ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘নির্বাচন নাও হতে পারে’ এ তত্ত্ব হাজির করলেন ড. কামাল

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

   ‘নির্বাচন নাও হতে পারে’ এ তত্ত্ব হাজির করলেন  ড. কামাল

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সদ্যগঠিত রাজনৈতিক মোর্চা ‘যুক্তফ্রন্ট’ এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বরাবরের মতো এবারও কয়েকজন সিনিয়র রাজনীতিক এক মঞ্চে উঠে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। তারা কখনও বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বে পরিচালিত বিশ দলীয় জোটে যোগদানের আভাস- ইঙ্গিত দিচ্ছেন, আবার কখনও আলাদা মোর্চায় থেকে নির্বাচন করার কথা ঘোষণা দিচ্ছেন। মাত্র অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে শনিবার ফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে নির্বাচন নাও হতে পারে। দেশের পরিস্থিতি কেমন, যাতে নির্বাচন নিয়ে সংশয় থাকতে পারে তা অবশ্য তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেননি। একই দিনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোহাম্মদ নাসিম অভিযোগ করেছেন, ‘জুডিসিয়াল ক্যুতে ব্যর্থ হয়ে কিছু নেতা এখন যুক্তফ্রন্টের নামে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন’। সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা যুক্তফ্রন্ট। এর সঙ্গে রয়েছেন আ.স.ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। ড. কামাল হোসেনের গনফোরাম ইতোমধ্যে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মসূচী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, কর্নেল (অব) অলির লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে থাকার কথা রয়েছে। সিপিবি-বাসদ-গনসংহতী আন্দোলনের নেতৃতে গঠিত বাম গনতান্ত্রিক জোটকেও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে প্লাটফর্ম গড়ার আমন্ত্রণ জানানো হবে। উতোপূর্বে অনুষ্ঠিত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের আগেও এসব নেতা ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গঠন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এরা নির্বাচন বর্জনের পথেই তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ২০০৬ সালে আলোচিত ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় এরা প্রায় সবাই সক্রিয় ছিলেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমনে রেখে এসব দল আবারও ঐক্যের সুর তুলেছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, একজন বিশিষ্ট আইনজীবী রয়েছেন যিনি একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে ব্যবহার করে জুডিশিয়াল ক্যু করে পাকিস্তানের মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার এবং ১৪ দলের নেতৃৃবৃন্দের সতর্কতার কারণে ওই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেছে। কীভাবে এই নির্বাচনকে প্রতিহত করা যায় তা নিয়ে আবার তারা নতুন চক্রান্ত শুরু করেছেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত ‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার : প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় ড. কামাল বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে কি না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর নির্বাচন হলে যেন ভোট চুরি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। যারা নির্বাচনকে অন্যদিকে প্রভাবিত করে সুশাসনের পরিবর্তে কুশাসন সৃষ্টি করতে চায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা দুই নম্বর বা চার নম্বরি করে ক্ষমতায় যেতে চায়, টিকে থাকতে চায় তারা আাস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। দেশের সব মানুষ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এমন একটা লোক দেখান যে নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। যারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে না তাদের স্থান পাবনায় হতে হবে। ছাত্র নেতাদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, তোমরা একবার সংবিধান দেখো। এই দেশের মালিক জনগণ। উত্তরসূরি হিসেবে কেউ না। বাঙালী যখন ন্যায্য দাবি নিয়ে লড়াই করে তখন তারা জয়ী হয়েছে, অপশক্তিরা পরাজিত হয়েছে। দেশে যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতো তবে জনগণ মাঠে নামত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ড. কামাল বলেন, সরকারের দাবি অনুযায়ী সুশাসনের কথা যদি ঠিক হয় তাহলে অবশ্যই সরকারকে ভোট দিবেন। দাবি ঠিক না হলে তাদের ভোট দিবেন না। জনগণ যদি ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তা হলে সরকারকে স্মরণীয় শিক্ষা দেবে। আমার বিশ্বাস জনগণ খুবই সচেতন। তারা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সব বিষয়ে সচেতন থাকবে। কড়া নজর রাখবে। জনগণের হাত থেকে কোন স্বৈরাচার রেহাই পায়নি। ড. কামাল বলেন, ‘আমরা চাই দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মৌলিক বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়তে বিতর্ক হবে না। মাঠে নামতে হবে। সমাবেশ করে আমাদের কথাগুলো জনগণকে জানাতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমাদের জয় হবে।’ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ. স.ম আবদুর রব বলেন, গোলটেবিল-সমাবেশ করে দাবি আদায় হবে না। ‘রক্ত দিতে হবে, মাঠে নামতে হবে এরপর সরকারকে হটাতে হবে। রব বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। প্রথমে হবে সরকার হটানোর, দাবি আদায়ের আন্দোলন। এরপর হবে বাংলার মাটিতে নির্বাচন। তার আগে বাংলার মাটিতে কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। জেএসডির প্রধান বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে জনগণের সরকার কায়েম করা হবে। সে সরকার হবে যুক্তফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন সরকার। ওই সরকার সবসময় জবাবদিহিতার ভেতরে থাকবে। জবাব দিতে না পারলে সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাবে। সরকারের সমালোচনা করে রব বলেন, এ সরকার রাষ্ট্রকে অকার্যকর করেছে। রাষ্ট্র এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে দুর্নীতি-অত্যাচার করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে এ অবস্থা হতো না। আমরা একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে এ সরকার। দেশে আইনের শাসন নেই। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘মান্নার বাসায় ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) গিয়েছে। আজকে হুঁশিয়ার করে দিলাম, আমাদের কোন নেতাকর্মীর বাসায় যদি পোশাকে বা সিভিলে পুলিশ পাঠানো হয় বা গায়ে হাত দেয়া হয় তাহলে ছেড়ে দেব না। আমরা অস্ত্র চালানোর লোক। আমরা এখনও অনেক নেতাকর্মী আছি। আমরা সব মরে যাইনি।’
×