ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘কালো দিবস’ পালন

ঢাবির মানবতাবাদী উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় জয়ী হয়েছে ॥ উপাচার্য

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঢাবির মানবতাবাদী উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সব সময় জয়ী হয়েছে ॥ উপাচার্য

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ‘কালো দিবস’ পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। সোমবার দিবসের কর্মসূচীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকরা বলেছেন, স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা অগণতান্ত্রিক যে কোন কিছুর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাহসী কথা বলার ইতিহাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, অফিসার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর, তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি, ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও নির্যাতিত একজন ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পক্ষ থেকে সাদ্দাম হোসেন বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোঃ এনামউজ্জামান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, ইতিহাসের একটি চলমানতা আছে এবং সেই লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মকে সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিতে এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৭ সালে ২০-২৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তথা আবাসিক ছাত্রদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে এবং চারজন শিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। কোন প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত কোনভাবেই আমাদের কাম্য নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিভঙ্গি মানবতাবাদী ও উদার নৈতিক যা সবসময়ই জয়ী হয়েছে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নিজ নিজ অবস্থানে কাজ করব এটিই হোক আজকের দিনের প্রত্যয়। এর আগে সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর নির্যাতনের বিচারের দাবিতে’ এক মানববন্ধন পালন করা হয়। মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। এছাড়া, কালো দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, সে সময় তথাকথিত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের সীমা অতিক্রম করে নির্যাতন চালায়। রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করা হয়। ঢাবির চার শিক্ষকের বিচার হয়, দণ্ড হয়। তারা ক্ষমা চাননি। ঢাবি কোন কাপুরুষ তৈরি করে নাই। এটি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য। অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা কোন অসাংবিধানিক সরকার চাই না, আমরা চাই দেশে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিপূর্ণভাবে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। সাংবিধানিকভাবে দেশ এগিয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একটি গণতান্ত্রিক শাসন চাই। এ সময় মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন, সহকারী প্রক্টর লুৎফুল কবির, সোহেল রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী তথা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ওপর সংঘটিত অমানবিক, বেদনার্ত ও নিন্দনীয় ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর ২৩ আগস্ট এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও অফিসসমূহ ঈদ-উল-আজহা’র বন্ধ থাকায় আজ ৩ সেপ্টেম্বর কালো দিবসের কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।
×