ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্দান্ত জয়ের নায়ক তপু বর্মণ ও সুফিল, অনেকদিন পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দশর্কের ঢেউ, বাংলাদেশ ২-০ ভুটান

জয় দিয়ে সাফ মিশন শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জয় দিয়ে সাফ মিশন শুরু বাংলাদেশের

জাহিদুল আলম জয় ॥ দুই বছর আগে ভুটানের কাছে ১-৩ গোলে হেরে বাংলাদেশের ফুটবলের সূর্যাস্ত হয়েছিল। এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে ওই হারের পর দেশের ফুটবল চলে যায় নির্বাসনে। মঙ্গলবার রাতে সেই ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়েই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে উড়ন্ত সূচনা করেছে স্বাগিতক বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মধুর প্রতিশোধের জয়ে লাল-সবুজদের হয়ে গোল করেন ডিফেন্ডার তপু বর্মণ ও ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল। দারুণ এই জয়ে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে খেলার পথ অনেকটাই সুগম করেছে কোচ জেমি ডে’র দল। এটি আড়াই বছরেরও বেশি সময় পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম জয় লাল-সবুজের দেশের। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি যশোরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কাকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরে বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলের শুধু অবনতিই হয়েছে। তবে কিছুদিন আগে এশিয়ান গেমস ফুটবলে সাফল্যের পর কক্ষপথে ফেরার আভাস মিলছে। সাফল্য পেলে যে দর্শক মাঠে আসে সে প্রমাণ মিলেছে ভুটানের বিরুদ্ধে ম্যাচে। প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শক মাঠে খেলা উপভোগ করেন। দীর্ঘদিন পর দর্শকের উপচেপড়া ভিড়ে যেন প্রাণ ফিরে আসে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। মাঠে আসা দর্শকদের বিমুখ করেননি তপু, জামাল, সাদরা। জয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই ঘরে ফিরতে পেরেছেন দর্শকরা। ম্যাচের শুরু থেকেই ভুটানের দুর্গে আগ্রাসী হয়ে খেলতে থাকে স্বাগিতক বাংলাদেশ। প্রথম আক্রমণেই সাফল্য পেয়ে যায় জেমি ডে’র দল। ডানপ্রান্ত থেকে সংঘবদ্ধ আক্রমণে কর্নার কিক পায় লাল-সবুজের দেশ। লেফটব্যাক ওয়ালী ফয়সাল যখন কর্নার শট নেন তখন ডি বক্সে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিনকে ফেলে দেন অতিথি ফরোয়ার্ড শেরিং দর্জি। সঙ্গে সঙ্গে থাই রেফারি শিভাকরণ পেনাল্টির বাঁশি বাজান ম্যাচের বয়স তখন মাত্র দুই মিনিট। পরের মিনিটে ডিফেন্ডার তপু বর্মণ ডানদিকে দিয়ে দারুণ শটে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন (১-০)। সপ্তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ পায় ২০০৩ আসরের চ্যাম্পিয়নরা। পাল্টা আক্রমণে মাঝমাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে ভুটানের অর্ধে ঢুকে পড়েন ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল। কিন্তু তার শট ভুটানের গোলরক্ষক অসামান্য দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন। শুরুতেই গোল হজম করে কিছুটা ভড়কে যাওয়া ভুটানীরা ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরতে থাকে। গোল পরিশোধে তারাও আক্রমণ শানাতে থাকে। ফলে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ১৮ মিনিটে ম্যাচে ফেরার প্রথম সুযোগ পায় ভুটান। মাঝমাঠ থেকে সংঘবদ্ধ আক্রমণে বল পেয়ে ডি বক্স থেকে শট নেন নিমা ওয়াংডি। কিন্তু তার শট সরাসরি চলে যায় বাংলাদেশ গোলরক্ষক শহিদুল আলমের হাতে। ২৫ মিনিটে ডিফেন্ডার টুটুল হাসান বাদশার ভুলে প্রায় গোল হজম করতে বসেছিল স্বাগতিকরা। টুটুলের ভুল পাসে বল পান ভুটানের চেঞ্চো গেলসেন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে সাইফ স্পোর্টিংয়ের হয়ে খেলে যাওয়া এই ফরোয়ার্ডের শট অল্পের জন্য বারপোস্টের ওপর দিয়ে বাইরে যায়। ২৭ মিনিটে আবারও সমতা ফেরানোর সুযোগ পান চেঞ্চো। ডি বক্সে জটলার মধ্য থেকে তার নেয়া দুর্বল শট আশ্রয় নেয় স্বাগতিক গোলরক্ষকের গ্লাভসে। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট হয় বাংলাদেশের। ডি বক্সের ভেতর থেকে ফরোয়ার্ড বিপলু আহমেদের অসাধারণ শট ভুটানী গোলরক্ষক পাঞ্চ করে বিপদমুক্ত করেন। পরের মিনিটে আবারও গোলবঞ্চিত হয় জেমি ডে’র শিষ্যরা। কর্নার থেকে আসা বলে ডিফেন্ডার আতিকুর রহমান ফাহাদের শট দ্বিতীয় পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে কর্নার থেকে গোল করার ভাল সুযোগ আসে ভুটানের। কিন্তু বলে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে গোলবঞ্চিত থাকতে হয় ট্রেভর মরগানের দলকে। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতির পর শুরু থেকেই ভুটানের রক্ষণভাগে মুহুর্মুহু আক্রমণ শানাতে থাকেন জামাল-সুফিলরা। ফলও এসে যায় চটজলদি। এ অর্ধের দ্বিতীয় মিনিটেই (৪৭ মিনিট) আরেকটি দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। ডানপ্রান্ত দিয়ে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে অতিথিদের ডি বক্সের মাথা থেকে ডানপায়ের অসাধারণ ভলিতে জাল কাঁপান ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল (২-০)। পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পরও লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের আক্রমণে ভাটা পড়েনি। নিজেদের অধীনে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলতে থাকেন জেমি ডে’র শিষ্যরা। ফলস্বরূপ আরও কয়েকটি গোলের সুযোগও আসে। কিন্তু সেগুলো কাজে না লাগায় দুই গোলের জয়ের তৃপ্তি নিয়েই মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশের ফুটবলাররা।
×