ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বোমা মিজানকে ফেরত দিতে ভারতকে অনুরোধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বোমা মিজানকে ফেরত দিতে ভারতকে অনুরোধ

শংকর কুমার দে ॥ ভারতে গ্রেফতার হওয়া জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) নেতা দুর্ধর্ষ জঙ্গী জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী এই জঙ্গীকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি কোন কারণে তাকে ফিরিয়ে আনতে বিলম্ব হয় তবে ভারতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। ভারতে গিয়ে এই দুর্ধর্ষ জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ সরকার। ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জেএমবির যে তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল তাদেরই একজন বোমা মিজান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে জেএমবি নেতা জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি তাকে দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তবে ভারতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের ভ্যানে হামলা চালিয়ে দুই জঙ্গী মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ছিল। এর মধ্যে হাফেজ মাহমুদকে ওইদিন দুপুরেই টাঙ্গাইলে স্থানীয় জনতার সহায়তায় আটক করে পুলিশ। পরে গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনি। সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি এখনও পলাতক। অপরদিকে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়ের একটি দোতলা বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দুই জঙ্গী নিহত এবং একজন আহত হয়। এই ঘটনার পর ভারতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ জানতে পারে, খাগড়াগড়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণের অন্যতম হোতা বোমা মিজান। সে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান নিয়ে জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পরে বোমা মিজানকে ধরতে ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষণা করে ভারত সরকার। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের কাছেই মোস্ট ওয়ান্টেড বোমা মিজান গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে জেএমবির নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা করছে দুই দেশেরই গোয়েন্দারা। গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বেঙ্গালুরুতে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) হাতে গ্রেফতার হয় বাংলাদেশে যাবজ্জীবন সাজার আসামি মিজান (৩৮)। বিহারের বুদ্ধ গয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় তাকে খুঁজছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ বোমা মিজানকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছে, যা ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সে দেশের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএয়ের কাছেও পৌঁছেছে বাংলাদেশের অনুরোধ জানানোর বিষয়টি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতে যেহেতু বোমা মিজানের বিরুদ্ধে মামলা আছে সে কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সময় নিচ্ছে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা। এ কারণে নিতান্তই প্রয়োজন হলে ভারতে বোমা মিজানকে জেরা করার অনুমতি পাবেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা, এমন আশ্বাস দিয়েছে ভারত সরকার। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ীই জেএমবির জঙ্গী বোমা মিজানকে পেতে চায় বাংলাদেশ সরকার। তবে বোমা মিজানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার পুরো প্রক্রিয়াটি সরকারীভাবে শুরু হতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যাওয়ার কারণে ভারতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। গত ৬ আগস্ট বেঙ্গালুরুতে গ্রেফতার হওয়ার পরে পাটনায় এনআইএ হেফাজতে রয়েছে বোমা মিজান। বাংলাদেশে ১৮টি বিস্ফোরণ ও নাশকতার ঘটনায় অভিযুক্ত এই দুর্ধর্ষ জঙ্গী। তার নামে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিসও জারি করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দাদের মতে, বোমা মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেএমবির নতুন নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ খোঁজ পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৯ সালের ১৪ মে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা থেকে বোমা মিজানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ময়মনসিংহের ত্রিশালের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়ার পর মিজানকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে ভারত থেকে ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার আসামি নূর হোসেনকে ফেরত আনা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘মিজানকে সময়মতো দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। আমরা যাকে চাচ্ছি কিংবা তারা যাকে চাচ্ছে, তা কিন্তু আদান-প্রদান হচ্ছে। আমরা সময়মতো তাকেও নিয়ে আসব।’ ভারতে বোমা মিজান গ্রেফতারের পর গণমাধ্যমের কাছে এই কথা বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
×