসব করলেও এবার করা হলো তিন জায়গাতে। সঙ্গতকারণেই আয়োজন যেমন বিশাল উৎসব উপভোগে মানুষের আগ্রহও ছিল তেমনই। হাতিরঝিলের সব রাস্তার বাতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। হাতিরঝিলজুড়ে এমন আয়োজন তো আলোয় ভাসবার জন্যই। শিশু থেকে বৃদ্ধ কিংবা মাঝবয়সী কেউ কি ঘরে ছিল? না, এই আয়োজনের খবর যাদের কাছে ছিল তাদের ঘরে থাকার উপায় নেই? সব থেকে আনন্দে ভেসেছে শিশুরা। জীবনে এমন আনন্দ উপভোগের আয়োজন তো বার বার করা যায় না। হাতেগোনা দু’একবার আসতে পারে। যেমন এসেছিল এই সন্ধ্যায়। তাই মিস করতে চায়নি কেউই। হাতিরঝিলে মূল উৎসবের মঞ্চ ঠিক করা হলো ঝিলপাড়ের পুলিশ প্লাজা প্রান্তে। কিন্তু কি গুলশান কি মগবাজার কি অন্য কোন প্রান্ত সবখানেই তো লোকে লোকারণ্য। মানুষ আর মানুষ। সব ¯্রােত এসেছে আলোর নাচন দেখতে। সন্ধ্যা ঠিক সাতটা ৩০ মিনিট। শুধু হয় আলোক উৎসবের প্রথম ধাপ লেজার শো। হাতিরঝিলের আকাশে লেজার শো’র বর্ণচ্ছটায় এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়। লেজার শো চলে সাতটা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় আতশবাজি। আতশবাজিতে আকাশে আনন্দের ঝর্ণাধারা। একই সঙ্গে সবুজ লেজার রশ্মির বর্ণিল ছটা। রাতের আকাশকে আরও বর্ণিল শোভায় সাজাল। এত সবুজ নয় বাংলাদেশের প্রাণ। প্রাণের মেলা। শিশুদের সে কি উচ্ছাস! দিড়িম- দিড়িম- দিম এমন গগন প্রকম্পিত শব্দে ভয় পাওয়ার বদলে উল্টো চিৎকার করেছে ওঠে। আজ ঘরে বসে থাকলে জীবনের ষোলোআনাই যেন মিছে মনে হতো। এই উৎসব শেষ হয় সন্ধ্যা সাতটা ৪০ মিনিটে। আর হাতিরঝিলের আলো জ্বলে উঠল সন্ধ্যা সাতটা ৪১ মিনিটে। মাত্র ২০ মিনিটের আয়োজন কিন্তু বহুদিন মনে রাখার মতো উচ্ছ্বাস করার মতোই ছিল এই আয়োজন। বিদ্যুত বিভাগ বলছে দেশের ১২৪ বিদ্যুতকেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৪৩ মেগাওয়াট। এরসঙ্গে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো থেকে আরও ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যায়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। সে হিসেবে মোট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াট। এছাড়া আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শুরু হচ্ছে। যেহেতু ভারত থেকে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তিতে বিদ্যুত আনা হচ্ছে। তাই এই এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা হিসেবে দেখছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। মাত্র ১০ বছরে এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে একটি বিরল অর্জন। প্রসঙ্গত গত ১৮ জুলাই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াট।
×