ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে জাতির জনককে দেখার সুযোগ

সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন

মোরসালিন মিজান ॥ আরও একটি বড় পাওয়া। নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে জাতির জনককে দেখার বিরল সুযোগ। এবার বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া অসংখ্য গোপন প্রতিবেদন গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে। শিরোনাম- ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ বাঙালীর মহান নেতাকে জানার এই ব্যতিক্রমী প্রয়াস গ্রহণ করেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’র পর এই গ্রন্থ আসছে পাঠকের হাতে। বইটি হাতে পেতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন পাঠক। আজ শুক্রবার গণভবনে প্রথম খন্ডের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হবে। প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্য ও শিল্প সাহিত্য অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যোগ দেবেন অনুষ্ঠানে। কিছুকাল আগে প্রকাশিত হয় শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী।’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর নিজ জবানীতে পাওয়া হয়। রাজবন্দী হিসেবে কারাগারে থাকা অবস্থায় বাঙালীর মহান নেতা তাঁর জীবনের ঘটনাবলী লিখতে শুরু করেছিলেন। খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি, যেটুকু লেখা, বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বহুকাল পর প্রকাশিত বই পড়ে অভিভূত হয়েছেন পাঠক। এখনও তুমুল আলোচনার বিষয় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী।’ এর পরপরই প্রকাশিত হয় ‘কারাগারের রোজনামচা।’ গ্রন্থটিতে আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর জেল জীবনের স্মৃতি। ডায়েরি হিসেবে নিজেই লিখেছিলেন। এখনও বইটিতে ডুব দিয়ে আছেন অগণিত পাঠক। আর তার পর থেকেই আলোচনা হচ্ছিল ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নিয়ে। গ্রন্থের শিরোনাম এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি ধারণা দেয় বৈকি। যারা আগের দুটি বই পাঠ করেছেন তারা খুব ভাল করেই জানেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ছায়ার মতো অনুসরণ করত। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে সেই ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন মুসলিম ছাত্রলীগের সভ্য, তখন থেকেই আলোচনায়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্নেহধন্য শেখ মুজিবের প্রভাব বড় বড় নেতাদের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতা ও সভাপতির পদ লাভ করেন তিনি। লম্বা সময় ধরে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যান। এবং তাঁকে নিয়ে সব সময়ই শঙ্কিত থাকত সরকার। মুজিবের প্রতি মুহূর্তের খবরাখবর জানার চেষ্টা করত। আর এ কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। পূর্বে প্রকাশিত দুটি বইতে জাতির জনক সে কথা লিখেছেন। তাঁর লেখায় বার বারই এসেছে গোয়েন্দা নজরদারির কথা। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন শেখ মুজিব। একইভাবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ঢাকায় ফেরার সময় গোয়েন্দারা কীভাবে তাঁকে অনুসরণ করত, সে কথা লিখেছেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বারবার উল্লেখ করেছেন ‘আইবি’র কথা। ‘আইবি’ মানে ইনটেলিজেন্স অব পাকিস্তান। আইবির যন্ত্রণায় এমনকি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারেননি তিনি। তাঁর প্রতিটি কথা শোনার চেষ্টা করেছে ‘আইবি’। কী ওরা শুনল? মুজিব সম্পর্কে কী জানিয়েছিল উর্ধতনদের? হ্যাঁ, এসব উত্তর পাওয়া যাবে নতুন গ্রন্থে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিটি পদক্ষেপ অনুসরণ করেছে গোয়েন্দারা। প্রতিদিনের কর্মকা- বক্তৃতা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্পেশাল ব্রাঞ্চে খোলা ব্যক্তিগত ফাইলে সংরক্ষিত ডকুমেন্টের সংকলন ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ গ্রন্থ। দীর্ঘ তেইশ বছরের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মোট ১৪ খ-ের সঙ্কলন প্রকাশ করছে হাক্কানী পাবলিশার্স। প্রথম সংকলনটি প্রকাশিত হবে আজ। সহসাই বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠক। এদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাকি খ-গুলো প্রকাশের কাজ এগিয়ে চলছে। ক্রমান্বয়ে সেগুলোও পাঠকের হাতে তুলে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় গ্রন্থ ‘নয়া চীন ভ্রমণ’প্রকাশিত হচ্ছে ॥ বাসস জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা তৃতীয় গ্রন্থ ‘নয়া চীন ভ্রমণ’ প্রকাশিত হচ্ছে। বইটি প্রকাশ করছে বাংলা একাডেমি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এই ‘নয়া চীন ভ্রমণ’ বইটি ইংরেজী ভাষায়ও প্রকাশিত হচ্ছে। ইংরেজী ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফকরুল আলম। তিনি বঙ্গবন্ধুর লেখা দ্বিতীয় গ্রন্থ এবং বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটিও ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ‘নয়া চীন ভ্রমণ’ বইটির প্রথম প্রকাশ ২০ হাজার কপি ছাপা হবে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী অমর একুশের গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী দিন থেকেই বইটি মেলায় পাঠকরা ক্রয় করতে পারবেন বলে একাডেমি কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করছেন। ইংরেজী ভাষায়ও বইটি একই সময়ে প্রকাশের টার্গেট করেছে বাংলা একাডেমি। বইটি সম্পাদনার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও লোক গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জমান খান এ সব তথ্য জানান। তিনি জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু চীন সফর করেছিলেন। তাঁর এই সফরের ওপর তিনি ডায়েরি লিখেছেন। এই ডায়েরিই হচ্ছে ‘নয়া চীন ভ্রমণ’ বইটি। তিনি জানান, বইটির প্রকাশনার কাজ এগিয়ে চলছে। ভ‚মিকা লিখছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ভ‚মিকা লেখা পাওয়া গেলেই বইটির ছাপার কাজ সম্পন্ন হবে।
×