ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিদ্রোহীদের সশস্ত্র তৎপরতা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিদ্রোহীদের সশস্ত্র তৎপরতা বাড়ছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যতই বিলম্বিত হচ্ছে ততই আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরে থাকা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সক্রিয় হচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকাকালে এদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিদ্রোহী গ্রুপের জন্ম হয়েছে। বিভিন্ন নামে এ সংগঠনগুলোর মধ্যে সর্বশেষ নামটি এসেছে সেটি হচ্ছে আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি)। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর রাতে রাখাইনে সশস্ত্র সেনা অভিযানের পর যে লাখ লাখ রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সঙ্গে এসব বিদ্রোহী সংগঠনের অনেকে প্রাণে বাঁচতে চলে এসেছে। কেউ কেউ সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্রও নিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরতার মুখে ওরা টিকতে পারেনি। এখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার সুবাদে এসব বিদ্রোহী সংগঠনের সদস্যদের গোপন তৎপরতা বাড়তে শুরু করেছে। যে কারণে আশ্রিত শিবিরগুলোতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সহিংসা ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, উখিয়া-টেকনাফের ৩০ শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে গ্রুপিংও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, বর্তমানে এরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি আল ইয়াকিন গ্রুপ ও অপরটি তাদের বিরুদ্ধাচরণকারী সাধারণ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় ওই সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এসব সন্ত্রাসীরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে রাখার প্রক্রিয়ায় ব্যাপক তৎপর। বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের এক প্রকারে জিম্মি করে রেখেছে তারা। তাদের কথা মতো না চললে চলে নির্যাতনের খড়গ। বৃহস্পতিবারও টেকনাফের হোয়াইক্যং চাকমারকুল ক্যাম্পে তিন রোহিঙ্গাকে কুপিয়েছে সন্ত্রাসী প্রতিপক্ষ। তাদেরকে রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সশস্ত্র রোহিঙ্গারা তাদের আধিপত্য বিস্তারে সাধারণ রোহিঙ্গাদের হুমকির মুখে রেখেছে। তারা রাতের বেলায় ক্যাম্পে অস্ত্র উঁচিয়ে বিভিন্ন ব্লক ও শেডে ঘোরাফেরা করে থাকে। আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের ওই ক্যাডারদের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গীবাদ বিস্তৃতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। সূত্র আরও জানিয়েছে, এ পারের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের ক্যাডারদের কারণে ক্যাম্পে আশ্রিত সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আরএসও’র (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) সাবেক কিছু ক্যাডার বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে তাদের। পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের সহসা ফেরত যাওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের কেউ কেউ বিদেশী অর্থ এনে লাভবান হচ্ছে, আবার কেউ কেউ বিদেশী অর্থে বিভিন্ন এনজিওর ছদ্মাবরণে রোহিঙ্গা সেবার নামে বিভিন্ন স্থাপনা ও ত্রাণ বিতরণের ব্যানারে নিজ স্বার্থ হাসিল করে চলেছে। ক্যাম্পে অবস্থানকারী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের (আরএনও) ক্যাডাররা আর্থিক সহযোগিতা দেয়া ছাড়াও তাদের অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
×