ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

উচ্চশিক্ষায় মানব উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

উচ্চশিক্ষায় মানব উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা

উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ জন্য সার্বিকভাবে একটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম ইউজিসি এবং হেকাপের মাধ্যমে শুরু হয়। সরকারের সদিচ্ছাকে সাড়া দিয়ে চারটি রাউন্ডে ৬৯টি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম চালু হয়। এটির মেয়াদকাল চলতি সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। যারা বিভিন্ন রাউন্ডে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তারা নির্ধারিত নিয়মনীতি মেনে কাজ করে চলেছেন। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে কথায় বলে শিক্ষার মান উন্নয়নের শেষ নেই। আসলে শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণীত হলেও এটি আইন আকারে পাশের প্রয়াস গ্রহণ করা হলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে ২০১৬ থেকে ঝুলে আছে। আসলে যে কোন উন্নয়ন প্রয়াসে কোন পক্ষ যদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করে তখন যত জটিল ও জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক না কেন তা বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি স্তরে যখন বৈপরীত্যমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়Ñ তখন যতই ওপরে থেকে ভাল কিছু করতে চাওয়া হোক না কেন, একটি না একটি স্থানে বাধা পেয়ে যায়। তারপরও সরকারের প্রয়াসে একটি উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে কাঠামো তৈরির প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তার অধীনস্থ কলেজ/ইনস্টিটিউটগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়ক অনার্স কলেজের শিক্ষকদের জন্য আউট কাম বেজড টিচিং, এ্যাসেসমেন্ট প্রয়াসে রুব্রিক্সের ব্যবহার এবং ছাত্র উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ওপর প্রয়োজনীয়তা ও পাঠ্যক্রমকে আধুনিকায়ন করা যাতে করে লার্নিং আউট কাম জানা যায়Ñ এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব জানিয়ে ই-মেইল করা হলেও সৌজন্যমূলক জবাব পাওয়া যায়নি। এদিকে হেকাপের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অন্য যেসমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় যার সংখ্যা ১২০-এর মতো সেগুলোতে কিভাবে স্বনির্ধারণী করা হবে তার নির্দেশিকা বড্ড প্রয়োজন। এ দেশে কিছু কিছু পঞ্চম জেনারেশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশকিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের মান মোটেই উন্নত নয় বরং অর্থকড়ি উপার্জন করা ও বেনিয়াবৃত্তি করাই একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ও তথাকথিত সুশীল সমাজের সদস্য-সদস্যাদের মূলমন্ত্র। একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি- যার মালিকরা বর্তমান সরকারের চরম বিরোধী। তারা টাঙ্গাইলে তাদের মূল ক্যাম্পাস চালানোর পারমিশন গ্রহণ করেছে। অথচ দেখা যাচ্ছে টাঙ্গাইল তাদের ক্যাম্পাসের অস্তিত্ব মূলত নেই আর কূটনৈতিকপাড়া ও বনানীতে তারা দু’জায়গায় অবৈধ এমবিএ দিচ্ছে। আসলে এটাকেই বলে ক্ষমতার জোর। টাকা মেরে দেয়ার বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন ও টিআইবিকে জানানো হলো। দেখা গেল ওই প্রতিষ্ঠানটির একজন আবার টিআইবির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। জানা গেছে, কূটনৈতিকপাড়ায় ভাড়া বাড়ির ক্যাম্পাসটি রাজউকের পারমিশন ছাড়াই নয়-ছয় করে সমস্ত নক্সা পরিবর্তন করলেও রাজউক নীরব। উচ্চশিক্ষার মূল ধারণা হচ্ছে কর্ম-উপযোগী শিক্ষা। কিন্তু সরকারের ইচ্ছাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একশ্রেণীর কেবল ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেনিয়াবৃত্তির জন্য যুগোপযোগী শিক্ষা কাঠামো তৈরি করছে না। বরং দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণীর লেজুড়বৃত্তি তৈরি হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের একটি শ্রেণী মুক্তচিন্তার বদলে সাম্প্রদায়িক চেতনা সুষ্ঠু হচ্ছে। এদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে পরিচালনা পর্ষদের এক শ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ অন্যায়কারীরা দেশ ও জাতির শত্রু। গুমোট ঘরে অধিকাংশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর যাই হোক উচ্চশিক্ষা হয় না। বরং তৈরি হচ্ছে সমাজ বিবর্জিত, আত্মনির্ভর একশ্রেণীর যুব সমাজ যারা জানে না কিভাবে সত্য ও ন্যায়কে ধৈর্যের সঙ্গে তুলে ধরতে হয়। বরং তারা ব্যবহৃত হয় বিদেশে বসে থাকা যুবরাজের নক্সা হিসেবে। আসলে মনস্তাত্ত্বিক নিয়োগের কথা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকলেও কিন্তু মোটেই অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তাতে সাড়া দেয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কিউএস র‌্যাঙ্কিং অনুসারে ৭০০ এবং বুয়েটের অবস্থান হচ্ছে ১২০০। অথচ চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগরের নাম নেই। আশা করব কিউএস র‌্যাঙ্কিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পাঠিয়ে চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যাতে নাম অন্তর্ভুক্ত করে দেশের শিক্ষার মান সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যায় সে জন্য পদক্ষেপ নেবেন। বস্তুত যার যার দায়িত্ব সে যদি সঠিকভাবে পালন করত তবে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, অধিকাশ ক্ষেত্রেই ‘যে যায় লঙ্কায়, সেই রাবণ হয়।’ হেকাপের আওতায় বিশেষত আইকিউসি যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ করেছে, সেখানে স্বনির্ধারণী পদ্ধতির মাধ্যমে অবস্থান চিহ্নিত করার প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। এটির ফলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গুণগতমানের তেমন পরিবর্তন না হলেও কতটুকু স্বঅবস্থানে রয়েছে তা ধারণা করা গেছে। এখন যেগুলো ভাল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সেগুলো দ্রুত আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস নেবে। দেখা যায়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন স্যার, প্রফেসর ড. একেএম এনামুল হক স্যার. প্রফেসর ড. সেলিম রশীদের মতো প্রথিতযশা শিক্ষকম-লী রয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘ-মেয়াদী শিক্ষায় চর্চা একটি নিয়ম নিষ্ঠা ব্যাপার। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক যারা মাত্র ঢুকেছে ক্ষমতার লোভে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে ওই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারোটা বাজালেও তার চেয়ে বেশি বাজায় ছাত্র-ছাত্রী যারা শিক্ষাগ্রহীতাদের। এদিকে এদের আবার না গবেষণা কিংবা প্রতিষ্ঠানে থাকার কোন কমিটমেন্টও থাকে না। বরং দলবেঁধে মিথ্যা লাগায়-আর কনসপ্রেসি করে উচ্চশিক্ষাকে বারোটা বাজায়। এ সমস্ত ষড়যন্ত্রকারী ও উচ্চাভিলাষীদের জন্য নিয়ম করা উচিত অন্তত পিএইচডি ডিগ্রী না থাকলে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ না দেয়া। যে সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণী কক্ষ নেই তাদের উচ্চশিক্ষা দেয়ার ক্ষমতা হরণ করা উচিত। আসলে ক্ষমতার দর্পে অনেক বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদর্শিকভাবে দেশ বিরোধী মনোভাবসম্পন্ন লোকবল তৈরি করছে। আবার আল জাজিরার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারাও বিদ্যমান এবং বেঁচে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা ‘ছেলের হাতে মোয়া নয়’Ñ পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতেও দেখেছি প-িত না হলে কোন প্রোগ্রাম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় না। আর বাংলাদেশে বাসার কাজের লোকের মতো ধরে বেঁধে শিক্ষক হয়েই সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। অবশ্য আমাদের প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একদল আছেন যারা প্রায়শই মিথ্যার বেসাতি করেন- সত্যকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা বলে চাপিয়ে দেন। আর ওই শিক্ষকরাই বহাল তবিয়তে বিদ্যমান থাকেন। তাদের শিকার হন ছাত্রছাত্রীরা। অনেকেই গবেষণার ধার ধারেন না, ঠিকমতো ক্লাস করেন না কেবল অন্যায় করে পার পেয়ে যান। হেকাপের প্রকল্প শেষ হলে হেকাপ-২ শুরু হবে। এই হেকাপ-২ এর আওতায় কি ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে সে সমস্ত বিষয়ে জনগণকে জানানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে জনগণকে জানানোর উদ্যোদ নেয়া দরকার। আসলে সরকারের সদিচ্ছা যদি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায় সে জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাই সর্বাগ্রে। গত সাড়ে নয় বছরের অধিককালে দেশে কি উন্নয়ন হয়েছে তার ওপর তথ্যচিত্র তৈরি করে বিভিন্ন টিভি-রেডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা উচিত। এদিকে কান কথা শুনে মিথ্যা কথা শুনে যারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাতে অদক্ষতার পরিচয় দেয় এবং মুখে বড় বড় কথা বলে অথচ লেকচারার আর সহকারী অধ্যাপক দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসাধন করে, দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানায়- তারা আর যাই হোক বর্তমান সরকারের বন্ধু হতে পারে না। নেতিবাচক মনোবৃত্তি ও মান্ধাতার আমলের হয়ে যারা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভাষক আর প্রফেসরকে একই মানদ-ে মাপে তা হীন কাজ। একজন প্রফেসর মর্যাদা কখনও প্রভাষকের সমকক্ষ হতে পারে না। তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্তরই যতই ডক্টরেট ডিগ্রী থাকুক কখনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারেন না। এনজিও স্টাইলে চালাতে গিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে প্রবেশন পিরিয়ড শেষে কন্ট্রাকচুয়াল সিস্টেম না থাকে সেটি রোধ করা প্রয়োজন- এটি মানব অমর্যাদার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ক্ষেত্রে যেখানে উন্নয়নকে সর্বাধিকার দিয়ে থাকেন, সেখানে শিক্ষকদের ওপর ছড়ি ঘোরানোর জন্য যারা স্বাভাবিক চাকরির বয়সেও কন্ট্রাকচুয়াল নিয়োগ দেয়, তারা আর যাই হোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের এনজিও কর্মী ছাগা অন্য কিছু মনে করে না। এরা যে সমস্ত বুদ্ধি সরকারকে দেবে তা হবে প্লেটোর রাষ্ট্রযন্ত্রের মতো। অথবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতার মতো। এদের থেকে সরকারকে দূরে থাকা দরকার নচেৎ ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। আসলে কাজ করতে হলে মোটিভেট করতে হবে চাবুক মেরে কাজ আদায় করা যায় না। ইতোমধ্যে সরকার এ্যাক্রেভেন্সিয়াল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছেন- এটি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু এখন পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্তরা ন্যাশনাল এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফেমওয়ার্ক তৈরি করতে পারেননি। এই ব্যর্থতা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকলে যারা এই ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা জবাব দিতে বাধ্য হতেন। থাইল্যান্ডের মতো দেশে, ভারতে মালয়েশিয়ার মতো দেশেও ন্যাশনাল এডুকেশনাল কোয়ালিফেকশন ফ্রেমওয়ার্ক বহু আগে হয়েছে। আর আমরা কেবলই রশি ধরে মারি টানাটানি। ডাক্তাররা অন্য দেশে যেভাবে সমতা পেয়েছে সেভাবে পাবে। এ ব্যাপারে ভিন্নতার কিছু সুযোগ নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বনির্ধারণী পদ্ধতি যথাযথভাবে হয়নি বলে সরকারী সংস্থা কর্তৃক মন্তব্য করা হয়েছিল। আসলে একটি প্রকল্প তাড়াহুড়া করে শেষ না করে সময় লাগিয়ে করলে কোন সমস্যা হতো না। অন্তত ২০২১ পর্যন্ত হেকাপ-১ এর কার্যক্রম বর্ধিত করা যেত। এখন হেকাপ-২ এর কার্যক্রম শুরুর আগে সরকার প্রধানের সদিচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কার্যক্রম যাতে করে সে জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। কেননা শেখ হাসিনার শিক্ষা দর্শনের মূল উপজীব্য হচ্ছে ‘গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি। দুর্ভাগ্য হলেও এটা সত্য যে, লর্ড এ্যাকটেনের সেই অমৃত বাণী ‘চড়বিৎ পড়ৎৎঁঢ়ঃং ধ সধহ, ধনংড়ষঁঃব ঢ়ড়বিৎ পড়ৎৎঁঢ়ঃং ধনংড়ষঁঃবষু’. যে কোন নতুন শিক্ষা পাঠ্যক্রম চালু করলে সেটা বাস্তবায়ন করতে লাগে ন্যূনতম পক্ষে তিন বছর। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়- যিনি কষ্ট করে পাঠ্যক্রম শুরু করেন তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। আমাদের দেশে যখন সফটওয়্যার তৈরির জোয়ার এসেছিল, তখন দেখা গেলÑ একজন হয়ত কোন কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরি করল। তারপর তাকে বিদায় করে দিয়ে সদ্য পাস করা আরেকজনকে আনা হলো। অথচ দেখা গেল তার সে বিষয় বিশেষত সোর্স কোড সম্পর্কে জ্ঞান নেই। ফলে আবার নতুন করে শুরু করতে যেতে সফটওয়্যারের ব্যবসা গুলিয়ে ফেলেছি। যারা শিক্ষা নিয়ে কথা বলেন, তাদের নিজেদের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে। শিক্ষা কখনও আয় বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প হতে পারে না। শিক্ষার মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিশালিত মানুষ তৈরি করা। আজ যখন দেশে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে তখন শিক্ষা ও শিক্ষক এবং তাদের বহিঃস্থ স্টেক হোল্ডারদের ঠিকমতো শিক্ষার বিকাশ সাধনে কাজ করতে হবে। শিক্ষকের সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্লেমি গেম বন্ধ করে শিক্ষার সঙ্গে শিল্প-কৃষির একটি যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে। সাধারণ শিক্ষা ছাড়াও কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা নেই বললেই চলে। বিশ্বে যেখানে ৪৩% সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১০%। উদ্যোক্তা তৈরির নাম করে, স্কিল এনহেন্স কমেন্টের নামে বহু টাকার বিজ্ঞপ্তি দেখছি। অথচ প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে মাস্টার্স ইন এন্টারপ্রাইজ ইকোনমিক্স প্রোগ্রাম বহু কষ্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু করা হয়েছে। বিদেশে প্রশংসনীয় হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এ প্রোগ্রামে লোক দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। এখানে লাগে ৭২,৮৩০ টাকা আর এআইটিতে বা অন্যত্র লাগে ২৯ থেকে ৫০ লাখ টাকা। Capacity Build up-এর জন্য রাতদিন খাটলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এবং কিছু দেশী বিশ্ববিদ্যালয় চায় বিদেশী ডিগ্রী। এ পদ্ধতি বদলাতে হবে- গবর্নরকে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিক্স উদ্যোক্তা বিশেষজ্ঞ Pipulbd @ ganail.com
×