ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তীরে আছড়ে পড়ছে ঢেউ দূরে শুভ্র কাশবন-মনোমুগ্ধকর দৃশ্য

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তীরে আছড়ে পড়ছে ঢেউ দূরে শুভ্র কাশবন-মনোমুগ্ধকর দৃশ্য

বাবু ইসলাম ॥ এক সময় ছিল মরা ঘাট। নতুন প্রজন্মের কাছে এখন নিসর্গ প্রেমনগরী। বর্ণিল সাজে প্রাণের স্পন্দনে জেগে উঠেছে যমুনার পাড়ে। বিশাল জলরাশি, দূরে শ্বেতশুভ্র কাশবন, তীরে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের লাল আভা পড়ছে পানিতে। এ এক অপরূপ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সিমেন্ট- কংক্রিটে তৈরি ব্লক (সিসি ব্লক) দিয়ে মোড়ানো নদীর পাড়। গোলাকার শান বাঁধা বেঞ্চ, বিশাল আকৃতির নানা রঙের ছাতা, তার নিচে বসে প্রেমিক-প্রেমিকার মন দেয়া-নেয়া। এ যেন প্রতিদিনের দৃশ্য। কখনও ঢেউ এর সঙ্গে সাঁতার কাটছে দূরন্ত ছেলেরা। নানা বয়সী নারী-পুরুষ শিশুও রয়েছে যমুনার পাড়ে। প্রেমিক যুগল যমুনায় নৌকা বিলাসে আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত। যমুনারপাড় যেন নিসর্গ এক প্রেম নগরী। হাতছানি দিয়ে ডাকে প্রতিদিন, প্রতি বিকেলে। ঈদ, পূজা, পার্বণ ছাড়াও উৎসবের বিশেষ বিশেষ দিনে মানুষের ঢল নামে। মুক্ত মনে বর্ণিল সাজে প্রাণের স্পন্দনে জেগে উঠেছে কাজীপুরের মরা সেই মেঘাই ঘাট। এখন শরৎকাল, আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা। কখনও কালো মেঘে আকাশ ভারি হয়ে বৃষ্টি ঝরছে, কখনও রোদ, সঙ্গে যমুনার ভরা যৌবন। সবই প্রকৃতির খেলা। নদীর বুক চিড়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে নানা গন্তব্যে ছুটে চলেছে নৌকা। দূরের শ্বেত শুভ্র কাশবনে পাখির কিচির মিচির শব্দ পাখিপ্রেমিককে কাছে টেনে নেয়। অন্যেরা দূর থেকেই আনন্দ উপভোগ করে। নানা স্থানে ছড়ানো ছিটানো সিমেন্ট-কংক্রিটের ব্লক। নদীপাড়ে বাঁধা রয়েছে নানা রঙের ছোট বড় অসংখ্য নৌকা। নৌকার মাঝিরা কেউ যাচ্ছে যাত্রী নিয়ে, কোন কোন নৌকায় মালামাল বহন করা হচ্ছে। দূর থেকে যাত্রীবাহী নৌকা এসে ভিড়ছে ঘাটে। ঈদ, পূজা পার্বণের ছুটিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে মেঘাই ঘাট যেন নতুন করে যৌবন ফিরে পায়। মানুষের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়ে ওঠে। শুধু কাজীপুরের মেঘাই ঘাটই নয়, যমুনা পাড়ের সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট, চায়না বাঁধ নামে পরিচিত যমুনার ক্রস বাঁধেও অসংখ্য নারী পুরুষ এবং শিশুর কোলাহলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হাজারো বিনোদনপ্রিয় মানুষের পদভারে মেঘাই ঘাট মুখরিত। যমুনার বালুচরে বৃত্ত তৈরি করে গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠি খেলার আয়োজনও করা হয়। বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে শিশু নারী পুরুষ। নির্মল বায়ুর ছোঁয়া পেতে বৃদ্ধের আনাগোনা বাড়ে। বলা হয়ে থাকে যমুনা নদী সিরাজগঞ্জের দুঃখ। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে যমুনায় ভাঙ্গন দেখা যায়। মানুষ জমি জিরাত হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সেই যমুনাকে শাসন করা হচ্ছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা হয়েছে। প্রকৌশল বিদ্যার নানা অনুষঙ্গ ব্যবহার করে যমুনাপাড়কে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। এসব কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের সন্তান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। মেঘাই ঘাটে পড়ন্ত বিকেলে কথা হলো কাজীপুরের বাঐখোলা গ্রামের যুবক মামুনের সঙ্গে। মামুন ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি প্রতিবছরই ঈদ উদ্যাপন করেন গ্রামের বাড়িতে। অবসরে বেড়াতে আসেন যমুনাপাড়ের মেঘাই ঘাটে। এবারও এসেছেন, কিন্তু তিনি দেখছেন যমুনারপাড় সেজেছে ভিন্ন আঙ্গিকে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে সিমেন্ট- কংক্রিটে তৈরি ব্লক (সিসি ব্লক) দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। গোলাকার শান বাঁধা বেঞ্চে ছাতার নিচে বসে আছে অসংখ্য নারী-পুরুষ, শিশু। দূর-দূরান্ত থেকে এসব মানুষ এসে আনন্দ উপভোগ করছেন। কেউ দেখছে লাঠি খেলা, কেউ নৌকায় বেড়াচ্ছে। আবার ঘাটে বাঁধা পন্টুনের ওপর বসে অনেকেই আড্ডা দিচ্ছেন। এমন বিনোদন কাজীপুরে এর আগে ছিল না বললেন মেঘাই গ্রামের কলেজপড়ুয়া সাদিয়া। সাদিয়া জেনেছেন কাজীপুরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য মেঘাই ঘাটে একটি পর্যটন রেস্টহাউস নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কাজীপুরে পর্যটন কেন্দ্রসহ সকল উন্নয়নের পুরোধা হচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তবে বিনোদন কেন্দ্রে বেড়াতে আসা মানুষের দাবি বঙ্গবন্ধুর আজীবনের রাজনৈতিক সহচর জাতীয় নেতা শহীদ এম মনসুর আলীর পুণ্যভূমি কাজীপুরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।
×